‘ধর্মান্ধ মানুষ মুক্তচিন্তার অধিকারীদের আঘাত করছে’

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, ‘সুশিক্ষার অভাবে মানুষ ধর্মান্ধ হচ্ছে। আর এই ধর্মান্ধ মানুষেরা মুক্তচিন্তার অধিকারীদের আঘাত করছে। এ অবস্থার উত্তোরণে দেশের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বইমেলার আয়োজন। আশা করি পাঠক ও পাঠ্যাভ্যাস বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন হবে।’

দেশের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বইমেলা আয়োজন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ২৮ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর রাজশাহী, ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর দিনাজপুর, ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম, ১১ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি সিলেটে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘গত দুই অর্থবছরে আমরা ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া, কুমিল্লা, যশোর ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বইমেলার আয়োজন করেছি এবং তা অঞ্চলভিত্তিক ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। এসব বইমেলায় ঢাকা থেকে ৬০-৭০টি স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছিল। আমরা আশা করছি, এবারের বইমেলাগুলোতে আরো বেশি সংখ্যক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে।’

জ্ঞানভিত্তিক ও সৃজনশীল সমাজ গড়ে তুলতে এবং চেতনাকে বিকশিত করতে বইয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতেও বইয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। একটি গ্রন্থমনস্ক মানুষ হয় উদার, আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক। আর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে বইমেলা।

এক প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, দেশের পাবলিক লাইব্রেরিগুলো পাঠকবান্ধব করার চেষ্টা করছি। এটাকে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে অধিকতর উন্নতমানের গ্রন্থ প্রকাশ এবং যারা পুস্তক প্রকাশনার কাজে নিযুক্ত রয়েছেন তাদেরকে প্রকাশনার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র দেশে প্রকাশনা শিল্পের বিকাশ, পাঠক ও পাঠ্যাভাস বৃদ্ধি, গ্রন্থের বিক্রয়-বিপণন, বেসরকারি গ্রন্থাগারের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আর্থিক অনুদান প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিভাগীয় ও জেলা শহরে বইমেলার আয়োজন করা।

মন্ত্রী বলেন, একটি জাতির আত্মপরিচয়ের অন্যতম নিয়ামক শক্তি হলো তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য সংরক্ষণ, গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির মানসিক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে নিয়োজিত সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। এ দেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ধারাকে পরিচর্যা, প্রতিপালন, সংরক্ষণ, বিকাশ ও উন্নয়নের মাধ্যমে সুস্থ সামাজিক অবকাঠামো গঠন, মেধা ও মননশীলতার চর্চা, লোকজ সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশ, পাঠক ও পাঠ্যাভ্যাস তৈরির মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ এবং মানবিক বোধসম্পন্ন মুক্তচিন্তার মানুষ তৈরির মাধ্যমে একটি অসাম্প্রদায়িক সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এ মন্ত্রণালয় অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আকতারী মমতাজ, অতিরিক্ত সচিব মো. মশিউর রহমান, অতিরিক্ত সচিব মাহবুবা মশকুর, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সহসভাপতি ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান শায়ক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) হোসনে আরা আক্তার প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই