দিনাজপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে করতোয়ার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

দিনাজপুরে উৎসব মূখর পরিবেশে উৎযাপিত হয়েছে দৈনিক করতোয়ার ৪০ বছর পদার্পন অনুষ্ঠান।
দৈনিক করতোয়ার ৪০ বছর পদার্পণ আয়োজনকে কেন্দ্র করে দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমী রোববার দিনব্যাপী ছিলো উৎসব মূখর। ফেস্টুন, বিলবোর্ড, ব্যানার, লাল-নীল পতাকা দিয়ে নতুন সাজে সাজানো হয়। একাডেমীর মিলনায়তন মঞ্চকে হাজার হাজার গোলাপ দিয়ে করতোয়ার ৪০ বছর লিখা হয়। টিসু ও শত শত বেলুন দিয়ে স্বপ্নের নীল নকশায় মঞ্চকে নীল আলোয় সাজানো হয়। মঞ্চে ৪০ পাউন্ড কেক, ২ফিট লম্বা, ৪ইঞ্চি মোটা ৪০টি মোমবাতির শোভা আকর্ষন করে তোলে দর্শকদের। মোমবাতির আলো, হাজারো গোলাপের গন্ধ, পার্টি ¯েপ্র ও শত শত ফুলঝুড়ির আলোয়ে আলোকিত হয়ে উঠে একাডেমীর মিলনায়তন। আনন্দ উৎসব ও গানের সুরের মধ্যে দিনাজপুর-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জনশীল গোপাল, জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পুলিশ সুপার মোঃ রুহুল আমিন, দৈনিক করতোয়ার সম্পাদক মোজাম্মেল হক লালু, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফরিদুল ইসলামসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ ১৮ ইঞ্চি লম্বা চাকু দিয়ে বর্ষপুতির কেক কেটে শুভ সুচনা করেন। শুরু হয় নাচে গানে দৈনিক করতোয়ার ৪০ বছর পুর্তির আয়োজনে রাজনৈতিক, সাংবাদিক, পেশাজীবি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নিয়ে এক মিলন মেলার উৎসব শুরুহয়।
দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজ্জাম্মেল হকের সভাপতিত্বে ও করতোয়া দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি শাহরিয়ার শহিদ মাহবুব হিরুর সঞ্চালনে আলোচনা সভায় দিনাজপুর-১ আসনের সাংসদ মনোরঞ্জনশীল গোপাল বলেন, দৈনিক করতোয়া স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এই পত্রিকাটিকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে এর একটি মাত্র কারণ নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের কারণে। আগামীতেও এধরনের নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম বাংলাদেশের রুপকার জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিহাস নুতন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহবান জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু জন্ম না হলে আমরা আজ বিশ্বের কাছে বাঙ্গালি হিসেবে স্বীকৃতি পেতাম না। তিনি করতোয়া পত্রিকার নিরপেক্ষতার লিখনির ভুয়সী প্রশংসা করেন।
দিনাজপুর পুলিশ সুপার মোঃ রুহুল আমীন করতোয়া পত্রিকার গঠনমূলক সমালোচনা ও পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পত্রিকায় আর্টিকেল, ফিচার ও সমস্যা সম্বলিত সংবাদ বেশি বেশি প্রকাশ করার জন্য সম্পাদকের নিকট আহ্বান জানিয়ে বলেন একটি পত্রিকা সমাজ গঠনের দর্পন। করতোয়া সেই দায়িত্বটি পালন করে আসছে ৪০ বছর ধরে।
করতোয়ার সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ১৯৭৬ সালে হাটি হাটি পা পা করে দৈনিক করতোয়া ৪০ বছরে পদার্পন করছে। আমার জীবনে বহু চড়াই-উথরাই পার করে পত্রিকাটিকে প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছি। আমি যখন বিকম পড়া অবস্থায় পত্রিকাটির সম্পাদনা করতে গিয়ে আমার পিতার প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছি। তিনি তখন বলেছিলেন তুমি পত্রিকাটি বন্ধ করে দেও। কিন্তু আমি আমার পিতার কাছ থেকে ৬ মাস সময় চেয়ে নেই। এই থেকে আর আমি পিছনে দেখিনি। পত্রিকাটি প্রসার ঘটাতে লেটার প্রেস থেকে আধুনিক প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত করেছি। বহু ত্যাগ তিকতক্ততার মধ্যে দিয়ে দৈনিক করতোয়ার পাঠক এখন প্রায় ১ লক্ষ। আমি মফস্বল শহর থেকে প্রকাশ শেষে জাতীয় পর্যায়ে প্রকাশনা শুরু করেছি। পত্রিকাটিকে রাজনৈতিক লেজুর ভিত্তিক করিনি। আমি নিরপেক্ষ থেকে সকল সমালোচনার উর্ধ্বে পত্রিকাটি প্রকাশ করে যাচ্ছি। সময় এসেছে পত্রিকাটিকে মান সম্পন্ন ও যুগোপযোগী আকারে প্রকাশনায় পরিকল্পনা নিয়েছি।
দিনাজপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম দৈনিক করতোয়ার ৪০ বছরে পদার্পনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন আগামী দিনেও করতোয়ার পথচলা হবে স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তিতে লালন করে।
দিনাজপুর সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন বলেন, উন্নয়ন সম্মৃদ্ধি পত্রিকা করতোয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন অসহায়,নির্যাতিত, নিপীরিত মানুষের এবং উন্নয়নের দরপন হল করতোয়া।
আরো বক্তব্য রাখেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান তারিকুন বেগম লাবুনী, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন আরা জ্যোস্না, উত্তর বাংলার সম্পাদক মোঃ মতিউর রহমান, বিশিষ্ট সাংবাদিক কামরুল হুদা হেলাল, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ছবি সিনহা, শহর মহিলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক খ্রিষ্টিনা লাভলী দাস, ওয়ার্কাস পার্টি নেতা রবিউল আলম খোকা, এমবিএসকে’র নির্বাহী প্রধান রাজিয়া হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু রায়হান মিয়া, কোতয়ালী ওসি একেএম খালেকুজ্জামান পিপিএম, দৈনিক করতোয়ার বার্তা সম্পাদক শংকর, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওয়াহেদুল আলম আর্টিস, সাংবাদিক হুমায়ন কবির, মুর্শেদুর রহমা মুর্শেদ, শামীম রেজা, মোফাসিরুল রাশেদ, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন লাবু, জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা রানী সরকার, জেলা জাগপার সভাপতি রকিবউদ্দীন চৌধুরী মুন্না, শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম,দিনাজপুর সরকারী কলেজের প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক, মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা অধ্যাপক কামরুজ্জামান, যুবলীগ নেতা আশরাফুজ্জামান জুয়েল, শহর মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়িকা সেহেলী আক্তার ছবি, মহিলা নেত্রী আইরিন লতিফ, শাহনাজ বেগম শিউলিসহ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আলোচনা সভার পর
দিনাজপুর হাই স্কুল ও চেহেলগাজী শিশু নিকেতনসহ বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, পাঠক ও করতোয়ার উপজেলা প্রতিনিধিদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুন, ব্যানার, ঢাক-ঢোল নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গন থেকে শহর প্রদক্ষিন করে। অনুষ্ঠানে করতোয়ার বিরল উপজেলা প্রতিনিধি এম এ কুদ্দুস, ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান, বোচাগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি সাজ্জাদুল আযম, চিরিরবন্দর উপজেলা প্রতিনিধি মোর্শেদুর রহমান মোর্শেদ, কাহারোল উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুর মবিন চৌধুরী, বিরামপুর উপাজেলা প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান, হাকিমপুর উপজেলা প্রতিনিধি আলতাফ হোসেন, বীরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি আবেদ আলী, ফুলবাড়ী উপজেলা প্রতিনিধি সাবির আলী, নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি মতিয়ার রহমান, পার্বতীপুর উপজেলা প্রতিনিধি মঞ্জুরুল আলম উপস্থিতিতে উৎসব আরো জমজমাট হয়ে উঠে। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সকাল ১১ টায় দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে হাফেজ মোঃ আলতাফ হোসেনের কোরআন তেলাওয়াত,সাংবাদিক মুকুল চ্যাটার্জির গীতা পাঠ ও খ্রীষ্টীনা লাভলি দাসের গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং সম্পাদক, আয়োজক, অতিথি, সাংবাদিক ও পাঠকদের নাচে গানে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সম্পন্ন হয়।



মন্তব্য চালু নেই