দিনমজুর থেকে ‘জঙ্গি’ তৎপরতায় নিহত নাইম

রাজধানীর কল্যাণপুরে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আবু হাকিম নাইম ছিলেন দিনমজুর। পটুয়াখালীর একটি বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানে বছর নয়েক আগে শ্রমিকের কাজ করলেও ২০০৮ সালে ওই এলাকা থেকে চলে আসেন তিনি।

নাইমের ছবি দেখে চিনতে পেরেছেন কুয়াকাটার স্থানীয়রা। কল্যাণপুর অভিযানে নিহতদের নাম, ছবি ও ঠিকানা প্রকাশের পর স্থানীয় থানা পুলিশ নাইমের খোঁজে ওই এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়েছে। তবে নাইমের স্বজনদের খুঁজে পায়নি পুলিশ।

পটুয়াখালীর মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম মাকসুদুর রহমান জানান, ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রকাশ করা তালিকা অনুযায়ী কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা গ্রামে যান তারা। তবে সেখানকার মানুষ আবু হাকিম নাইম নামে কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। নাইমের বাবা, মা বা অন্য কোন স্বজনকেও এলাকাবাসী চেনে না।

পটুয়াখালীর র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, নাইমের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরে। র‌্যাব-৮ পটুয়াখালী ক্যাম্প কমান্ডার রোকনুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে জানান, আবু হাকিম নাইম নামে একজন ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কুয়াকাটা সাগরনীড় আবাসিক প্রকল্পে শ্রমিক হিসেবে চাকরি করতেন। ওই সময়ে কুয়াকাটায় অবস্থান করায় এই এলাকা থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র করেন তিনি। এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, নিহত নাইমের বাবার নাম নুরুল ইসলাম, মায়ের নাম মোসা. হালিমা। শ্রমিক নাইমের বাবা ও মায়ের নামও একই।

কুয়াকাটার আবাসন প্রকল্প সাগরনীড়ের সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক আলতাফ হোসেন ডিএমপির প্রকাশিত তালিকায় নাইমের ছবি দেখে তাকে চিনতে পেরেছেন। ঢাকাটাইমসকে জানান, তার অধীনে পাঁচ থেকে ছয় বছর ওই প্রকল্পে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন নাইম।

আলতাফ হোসেন জানান, নাইমের বাড়ি কুয়াকাটা বা পটুয়াখালী জেলার কোনো এলাকার নয়। তারা জানতেন টাঙ্গাইলের কোন একটি এলাকায় নাইমের বাড়ি। কুয়াকাটা পৌরসভার কাউন্সিলর শাহআলম হাওলাদার ও কাউন্সিলর সাগর মোল্লাও ছবি দেখে নাইমকে শনাক্ত করতে পেরেছেন।

এই শ্রমিক নাইম জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়েছেন- এমন খবর জেনে বিষ্মিত হয়েছেন নাইমকে চিনতেন এমন সবাই। তারা বলছেন, ‘দিন আনি দিন খাই’ এমন একজন মানুষের পক্ষে পরিবারের ভরণপোষণ বাদ দিয়ে গোপন তৎপরতায় জড়ানো কঠিন।

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে অভিযানের পর জানা যায় সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় উচ্চবিত্ত শ্রেণির উচ্চশিক্ষিত তরুণরা জড়িয়েছে। পরে ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর জানা যায়, উচ্চশিক্ষিত ও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের পাশাপাশি এই কাজে নিম্নআয়ের পরিবারের সদস্যরাও জড়িত। ওই হামলার পর আটক শরিফুল ইসলাম ওরফে সফিউল ইসলাম দিনাজপুরের একটি নিম্নআয়ের পরিবার থেকে এসেছেন।

কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, ‘জঙ্গি’দের কথা বলার ধরণে মনে হয়েছে সবাই ধনাঢ্য পরিবারের উচ্চশিক্ষিত তরুণ। কিন্তু পরে জানা যায় অন্তত তিন জনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা একেবারেই করুণ।

আবু হাকিম নাইম ছাড়াও দিনাজপুরের আবদুল্লাহ এবং সাতক্ষীরার মতিয়ার রহমানের পরিবারের সদস্যরা দিনমজুর হিসেবেই কাজ করেন। তবে ওই অভিযানে নিহতদের মধ্যে ঢাকার তাজ-উল-হক রাশিক, সাজাদ রউফ অর্ক, আকিফুজ্জামান উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। এদের মধ্যে সাজাদ ও অর্ক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর নোয়াখালীর শিবিরকর্মী জোবায়ের হোসেনের পরিবারে আর্থিক অবস্থা খুব একটা খারাপ নয়।



মন্তব্য চালু নেই