দুই টাকার নোট পাচারের ৩ কারণ

অভিনব পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সরকারের দুই টাকার নোট পাচারের চেষ্টা করেছিল একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। তবে সে চেষ্টা প্রাথমিকভাবে ব্যর্থ করে দিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। পরীক্ষামূলক পাচার, সিকিউরিটি সুতা বের করে বড় নোট তৈরির পরিকল্পনা ও দেশের বাইরে বাংলাদেশি টাকার বাজার ধরা- এই তিন কারণে পাচার হচ্ছে দুই টাকার নোট।

শুল্ক গোয়েন্দাদের তদন্তে টাকা পাচারের এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, পাচারকারী, প্রেরক ও প্রাপকের ঠিকানাও ভুয়া কিংবা সাংকেতিক কোনো ঠিকানা। এতে অন্য কেউ এমন কৌশল বুঝতে না পারলেও ঠিকই সফলভাবে পাচার করা সম্ভব বলে তদন্তে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার চীনে পাচারের সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি পোস্টাল পার্সেলে ২৮টি প্যাকেটে ৫৬ হাজার টাকা জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। ‘হেলথ কেয়ার সার্ভিস’ বই হিসেবে পাচারের চেষ্টা করা হয়েছিল নোটগুলো। স্ক্যানিংয়ের সময় সন্দেহ হয় শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের। পরে খুলে দেখা যায়, সাদা বইয়ের আড়ালে বের হয় চকচকে দুই টাকার নোট!

অভিনব পদ্ধতিতে দুই টাকার মুদ্রাপাচারের বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, শাহজালালে দুই টাকার ২৮ হাজার পিস নোট পাচারের চেষ্টার নেপথ্যে প্রাথমিকভাবে তিনটি কারণ উঠে এসেছে।

প্রথমত. ধারণা করা হচ্ছে পরীক্ষামূলকভাবে দুই টাকার নোট পাচার করা হচ্ছে। সফল হলে পরে বড় কোনো চালান নেয়া হতে পারে।

দ্বিতীয়ত. দুই টাকার চকচকে নোটের সিকিউরিটি সুতা সংগ্রহ করে বড় নোট বানিয়ে আবার দেশে আনা হতে পারে জাল টাকা, যা বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে বড় ধরনের জালিয়াতির ছক কষতে পারে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট।

তৃতীয়ত. নেহায়েত শখের বসে বিক্রির উদ্দেশ্যে নেয়া হতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রা সংগ্রহে রাখার একটা বাজার রয়েছে দেশের বাইরে।

ড. মইনুল খান বলেন, দুই টাকার নোট পাচারকারী প্রেরক ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছেন কেন তা জানার চেষ্টা চলছে। প্রেরক মেডিকেল বই হিসেবে মিথ্যা ঘোষণা দিয়েছেন, প্রেরক স্বনামধন্য চিকিৎসক, থাকেন বিদেশে। তার নাম ব্যবহার করা হয়েছে সন্দেহ এড়াতে। কিন্তু কাজ হয়নি।

২৮ কেজি ওজনের পার্সেলে ৫৬ হাজার টাকা পাচার করে কত টাকা মুনাফা অর্জন সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রিমিনাল ইন্টেন্ট কী হতে পারে? এসব প্রশ্নের বিশ্বাসযোগ্য উত্তর খোঁজা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কাউকে ধরা সম্ভব হলে এর সঠিক উত্তরই পাওয়া যাবে। সে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফরেন পোস্ট অফিসের মুদ্রা পাচারের সংবাদে দুটি পার্সেল শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারিতে পড়ে। স্ক্যানিং মেশিনে সাদা বই দেখা যায়। কার্টনের গায়ে ‘হেলথ কেয়ার সার্ভিস’ লেখা আর প্রেরক ডা. রেদওয়ান।

কার্টনে লেখা ঠিকানা অনুযায়ী রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ডা. রেদওয়ান আল করিম ভূঁইয়া (১৪/৩, বি, উত্তর-পূর্ব যাত্রাবাড়ী, দ্বিতীয় তলা, ঢাকা-১২০৪) হংকং ও বেইজিংয়ে এটি পাঠাচ্ছিলেন। প্রথম কার্টনের ওপর হংকংয়ের বাও রুই নামের একজন ও দ্বিতীয় কার্টনে শেইফেং জিন, বেইজিং, চীন নামে আরেকজন প্রাপকের ঠিকানা লেখা রয়েছে।

কার্টন খোলার পর বই আকৃতির প্যাকেট দেখা যায়। স্ক্যানিংয়ে যাতে ধরা না পড়ে সেজন্য উপরে ও নিচে দেয়া হয়েছিল কার্বন কাগজ। তবে প্যাকেট খোলার পর সবই জানা যায়। বই আকৃতির প্রতি প্যাকেটে দুই টাকার এক হাজার নোটে দুই হাজার টাকা হলেও প্যাকেটের ওজন অনুযায়ী লাগানো হয় ৭৫৮ টাকার ডাকটিকিট।

হংকংয়ের ঠিকানায় ২৪টি প্যাকেটে ২৪ হাজার ও চীনের ঠিকানায় চারটি প্যাকেটে ৪ হাজার দুই টাকার নোট ছিল।



মন্তব্য চালু নেই