দেশ ছাড়তে মরিয়া নাস্তিক ও সমকামীরা

বন্ধুর মৃত্যু দেখেছেন তিনি। ঝুঁকির মধ্যে নিজের জীবন। কথিত ইসলামপন্থীদের দ্বারা ধারবাহিক হত্যার ঘটনায় হতাশ এবং ভীত নাস্তিক ব্লগার মারুফ রসুল। তিনি বলছেন, সন্ত্রাসীরা এখন তাকে দেশ ছাড়তেও দেবে না।

নাস্তিক মারুফ তার এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লন্ডনের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে। পত্রিকাটিতে ১ মে ‘Bangladeshi bloggers refuse to be cowed by Islamist terror campaign’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। ঢাকা থেকে এ প্রতিবেদনটি লিখেছেন David Bergman ও Philip Sherwell.

ঘোষিত নাস্তিক মারুফ অভিজিৎ রায়ের ‘মুক্তমনা’র একজন ব্লগার। অভিজিৎ রায়ও গত বছর ঢাকায় খুন হন। গত ১৪ মাসে অন্তত ১০জন লোককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যারা নাস্তিক, ব্লগার, নাস্তিকের বইয়ের প্রকাশক এবং সমকামী।

মারুফ বললেন, “দেশত্যাগ করা আমার কাছে কঠিন মনে হচ্ছে। এই দেশ আমার। আমি প্রতিবাদের জন্য দাঁড়াতে পারি না। কিভাবে পরিবর্তন আনব?”

ব্লগার, নাস্তিক ও সমকামীদের কেউ নিহত হলেই দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় আইএস, আলকায়েদা, আনসারুল ইসলাম।

কিন্তু অনেকের মত মারুফও মনে করেন এসব হত্যাকণ্ডের পেছনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী জড়িত। যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দলের নেতাদের পক্ষে প্রতিশোধ নিতেই জামায়াত এসব করছে। তবে মারুফ বললেন, “জামায়াত সরাসরি এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়। জঙ্গিদের সহযোগী।” মারুফ জানালেন, তিনি আর একা ঢাকার রাস্তায় বের হতে পারেন না।

জামায়াত সবসময়ই এ ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। অনেকে মনে করেন স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠী জামায়াতুল মোজাহিদিন, যারা আল কায়েদার সহযোগী হিসেবে নিজেদের মনে করে, তারাই এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

এক সমকামী, টেলিগ্রাফ যাকে বাপ্পী বলে উল্লেখ করেছে, তিনি বললেন, “আমি যদি এক কাপড়েও দেশের বাইরে যেতে পারি, তবুও রাজি আছি।” বাপ্পী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সমকামী জুলহাজ মান্নান এবং মাহবুব হত্যার দুইদিন পর এ ধরণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন।

আল কায়েদা, আনসারুল ইসলাম অথবা আইএস যেই এসব হত্যাকাণ্ডের স্বীকার করুক না কেন সরকার বলছে অন্য কথা। বাংলাদেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন নয়, স্থানীয় জঙ্গি সংগঠনগুলো এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। টেলিগ্রাফ বলছে, বাংলাদেশের সরকার নিহতদের প্রতি খুব কমই সহানুভূতিশীল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাস্তিক ব্লগারদের সমালোচনা করেছেন। তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেছেন, “আমরা আমাদের ধর্ম পালন করব। আজেবাজে ভাষায় আমাদের ধর্মের সমালোচনা সহ্য করবো কেন? আমাদের নবী বা অন্য ধর্মের সমালোচনা করে লেখা হবে, আর এটা আমরা সহ্য করব তা হবে না।”

দুই সমকামী জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয় নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের এক মন্ত্রী ঘোষণা করেছেন “সমকামিতা বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ নয়।”

পারভেজ আলম নামে এক লেখক, যিনি সম্প্রতি দেশ ছেড়েছেন, তিনি বললেন, “বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্র চলছে। বিরোধীপক্ষ নেই। ফলে এক ধরণের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আর এই সুযোগে ইসলামপন্থীরা অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে।”

একই ধরণের বিশ্লেষণ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। সম্প্রতি তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, সরকার বিরোধীদল বিএনপির বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর আচরণ করছে।

বাপ্পী, যার আসল নাম নিরাপত্তার কারণে টেলিগ্রাফ প্রকাশ করেনি, তিনি দেশ ছাড়তে মরিয়া। বাপ্পী বললেন, “আমি সংকটে আছি। আমার নিরাপত্তা নিয়ে আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন। জীবনের চেয়ে তো আর কিছুই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না।”



মন্তব্য চালু নেই