দীর্ঘ ১৯ বছর নদী সাঁতরে স্কুলে পৌঁছান শিক্ষার আলো ছড়াবেন বলে!

অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে যে কোন প্রতিকূলতাই পরাজিত হতে বাধ্য। শিক্ষার আলো তিনি ছড়াবেনই। তাই সাত সাগর তের নদী পার হওয়ার মতো ৭০০ কিলোমিটার সাঁতরে ঠিক সময় স্কুলে পৌঁছাবেন তিনি। ইংলিশ চ্যানেলের সমপরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ১৯টি বছর ধরে প্রতিদিন ঠিক সময় স্কুলে পৌঁছান, ছিলেন না একদিনের জন্যও অনুপস্থিত।

ভারতীয় ওই স্কুল শিক্ষকে নাম এ টি আব্দুল মালিক। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে কেরালার মুসলিম লোয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তিনি। বাড়ি থেকে তাঁর স্কুলে যাওয়ার রাস্তা রয়েছে দুটি।

প্রথমটিতে বাড়ি থেকে স্কুল পর্যন্ত দু’বার বাস বদল করতে হয়। সাথে দুই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটতে হয়। সবমিলিয়ে এতে সময় লাগে অন্তত তিন ঘণ্টা। আর দ্বিতীয় রাস্তাটি হচ্ছে- বাড়ি থেকে হেঁটে স্থানীয় কাদালুন্দিপুঝা নদীর তীর যেতে হয়। আর এতে সময় লাগে ১০ মিনিট। এরপর এই নদী সাঁতরে তীরে উঠে মাত্র তিন মিনিট হাঁটলেই স্কুল।

দ্বিতীয় পখে সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হয়। ফলেই এটিই বেছে নেন শিক্ষক এ টি আব্দুল মালিক। গাড়িতে যেতে হলে অনেকদিন নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছানো যায় না বলে জানান তিনি।

স্থানীয়দের কাছে এই শিক্ষক পরিচিতি পেয়েছেন জীবন্ত ঘড়ি হিসেবে। তিনি যখন প্রতিদিন পানিতে নামেন তখন ঘড়ির কাটা থাকে ঠিক ৯টায়।

যেভাবে পার হন নদী:
নদীর তীরে পৌঁছে তিনি তার পোশাক এবং অন্যান্য জিনিষপত্র প্লাষ্টিক ব্যাগে ভরিয়ে ফেলেন। চোখে পানিরোধক চশমা পরে প্লাষ্টিকের সেই ব্যাগ এক হাতে পানির ওপরে ধরে পারি দেন নদী। এরপর নদীর তীরে ওঠে কাপড় পড়ে পৌঁছান স্কুলে। সেখানে হাসিমুখে অপেক্ষায় থাকে তার শিক্ষার্থীরা। মাসিক বেতন যা পান তাতেই খুশি এই শিক্ষক। বলেন, আমার কোনো সমস্যা ছিল না, এখনো নেই।

আব্দুল মালিক আশা করছেন, পরিবেশ ও নদীরক্ষায় তার এই কাজ অনেককেই উৎসাহ দিবে। এছাড়া তিনি মাঝে মাঝেই শিক্ষার্থীদের নিয়েও সাঁতার কাটতে বের হন। এর মাধ্যমে নিজেকেও ফিট রাখা যায় বলেও জানান এই শিক্ষক।

গত ৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা তাঁকে সম্মাননা জানান। যুক্তরাজ্যের একজন মানসিক চিকিৎসক এই শিক্ষকের মহান এই ত্যাগের জন্য একটি নৌকা উপহার দেন। কিন্তু এর আগেই কেটে গেছে ১৯ বছর। নদী সাঁতরেই ইংলিশ চ্যানেলের সমপরিমাণ (৭০০ কিলোমিটার) দূরত্ব অতিক্রম করেছেন তিনি!



মন্তব্য চালু নেই