দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ‘জঙ্গিবাদ নিয়ে অতিকথনে’

জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে সব মহলের অতিকথনের কারণে দেশের বাইরে ভিন্ন ‘মেসেজ’ যাচ্ছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সিনিয়র রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ সব মহল জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ নিয়ে মিডিয়ার সামনে বেশি কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ভীতিকর চিত্র ফুটে উঠছে। যদিও বাংলাদেশে আদৌ এ ধরনের কোনো আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি নেই।

বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের শঙ্কা, এই শঙ্কার সুরাহা না হতেই গুলশানে ইতালির এক নাগরিকের রহস্যজনক খুন ও তার পরপরই অস্ট্রেলিয়াসহ আরো তিনটি দেশ বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের সতর্ক হয়ে থাকার পরামর্শ দেয়ার বিষয়ে এসব কথা বলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাখাওয়াত হোসেন ও মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ ইব্রাহিম।

এ দুই বিশ্লেষকের মতে, বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের এমন ধারণা দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ব্যাপক ক্ষতি করছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশ নাগরিককে হত্যার ঘটনার বিশ্বসযোগ্য তদন্ত হওয়া উচিৎ। একইসঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহলগুলোকেও তৎপর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দেশ এবং দেশের বাইরে জঙ্গি শব্দটি এত বেশি উচ্চারণ করছেন এবং এগুলো টিভি, রেডিওসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারও হচ্ছে। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় অনেক বিদেশি আমাদের বলে, আপনারাই তো এসব বলছেন।’

তিনি বলেন, বিদেশিরা তো মূল ‘মেসেজ’টা পায় আমাদের কাছ থেকেই। আমাদের দেশ-বিদেশের মিডিয়ার কাছ থেকে। যখন বড় কোনো দেশ বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলে, তখন ছোট দেশগুলোও তাদের আশঙ্কা ব্যক্ত করে। এটাই স্বাভাবিক।

ইতালির নাগরিক নিহতের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দায় স্বীকার করলেও এটা তাদের প্রপাগান্ডাও হতে পারে। কারণ এ ধরনের সংগঠনগুলো সাধারণত প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে আগে ‘ভ্যালু’ বানায়।

তবে একদিকে অষ্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম যখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে ঠিক ওই সময়ে গুলশানে বিদেশি নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকারের উচিৎ যত দ্রুত সম্ভব এই ঘটনার তদন্ত শুরু করা। প্রয়োজনে এ বিষয়ে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থারও সাহায্য নেয়া যেতে পারে। যেভাবেই হোক সত্যটাকে সামনে নিয়ে আসা প্রয়োজন।

অন্যদিকে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ ইব্রাহিম সাম্প্রতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, সরকার, রাজনৈতিকদল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের স্ব স্ব কৃতত্ব জাহির করতে গিয়ে বার বার জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে কথা বলছেন। যেগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এ ধরনের প্রচারণা বিদেশে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। বিদেশিরা এসব সংবাদ শুনে মনে করে বাংলাদেশে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে ওইরকম কোনো খারাপ পরিস্থিতি নেই।

তিনি বলেন, পাশ্চাত্য দেশগুলো তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই দেখে। তাই তারা নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তাদের নাগরিকদের সতর্ক করছে বাংলাদেশ সম্পর্কে।



মন্তব্য চালু নেই