দুই ঈদে শুধু সড়কেই গেল ৪০১ প্রাণ

দেশে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর গড়ে ছয় হাজার মানুষ নিহত হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে প্রায় ৫০ হাজার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ৪২ হাজার মানুষ।

অন্যদিকে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৯০ জনের। আর সদ্য সমাপ্ত ঈদুল আজহার ছুটিতে প্রাণ গেছে ২১১ জনের। এর আগে ২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা অন্য যে কোনো বছরকে ছাড়িয়ে গেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, রাজনৈতিক হানাহানি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়েও বাংলাদেশে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার অনেক বেশি।

সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের দাবি, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না হলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই।

আইন এবং এর প্রয়োগ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ঈদের তিনদিন আগে এবং ঈদের তিনদিন পরে ট্রাক চলবে না, কিন্তু এবার কীভাবে চলল? কেন এই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলো না? একটা ঈদের মধ্যে, আনন্দের মধ্যে এত মানুষ মারা যাবে, একটা যুদ্ধেও এত মানুষ মারা যায় না।’

গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়ম মানা হচ্ছে না মন্তব্য করে বুয়েট অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, ‘বিরামহীনভাবে চালাতে মালিকের যে তাগাদা, পুলিশের যে অবহেলা সবকিছু মিলিয়েই মানুষ কিন্তু তার স্বাভাবিক যে বিহেভিয়ার সেটাই কিন্তু করছে। দুজন ড্রাইভার থাকবে, চার ঘণ্টা চালানোর পর কিছু বিরতি দিয়ে আবার দুই ঘণ্টা চালাবে। এগুলো কিন্তু বিজ্ঞান।’

সড়কেরও মাঝে মাঝে চিকিৎসা দরকার হয় মন্তব্য করে এই অধ্যাপক বলেন, ‘কখনো কনজেশন (গাড়ির চাপ) হয়, ক্রনিক কনজেশন হয়, কখনো অ্যাকসিডেন্ট হয়, ব্ল্যাক স্পট হয়, কখনো পলিউশন (দূষণ) হয়, তাহলে ট্রিটমেন্ট কে করবে? একদম বিজ্ঞান বলে দিচ্ছে এর যে ডাক্তার ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার। সে করবে। কিন্তু আমাদের এখানে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারের পোস্ট-ই নাই।’

অদক্ষ চালক এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভালো রাস্তাতে আপনি যদি গতিসীমার মধ্যে ভালো মানসিকতার ড্রাইভার দিয়ে, ট্রেইনড (প্রশিক্ষিত) ড্রাইভার দিয়ে না চালান তাহলে ভালো রাস্তায় কিন্তু আরো ভয়াবহ অ্যাকসিডেন্ট বেশি হবে।’ নিরাপদ সড়কের জন্য ডিজিটাল স্পিড এনফোর্সমেন্ট সিস্টেম চালু করার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানান তিনি।

গবেষণায় দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটে মহাসড়কেই, এসবের ৯৩ ভাগই ট্রাক, বাস ও মিনিবাসের। দুর্ঘটনা বাড়ছে লেভেল ক্রসিংয়েও। সারা দেশের প্রায় আড়াই হাজার লেভেল ক্রসিংয়ের ৮৫ ভাগই অরক্ষিত অবস্থায় থাকে।

আইনের প্রয়োগ, চালকদের প্রশিক্ষিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা না হলে সড়ক দুর্ঘটনার মতো এই জাতীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না বলে মনে করেন নিরাপদ সড়কের আন্দোলনকারীরা। প্রায় একই রকমের মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও।খবর এনটিভি’র।



মন্তব্য চালু নেই