বিএনপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান ইসির

দলীয় প্রধানরাও জনসভা করতে পারবেন না

দেশে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচন আয়োজনের আগে প্রার্থী ও দলের ক্ষেত্রে আচরণবিধিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে নির্বাচন কমিশন। দলীয় প্রধানরাও করতে পারবেন না জনসভা-শোভাযাত্রা। তবে পথসভা ও ঘরোয়া সভা করার অনুমোদন থাকলেও জনবহুল সড়কে তা করতে পারবেন না কোনো প্রার্থী বা তার দল। প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে সরকারি সুবিধাভোগীদের, বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের ওপর একদিকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, অন্যদিকে পথসভা ও ঘরোয়া সভা করার ক্ষেত্রেও পুলিশের অনুমতি নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এদিকে স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াও শুরু করেছেন। নির্বাচনী এলাকায় চলছে নীরব প্রচার-প্রচারণা।

ইসির উপসচিব সামসুল আলম জানান, রাজনৈতিক দল, দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আচরণবিধি অনুসরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের একটি পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। নতুন আইন-বিধি পাঠানো হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও।

আচরণবিধির বিষয়গুলো তুলে ধরে ইসির সহকারী সচিব রাজীব আহসান জানান, দল ও প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো জনসভা বা শোভাযাত্রা করা যাবে না, শুধু পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে পারবেন তারা। পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে চাইলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় জানিয়ে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। আগে স্থানীয় সরকারের নির্দলীয় ভোটে এ বিধান ছিল না। দলীয়ভাবে ভোট হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনের বিধির সঙ্গে সমন্বয় করে এ বিধি যুক্ত হয়েছে। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে জনসভা করার ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতির বিধান যোগ করা হয়েছিল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৬ পৌরসভায় ভোট হবে। তার আগে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ ডিসেম্বর। এরপর প্রতীক পেলে আনুষ্ঠানিক প্রচারের সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা। ইসিতে নিবন্ধিত অন্তত ২০টি দল ইতিমধ্যে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াও শুরু করেছেন।

পৌর নির্বাচনের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে- জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে সড়কে পথসভা করা যাবে না, বানানো যাবে না মঞ্চও। কোনো প্রার্থী প্রতিপক্ষের পথসভা ও ঘরোয়া সভায় বাধা দিতে পারবেন না। ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের আগে দল, প্রার্থী ও তাদের পক্ষে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা বা অনুদান নেওয়া যাবে না। প্রার্থী কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হয়ে থাকলে সেসব প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে অংশ নিতে পারবেন না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের প্রচারের পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় মাইকে প্রচার চালানো যাবে বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

দল মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ও দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে রাখতে পারবেন, তবে রঙিন পোস্টার ব্যবহার করতে পারবেন না। মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার কিংবা প্রার্থনা বা ‘বিশেষ ভঙ্গির’ ছবিও পোস্টারে দেওয়া চলবে না। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় পাঁচজনের বেশি সমর্থককে সঙ্গে নেওয়া যাবে না। মেয়র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ পাঁচটি নির্বাচনী ক্যাম্প, কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতি ওয়ার্ডে ক্যাম্প করতে পারবেন।
এ ছাড়া ভোটের প্রচারে সার্কিট হাউস ব্যবহার, জীবন্ত প্রতীক ব্যবহার, তোরণ নির্মাণ ও দেওয়াল লিখন, যানবাহন নিয়ে মিছিল-শোডাউন, বিলবোর্ড ব্যবহার ও উসকানিমূলক বক্তব্যের বিষয়ে রয়েছে বিধিনিষেধ। সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতে কর্তৃত্ব করা এবং এ-সংক্রান্ত সভায় প্রার্থীদের যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে, তেমনি নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় সরকারি প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উম্মোচন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা যাবে না।
পৌর মেয়র, কাউন্সিলর বা অন্য কোনো পদাধিকারী অনুমোদিত প্রকল্পের অর্থও অবমুক্ত করতে পারবেন না।

দলভিত্তিক পৌর নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর এমপিরাও প্রচারে যেতে পারছেন না। এর পরও ভোটে ‘অদৃশ্য প্রভাব’ এড়ানো যাবে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনেও একই ধরনের অভিজ্ঞতা ইসির হয়েছিল। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের দায়ে দলকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থীকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের জেল, এমনকি প্রার্থিতা বাতিলেরও ক্ষমতা রয়েছে ইসির হাতে।

বিএনপির অভিযোগ অসত্য : কারও নির্দেশে ‘তাড়াহুড়া’ করে তফসিল ঘোষণা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। মঙ্গলবার শেরেবাংলানগরে ইসি কার্যালয়ে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আমরা আগে থেকে বলে এসেছি ডিসেম্বরে ভোট করব। এখন কেউ যদি বলে আমরা তাড়াহুড়া করে তফসিল করেছি, কারও নির্দেশে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে- এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, অসত্য কথা।’
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী- ৩০ ডিসেম্বর ২৩৬ পৌরসভায় ভোট হবে। এতে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার আইন থাকলেও কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নির্দলীয় প্রতীকে। এরই মধ্যে পৌর ভোট অন্তত ১৫ দিন পেছাতে নির্বাচন কমিশনে দাবি জানিয়েছিল বিএনপি। তবে সোমবার কমিশন সভায় ওই দাবি নাকচ করে দেয় ইসি। এ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল দলটির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান ইসি একচোখা; তারা ভোটার ও জনগণের দিকে তাকায় না, শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় রয়েছে। ভোট না পেছানোয় ইসির সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনাও করেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, ‘এ অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য। আমরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে।’ কোনোভাবে তাড়াহুড়া করে তফসিল ঘোষণা করা হয়নি বলেও জানান তিনি। ভোটের তারিখ না পেছানোর ব্যাখ্যা তুলে ধরে এই নির্বাচন কমিশনার জানান, ‘সামনে বিশ্ব ইজতেমা, হালনাগাদের চ‚ড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ রয়েছে, এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে। তফসিলের পর বিধি সংশোধন হবে বেআইনি, আবার পুনরায় তফসিল দিতে হবে, যা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের জন্য যা যা করার দরকার করে যাব।’



মন্তব্য চালু নেই