দিনাজপুরে রিশার ঘাতক ওবায়দুলের বোন-দুলাভাই আটক করেছে পুলিশ

শাহ্ আলম শাহী, স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকেঃ রাজধানী ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশার ঘাতক ওবায়দুলের বোন মোছাঃ খাদিজা বেগম (৪০) এবং দুলাভাই মোঃ খাদেমুল ইসলাম (৪৬) কে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় খাদেমুল ইসলামের মা খতেজা বেগম (৭৫) কে আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেয় হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। তবে সামান্যর জন্য পুলিশের হাতছাড়া হয়েছে ঘাতক ওবায়দুল। সোমবার দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় লাটের হাট বাজারে তাকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় রমনা থানার এসআই মোঃ মোশারফ হোসেন বীরগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় ঘাতক ওবায়দুলের নিজ বাড়ী দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মিরাটঙ্গী গ্রামে অভিযান চালায়। অভিযানের পর বাড়ীতে তালা দিয়ে পালিয়েছে পরিবারের অপর সদস্যরা।ওবায়দুলের বোন মোছাঃ খাজিদা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় আমাদের বাড়ীতে আসে ওবাায়দুল। সকালে আমাদের সাথে নাস্তা করে। বিশ্রাম নিয়ে দুপুরে গোসল করে বাড়ী হতে বেড়িয়ে যায়। তারপর আর কোন যোগাযোগ হয়নি। সে স্কুল ছাত্রীকে হত্যা করেছে এমন একটি ঘটনা ঘটিয়েছে আমাদের কারো কাছে জানায়নি।

প্রতিবেশী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তার দেখা হয়। তার সাথে তেমন কোন কথা হয়নি। তবে রবিবার বিকেল পর্যন্ত আমি তাকে দেখেছি। তখন পর্যন্ত জানি না সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ বাচ্চু মিয়া জানান, ওবায়দুলের পিতা মোঃ আব্দুস সামাদ পেশায় তিনি বিভিন্ন শস্যের পাইকার ছিলেন। প্রথম স্ত্রী বুধিরন ১ ছেলে ও ৩ মেয়ে রেখে মারা যাওয়ার পর মোছাঃ চন্দনী বেগমকে বিয়ে করেন। চন্দনী কোন জুড়ে আসে ১ ছেলে এবং ৪ মেয়ে ।

একমাত্র ছেলে ওবায়দুল যখন চকদফর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র তখন তার মা চন্দনী বেগম মারা যায়। এরপর পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় পিতা আব্দুস সামাদ পাইকার তাকে ঠাকুরগাঁও ম্যাজিক কার্ট টেইলার্সে রেখে আসেন। অভাবের সংসারের কথা শুনে শিশু ওবায়দুলকে টেইর্লাসে কাজের সুযোগ দেন টেইলার্সের মালিক গৌরাঙ্গ। এরপর তিনি আব্দুস সামাদ বিয়ে করেন আখেলিমা নামে স্বামী পরিতাক্ত্য এক মহিলাকে। আনুমানিক ৫বছর পুর্বে মারা যান আব্দুস সামাদ পাইকার।

পিতার মৃত্যুর পরও ওবায়দুল প্রায় এখানে আসতেন। প্রতিটি ঈদ সে এখানে পালন করেছেন। তাকে সর্বশেষ গত সোমবার দুপুরে লাটের হাট বাজারে দেখা গেছে। তখন পর্যন্ত বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি জানান পর আমরা হতবাক হয়েছি।

মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মজিদুল ইসলাম মাষ্টার জানান, এই ছেলে একটি মেয়েকে শুধু হত্যা করেনি। আমাদেরকে কলংকিত করেছি। আমরা এই এলাকার মানুষ লজ্জ্বিত এবং শোকাহত। আমরা এই হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। ইতিমধ্যে এলাকার মানুষ তাকে আটক করতে সকল প্রকার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।

বীরগঞ্জ থানার ওসি আবু আককাছ আহম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় রমনা থানার এসআই মোঃ মোশারফ হোসেন বীরগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় ঘাতক মোঃ ওবায়দুল খান (২৯)এর নিজ বাড়ী দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মিরাটঙ্গী গ্রামে অভিযান চালায়। সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বোন ও দুলাভাইকে আটক করা হয়।

উল্লেখ্য, কাকরাইলে গত বুধবার বখাটে যুবক ওবায়দুলের ছুরিকাঘাতে আহত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। রিশার মা বুধবারই ওবায়দুলকে আসামি করে রমনা থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-৫৪।



মন্তব্য চালু নেই