দুই মন্ত্রীর সাজা, সবার দৃষ্টি আজ মন্ত্রিসভায়

আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ড পাওয়া খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি। সাজা পাওয়া এই দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব এখন যতটা না আইনি প্রশ্ন জড়িত তার চেয়ে নৈতিকতার প্রশ্নই বেশি চলে আসছে।আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে মন্ত্রিসভার ওপর, বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর ওপর। গোটা বিশষটি পর্যবেক্ষণ করছেন শাসক দলের নেতারাও। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাও মুখে যেন কুলুপ এটেছেন। তবে সবার দৃষ্টি আজকের মন্ত্রিসভার দিকে। এ দুই মন্ত্রী মন্ত্রিসভার আজকের নিয়মিত বৈঠকে যোগদেন কী না? বা মন্ত্রিসভা তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্তে নেয় তার দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।বলাবলি হচ্ছে- দুই মন্ত্রীর ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে আজ।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সরকার গঠন ও রাষ্ট্রাচার অধিশাখা কর্মকর্তাদের সংবিধান ঘাঁটাঘাঁটি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকের জন্যই তাদের এই প্রস্তুতি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, “আজ(সোমবার)মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আদালতে দণ্ড পাওয়া দুই মন্ত্রীর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আমরা আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।”

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ-সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, “দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতের রায়ের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।”

এদিকে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দণ্ড পাওয়া দুই মন্ত্রী রবিবার রায় ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাদের সময় দেননি। এর আগে আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠার পর এর আগের মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনায় খাদ্যমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীর প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করেছিলেন।

দলীয় ওই সূত্র জানায়, দুই মন্ত্রীর বিষয়টি আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা ওঠার সম্ভাবনা বেশি।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম আদালতের রায়ের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দণ্ড পাওয়া দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব থাকবে কি থাকবে না, সেটা নির্ধারণ করবে মন্ত্রিসভা। দুই মন্ত্রীর আদালত অবমাননা ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।তিনি বলেন, এখানে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার চেয়ে বিষয়টি নৈতিকতার প্রশ্ন জড়িত।কাজেই তাদের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেবে সেটা দেখবে মন্ত্রিসভা।

আদালত অবমাননার দায়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে সাত দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন প্রধান বিচারপতিসহ সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। জরিমানার টাকা সাত দিনের মধ্যে কিডনি ফাউন্ডেশন অথবা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে দিতে বলেছেন আদালত।

কামরুল ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন আবদুল বাসেত মজুমদার।অপরদিকে মোজাম্মেল হকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।

রায় ঘোষণার পর আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, “আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়েছিলাম। আদালত আমাদের আবেদন নামঞ্জুর করে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে সাত দিন করে কারাদণ্ড দিয়েছেন।”

এ দণ্ডাদেশের কারণে তাদের মন্ত্রিত্ব থাকবে কি না জানতে চাইলে আবদুল বাসেত মজুমদার কোনো মন্তব্য করেননি।

৫ মার্চ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভায় দুই মন্ত্রী প্রধান বিচারপতি ও বিচার বিভাগ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বাদ দিয়ে মীর কাসেমের মামলার আপিল শুনানি পুনরায় করার দাবি জানান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।

এ বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশের পর গত ৮ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে আদালতে তলব করেন পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। নির্দেশ অনুয়ায়ী ১৫ মার্চ দুই মন্ত্রী আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন। তবে খাদ্যমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় তার পক্ষে আদালতে সময় চাওয়া হয়। আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য ২০ মার্চ দিন পুনর্নিনির্ধারণ করেন।

২০ মার্চ দুই মন্ত্রী আদালতে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বক্তব্য সন্তোষজনক না হওয়ায় ২৭ মার্চ তাদের দুজনকেই ফের আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন আদালত।ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই