দেখে মনে হবে আবাসিক এলাকার ফ্লাট!

আগামীকাল রবিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ কারাগার। যা কিনা রাজধানী ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে। এ কারাগারে থাকছে বিভিন্ন আধুনিক সু-ব্যবস্থা। দেখে মনে হয় ঠিক যেন কোন আবাসিক এলাকায় এক একটি ফ্ল্যাট বাড়ি।

আগামীকাল রোববার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-মাওয়া সড়কের দক্ষিণে কেরানীগঞ্জে ৪ হাজার ৫৯০ বন্দি ধারণক্ষমতার নতুন এ কারাগার নির্মিত হয়েছে ১৯৪ দশমিক ৪১ একর জমির ওপর। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। নতুন এ কারাগারের নির্মাণ শুরু হয় ২০০৭ সালে।

এ কারাগারের সব ভবনের নামকরণ করা হয়েছে নদী ও ফুলের সঙ্গে মিশিয়ে। দেশের প্রধান প্রধান নদী পদ্মা, যমুনা, করোতোয়া নামকরণ করা হয়েছে তিনটি ভবনের। বকুল, শাপলা ও চম্পাকলি রাখা হয়েছে অপর তিন ভবনের।

নতুন কারগারের পেরিমিটার দেয়ালের ভেতরে তিন হাজার বিচারাধীন বন্দি ওয়ার্ড রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত বন্দি ওয়ার্ড রয়েছে এক হাজার। বিপদজনক বন্দি সেল রয়েছে ৪০০। কিশোর বন্দি ভবন রয়েছে একটি, যাতে এক’শ কিশোর বন্দি থাকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া একটি প্রথম শ্রেণি বন্দি ভবন রয়েছে, যাতে থাকার ব্যবস্থা আছে ৬০ (ভিআইপি) বন্দির। এমআই ইউনিটে থাকতে পারবে ২০ বন্দি।

কারাগারের ভেতরে একটি অত্যাধুনিক ফাঁসির মঞ্চ রয়েছে। ওই মঞ্চে এক সঙ্গে দুই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসি কার্যকর করা যাবে।

এছাড়া একটি জেল স্কুল অ্যান্ড লাইব্রেরি, আটটি রান্না ঘর, ১৬টি ডে-টাইম বাথিং, একটি ওয়ার্ক সেল, একটি সেলুন, একটি আটার কল, একটি কেইস টেবিল, ১০টি পানির রিজার্ভার, ১০টি পাম্প হাউজ রয়েছে। পুরো কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিতে থাকছে ৪৮টি সিসিটিভি, ইলেকট্রনিক বারবেড ওয়ার ফেন্সিং।

পেরিমিটার দেয়ালের বাইরে ১২৩০ দশমিক ৯৬ আয়তনের একটি চার তলা ভীতে ২ তলার প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। সাক্ষাৎকার ভবন রয়েছে একটি। এছাড়া বিভিন্ন আয়তনের ৯৮টি আবাসিক কোয়ার্টার ইউনিট রয়েছে। ৩৮৪ কারারক্ষী থাকার জন্য রয়েছে ব্যারাক।

৪০০ কেভিএ সম্পন্ন একটি জেনারেটর রয়েছে। গোডাউন রয়েছে তিনটি। সাবস্টেশন ভবন একটি। অবজারভেশন টাওয়ার চারটি, ২ সেন্ট্রি বক্স ও একটি মসজিদও রয়েছে নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে।

নতুন এ কারাগারে ২৭০ বন্দি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নারী কেন্দ্রীয় কারাগারের কাজও চলছে। পুরুষ কারাগার-১ এর সমপরিমাণ ধারণক্ষমতা সস্পন্ন পুরুষ কারাগার-২ নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ২৭৮ দশমিক ১৫ কোটি টাকা। এতে একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জানান, ‘ইতোমধ্যে ভবনের ৮৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। একদিনেই সব কারাবন্দিদের স্থানান্তরের চিন্তা থাকলেও তা সম্ভব নয়। কারণ এক ভ্যানে ৫০ করে স্থানান্তর করা হলে ৮ হাজার কারাবন্দির জন্য ১৬০টি ভ্যান প্রয়োজন।

কিন্তু এতো সংখ্যক ভ্যান আমাদের নেই। তাছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে কারাবন্দিদের স্থানান্তরের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।’

d5c93c3ec0d5c2c3d809c958b562e447-25_1

তিনি বলেন, ‘কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। কারারক্ষীদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটি স্কুল নির্মাণ করা হবে। বন্দিরা যাতে মোবাইল ফোন ও মাদক ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য জ্যামার স্থাপন করা হবে।

তবে আমরা যা শুনেছি কেরানীগঞ্জের ওই এলাকায় বেশি বেশি লোডশেডিং হয়। আর লোডশেডিং হলে জ্যামার কাজ করে না। সে সময়ও কড়া নজরদারি করা হবে। এজন্য একটি পার্সোনাল স্ক্যানার স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, ২ হাজার ৮২৬ বন্দি ধারণক্ষমতার পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মিত হয়েছিল ১৭৮৮ সালে। সোয়া ২শ বছর আগে স্থাপিত পুরান ঢাকার এ কারাগারে বর্তমানে বন্দির সংখ্যা অনুমোদিত সীমার প্রায় তিনগুণ বেশি।

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নতুন কারাগারের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। নতুন কারাগার উদ্বোধনের পরপরই পুরনো কারাগার থেকে অতিরিক্ত বন্দিদের সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হবে।



মন্তব্য চালু নেই