দাড়িওয়ালা মঈন আলিকে ভারতীয় জঙ্গিদের হুমকি?

মঈন আলীকে ভারতীয় জঙ্গিদের হুমকি! বাংলাদেশ থেকে ভারত গিয়ে পৌঁছতে না পৌঁছতেই ইংল্যান্ড দল নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মুম্বইয়ে বুধবার পৌঁছনো অ্যালেস্টেয়ার কুক’দের দলের সঙ্গে আসা নিরাপত্তা প্রধানের একটি চাঞ্চল্যকর মন্তব্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

কুক’দের দলের সঙ্গে সফর করছেন নিরাপত্তা প্রধান রেগ ডিকাসন। তিনি মুম্বই পৌঁছে হঠাৎই মন্তব্য করেছেন, দলের দুই মুসলিম সদস্য আছেন। মঈন আলি এবং আদিল রশিদ। নিরাপত্তা প্রধানের হুঁশিয়ারি, শিবসেনার ঘাঁটি মুম্বইয়ে এই দুই ক্রিকেটারের উপস্থিতি নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। সেই কারণে মঈন এবং রশিদ দু’জনের সঙ্গেই তিনি কথা বলেছেন এবং তাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, কী করতে হবে। তার মন্তব্য জানাজানি হয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

ভারতে যাওয়া ইংল্যান্ডের এই দলে মঈন ও আদিল ছাড়াও বোলিং পরামর্শদাতা হিসেবে রয়েছেন সাকলায়েন মুস্তাক। পাকিস্তানের হয়ে ক্রিকেট খেলা অফস্পিনার অতীতে ভারত সফর করে গিয়েছেন। কিন্তু তিনিও এখন ব্রিটিশ পাসপোর্ট-হোল্ডার এবং ইংল্যান্ডেই থাকেন। সাকলায়েনের ভারতে আসা নিয়ে কোনো সমস্যা থাকতে পারে কি না জিজ্ঞেস করায় ভারতীয় বোর্ডের এক কর্তার উত্তর, ‘‘আমাদের কাছে সেরকম কোনো বার্তা এখনও নেই।’’

ভারতীয় বোর্ডের কর্তারা ডিকাসনের এমন মন্তব্য শুনে বিস্মিত। কেউ কেউ বিরক্তও। স্পর্শকাতর বিষয় বলে সরকারিভাবে কেউ প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তবে ভিতরে-ভিতরে অনেকেই ক্ষুব্ধ। এক প্রভাবশালী বোর্ড কর্তা যেমন ফোনে বললেন, ‘‘এক মাস আগে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে চিঠি এসেছিল। ওরা জানতে চেয়েছিল, ভারতে খেলতে আসা নিয়ে দলের কোনো সদস্যের ঝুঁকি থাকতে পারে কি না। আমরা তখনই নিরাপত্তা নিয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছিলাম যে, গোটা দলই ভারতে সুরক্ষিত। কাউকে নিয়েই কোনো উদ্বেগের জায়গা নেই।’’
প্রশ্ন উঠছে, ইংল্যান্ডের নিরাপত্তা প্রধানের এমন মন্তব্য কীসের ভিত্তিতে?

মঈন আলি বা আদিল রশিদকে মুম্বইয়ের মাঠে প্র্যাক্টিস করতে দেয়া হবে না, এমন কোনো বিবৃতি এখনো ভারতের উগ্র হিন্দুবাদী শিবসেনার পক্ষ থেকে কেউ দেয়নি। বোর্ড কর্তাটি বললেন, ‘‘হুমকিই নেই তাহলে কথাটা উঠছে কোথা থেকে?’’ ডিকাসন যদিও দাবি করেছেন, মঈন আলিকে নিয়ে শিবসেনার আপত্তি আছে। শিবসেনার কর্মীরা নাকি প্রতিবাদ দেখাতে বোর্ডের অফিসেও গিয়েছিল।

ইংল্যান্ডের নিরাপত্তা প্রধান আরো বলেছেন, পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার’কে এই সিরিজ থেকে আইসিসি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে শিবসেনার হুমকিতে। সেটা নিয়েও বলা হচ্ছে, আলিম দার পাকিস্তানের নাগরিক বলে সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। মঈন আলি বা আদিল রশিদ দু’জনের কেউ পাকিস্তানের নাগরিক নন। তারা ইংল্যান্ডের নাগরিক এবং সে দেশের ক্রিকেট দলের সদস্য।

‘‘দু’জনের ব্যাপারেই আগে থেকে সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছি আমরা,’’ বলছেন শীর্ষস্থানীয় বোর্ড কর্তাটি। অভিনেতা ফাওয়াদ খানের উদাহরণ টেনে তিনি আরো যোগ করছেন, ‘‘পাকিস্তানের নাগরিক বলেই ফাওয়াদ খানকে নিয়ে আপত্তি উঠেছে। আলিম দারের ক্ষেত্রেও তাই। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দলের সদস্যকে নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকলে তো সরকার আগে থেকে আমাদের অ্যালার্ট করত।’’

বাংলাদেশে সদ্যসমাপ্ত সিরিজেও ডিকাসন দলের সঙ্গে ছিলেন। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হানার পরিপ্রেক্ষিতে সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। ইংল্যান্ডের একদিনের দলের অধিনায়ক অইন মর্গ্যান বাংলাদেশ সফরে যাননি নিরাপত্তার কারণে। রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য নির্দিষ্ট করা নিরাপত্তার আয়োজন কুকদের জন্য করা হয়েছিল বাংলাদেশে। ১৪০০ থেকে ২০০০ নিরাপত্তা কর্মী প্রত্যেকদিন বন্টন করা হয়েছে ইংল্যান্ড দলের জন্য।

ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, অত বড় মাপের নিরাপত্তা দল ভারতে পাবেন না কুক’রা। কারণ, বাংলাদেশের মতো ভারতে সরাসরি কোনো হুমকি নেই। বোর্ড কর্তারা বলছেন, ‘‘ইংল্যান্ডের জন্য প্রয়োজন মতোই নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছে। সরকারি বিভাগের সঙ্গে কথা বলেই সেই আয়োজন হয়েছে। অহেতুক উদ্বেগ তৈরি করার কোনো মানে হয় না।’’

ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের নেতৃত্বে এই মুহূর্তে যতটা না অ্যালেস্টেয়ার কুক, তার চেয়েও বেশি করে রেগ ডিকাসন। তা রোডম্যাপ মেনেই বাংলাদেশ থেকে বুধবার মুম্বই এসে পৌঁছয় ইংল্যান্ড। মুম্বইয়ের ক্রিকেট ক্লাব অফ ইন্ডিয়ায় দিন দু’য়েক প্র্যাক্টিস করে কুক’দের চলে যাওয়ার কথা রাজকোটে। যেখানে সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হচ্ছে ৯ নভেম্বর। মুম্বই ও রাজকোটে থাকাকালীন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের পদক্ষেপ মেপে দিচ্ছেন ডিকাসন। যেহেতু পশ্চিমাঞ্চলে শিবসেনার প্রাধান্য অনেক বেশি। তবে উস্কানিমূলক মন্তব্যে টেনশনের আবহ তৈরি করে ভারতীয় বোর্ডের বিরাগভাজনও হয়ে পড়েছেন নিরাপত্তা প্রধান।



মন্তব্য চালু নেই