আরও ছয় লাশ উদ্ধার

ধ্বংসস্তূপের ভেতর মানুষ-পোড়া গন্ধ, নিখোঁজ ৯

টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণে সৃষ্ট ভয়াল আগুনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নিখোঁজদের একটি তালিকা করা হয়েছে। সেখানে ৯ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই কারখানার পাশে জেলা প্রশাসনের খোলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে রবিবার দুপুরে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।

এদিকে ভস্মীভূত কারখানার ভেতর থেকে ভেসে আসছে মানুষ-পোড়া গন্ধ। বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা রবিবার ঘটনাস্থলে পোড়া মানুষের গন্ধ পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

আজ ধ্বংসস্তূতের ভেতর থেকে আজ আরও ছয় জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করার পর পরই লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। লাশগুলো বিকৃত হয়ে গেছে। তবে নিখোঁজ তালিকায় এই ছয় জনের নাম রয়েছে কি না তা জানা যায়নি।

ধ্বংস্তূপের ভেতর থেকে আজ দুপুরেও ধোঁয়া বের হচ্ছিল। উত্তাপের কারণে এবং ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উদ্ধারর্মীরা কেউ ভেতরে যাচ্ছেন না, তাই ভেতরে কোনো দগ্ধ লাশ রয়েছে কি না তা জানা সম্ভ হচ্ছে না।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এর ভেতরে এখনই প্রবেশ করা যাচ্ছে না।’ আরো পড়ুন: ২৯ ঘণ্টা পর নিভলো টাম্পাকোর আগুন

ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আরও মানুষ আছে কি নেই তা স্তূপ না সরালে জানা যাবে না বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিদর্শক আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা শুধু উদ্ধার করেছি। তবে নিখোঁজদের ব্যাপারে আমার কিছু জানি না।’

জেলা প্রশাসনের হিসাবে নিখোঁজরা হলেন-মাগুরা সদরের চনপুর ইডারন গ্রামের আঃ মালেক মোল্লার ছেলে আজিম উদ্দিন, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার উকুলকি গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম, গাজীপুরের হিমারদিঘী আমতলী বস্তি হরিজন কলোনির দিলীপ ডোমের ছেলে শ্রী রাজেশ বাবু , লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার শিবপুর গ্রামের মোঃ আবু তাহেরের ছেলে রিয়াদ হোসেন মুরাদ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানার ঝিগার বাড়িয়া গ্রামের মমতাজ আলীর ছেলে মোঃ ইসমাইল হোসেন, একই এলাকার সুলতান গাজীর ছেলে মোঃ আনিছুর রহমান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানার মেছেরা গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মোঃ রফিকুল ইসলাম, চাঁদপুরের কচুয়া থানার তেগরিয়া গ্রামের ইউনুস পাটোয়ারীর ছেলে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী ও কুমিল্লা মুরাদনগর থানার টনকী গ্রামের মোঃ তোফায়েল হোসেনের ছেলে মাসুম আহমেদ। নিহতরা সবাই ওই কারখানার শ্রমিক কর্মচারী। কন্ট্রোলরুমের পাশে নিখোঁজ স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের খোঁজ নিতে এসে ছবি হাতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা তাদের প্রিয় স্বজনের সন্ধান চান।এ ছাড়া চুন্নু মোল্লা নামের আরেক কর্মীও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট আবুল হাসেম জানান, গতকাল শনিবার থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত ৯ জন নিখোঁজ থাকার বিষয়ে স্বজনদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।

গতকাল শনিবার সকালে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল প্যাকেজিং কারখানা টাম্পাকোতে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগে। এতে ৩১ জন নিহত হয়। এর মধ্যে গতকাল ২৫ জনের কথা জানা যায়। আজ আরও ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে প্রশাসন আজ নিখোঁজ যে ৯ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে সেখানে এই ছয় জনের নাম রয়েছে কি না তা জানা যায়নি। আগুনে আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। বিস্ফোরণে পাঁচতলা কারখানা ভবন ও পাশের দুটি তিনতলা ভবন ধসে পড়েছে। আরেকটি ছয়তলা ভবনও গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই