দারিদ্রতার বাধা টপকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গড়লেন মেহজাবিন

এরারের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডের অধীন মনিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মেহেজাবিন রহমান। উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করে সে। জীবনযুদ্ধ শুরু হয় শিশু কাল থেকেই।

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালে পিতা মোখলেছুর রহমানকে হারায় সে। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল মেহেজাবিনের। অভাবের সংসারে অকালে স্বামীকে হারিয়ে মা হালিমা আক্তার মেয়ে মেহেজাবিন ও ছেলে সাকিবুর রহমানকে মানুষ করার জন্য দিশাহারা হয়ে পড়েন। ৫ শতকের ভিটাবাড়ী ছাড়া জমিজমা বলতে আর কিছুই নেই তাদের। একদিকে সংসার চালানো, অন্যদিকে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন তিনি।

বাসায় বাসায় টিউশনি করা, বাড়ি এসে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের কাজ, কখনওবা সেলাই মেশিনের কাজ। মায়ের দুঃখ-কষ্ট মেহেজাবিনকে আরো তাড়িত করে। দৃঢ় মনোবল নিয়ে পড়াশুনা করে সে। পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় সব বিষয়ে এ+ পেয়ে জিপিএ-৫ পায় সে। শত বাধা বিপত্তি দমাতে পারেনি তাকে। একদিকে ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ, অন্যদিকে মায়ের কষ্টের কথা চিন্তা করে প্রতিবেশীর ছেলে-মেয়েদের টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ কিছুটা পুষিয়ে নেয় মেহেজাবিন।

ভালো ফলাফলে খুশি হলেও ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে শংকায় এই অদম্য মেধাবী। গতকাল ফল প্রকাশের পর কেঁদে ফেলে মেহেজাবিন। ওর অভিব্যক্তি-আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আজ বাবা বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই, মায়ের দুঃখ কষ্ট ঘুচাতে চাই। আনন্দাশ্রু বিজড়িত কণ্ঠে মা হালিমা আক্তার বলেন, অভাব আর টানাটানির সংসারে মেয়ের জন্য কিছুই করতে পারিনি।

ভালো কাপড়, ঠিকমতো লেখাপড়ার খরচ, সময়মতো খাবার পর্যন্ত দিতে পারিনি, ভালো ফলাফলে আমি খুব খুশি। প্রতিবেশী অধ্যাপক আব্দুস সবুর বলেন, মেহেজাবিনের ইচ্ছা শক্তির কাছে হার মেনেছে দারিদ্র্য। একজন আদর্শ শিক্ষার্থীর সব গুণ ওই মেয়ের মধ্যে আছে। কলেজের অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান বলেন, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তিতা আর ইচ্ছা শক্তি দিয়ে যে সব কিছু অর্জন করা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মেহজাবিন। অর্থনৈতিক সহযোগিতা আর গাইড পড়তে পারলে সে দেশ ও জাতির জন্য গর্ব হতে পারবে।



মন্তব্য চালু নেই