দৃষ্টিশক্তি ক্ষয় প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

প্রত্যেক মানুষই চান তার দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকুক কিন্তু বেশীরভাগ মানুষই চোখের যত্ন সম্পর্কে অজ্ঞ। চোখের যথাযথ যত্নই চোখকে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে অসময়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার সমস্যাটি প্রতিরোধ করা যায়। আসুন তাহলে জেনে নিই চোখের সুস্থতার জন্য করনীয়গুলো কী কী।

১। প্রযুক্তি থেকে বিরতি নিন

এটি বলা সহজ হলেও করা কঠিন। আজকের পৃথিবীতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করা খুবই সাধারণ এবং এর ফলেই আপনার দৃষ্টিশক্তি মারাত্মক ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকালে চোখ শুষ্ক হয়ে যায় এবং চোখের উপর চাপ পড়ে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া অথবা মাথা ব্যথা বা চোখে ব্যথার মত সমস্যাগুলো হতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় ৫ মিনিট পর পর স্ক্রিনের থেকে বিরতি নিলে, চোখ পিটপিট করলে এবং দূরে কোথাও তাকিয়ে থাকলে। এছাড়াও ২০-২০-২০ নিয়মটি অনুসরণ করতে পারেন অর্থাৎ ২০ মিনিট কাজের পর ২০ ফুট দূরে ২০ সেকেন্ডের জন্য তাকিয়ে থাকুন।

২। জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন

জাঙ্ক ফুড শুধুমাত্র হার্টকেই দুর্বল করেনা বরং চোখের ও ক্ষতি করে। উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট ও চিনিযুক্ত খাবার শরীরের ভেতরে ভেঙ্গে সাধারণ চিনি বা গ্লুকোজে পরিণত হয়। চিনি বা গ্লুকোজের আধিক্যের ফলে চোখের রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়াও প্রসেসড ফুড যেমন- চিজ, বার্গার, ডোনাট ইত্যাদি খাবারগুলো চোখের রক্তনালীতে চর্বি জমা করে। যার ফলে সময়ের সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। এজন্যই চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সঠিক খাদ্য খাওয়া আবশ্যক।

৩। পারিবারিক ইতিহাস

হাঁ দৃষ্টিশক্তির সমস্যা পারিবারিকভাবেও হতে পারে। তাই পারিবারিক ইতিহাস জানাটা জরুরী। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রোগ যেমন- ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশন থাকলে চোখের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। পরিবারের কারো এই ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে চোখের চেকআপ করিয়ে নিন। কারণ প্রারম্ভিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভিসন লস সীমিত রাখা যায়।

৪। বদভ্যাস ত্যাগ করুন

ধূমপান ও মদ্যপানের মত অভ্যাসগুলোই চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে। এরা ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের (চোখের নার্ভের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যার ফলে সেন্ট্রাল ভিসন প্রভাবিত হয়।)ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এবং অপটিক নার্ভেরও ক্ষতি হয়। এগুলো অন্ধত্বের অপরিবর্তনীয় কারণ।

৫। নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করান

নির্দিষ্ট বয়সের পর যেমন- বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সে চেকআপ না করালে চোখের জন্য ক্ষতিকর হয়। এই বয়সেই ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যা শুরু হয়, তখন রিডিং গ্লাস নিতে হয়। এই অবস্থাকে প্রেসবায়োপিয়া বলে। এছাড়াও চোখের প্রেসার বৃদ্ধির কারণে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্থ হলে গ্লোকোমা হতে পারে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চোখের ছানি পড়ার সমস্যাও হতে পারে। দৃষ্টিশক্তির সমস্যা শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো দরকার।

৬। শিশুদের অলস চোখকে উপেক্ষা করবেন না

যদি শিশু স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখতে না পায় বা টিভি দেখার সময় চোখ কুঁচকে রাখে তাহলে তাকে চোখের ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাওয়া জরুরী। তার হয়তো চশমা প্রয়োজন হতে পারে। যে সব অভিভাবকেরা শিশুর চশমার কথা শুনলে ভয় পান তাদের জানা প্রয়োজন যে, শিশুর চশমা ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হতে পারে এবং শিশুরা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের চোখ পরিপক্ক হতে থাকে ফলে চশমার প্রয়োজনীয়তা কাটিয়ে উঠতে পারে।

৭। সুস্পষ্ট লক্ষণ উপেক্ষা করবেন না

দ্বৈত দৃষ্টি, হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, একদৃষ্টি, চোখের সামনে কিছু ভাসতে দেখা, হঠাৎ আলোর ঝলকানি দেখতে পাওয়ার মত অপ্রীতিকর উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত চোখের পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। চোখ হচ্ছে শরীরের রোগের জানালা। বিভিন্ন রোগের যেমন- ক্যান্সার, ব্লিডিং ডিসঅর্ডার, থাইরয়েড সমস্যা বা এইচআইভি/এইডস এর লক্ষণ চোখ দেখে বোঝা যায়। নিউরোলজিক্যাল ও রিওমাটোলজিক ডিজিজ ও বোঝা যায় চোখ দেখে।

৮। চোখের এক্সেসরিজের যত্ন নিন

আপনি যদি চশমা পড়ে থাকেন বা কন্টাক ল্যান্স ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এদের যত্ন নিন এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন রিডিং গ্লাস খুবই নাজুক হয়ে থাকে যা টিস্যু বা টয়লেট পেপার দিয়ে মুছলে দাগ পড়তে পারে, তাই নরম কাপড় দিয়ে মুছতে পারেন। যারা কন্টাক ল্যান্স ব্যবহার করেন তারা সারারাত কন্টাক ল্যান্স পড়ে থাকবেন না এবং দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকবেন না। কন্টাক ল্যান্স পড়া ও খোলার সময় হাত ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। এতে ইনফেকশন এড়ানো যাবে।



মন্তব্য চালু নেই