কাজ বন্ধ_____________________________________________________

নওহাটায় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মাণ!

সরকার দুলাল মাহবুব, রাজশাহী থেকে : রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌর সভার নওহাটা বাজারে নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে এবং সিডিউলের তোয়াক্কা না করে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু বিষয়টি জেনেও নির্বিকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। জনগণের বাধার মুখে গতকাল শনিবার কাজ বন্ধ ছিল।

পাশাপাশি এলাকাবাসী রাস্তা নিমার্ণে পুকুর চুরির অভিযোগ তুলেছে। ঘুষের টাকা পকেটে পেয়ে দেখভালের ধারেও থাকছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্তা ব্যক্তিরা। একটি সুত্র জানাচ্ছে এই ঘুষের টাকার ভাগে জড়িত আছে নওহাটা পৌর মেয়রসহ প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সহকারি প্রকৌশলী আতাউর রহমান ও উপ-সহকারি প্রকৌশলী মনিরুলর ইসলাম।

সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নওগাঁ সওজ রাস্তার নিকট থেকে সিএনজি স্ট্যান্ড হতে বিশুর দোকান পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ। এলাকাবাসী চরম দূর্ভোগের পর নওহাটা পৌরসভার বাস্তবায়নে গত ১ মার্চ এই রাস্তা নির্মাণের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন।

নিউ রিলেশন এন্টারপ্রাইজ এই রাস্তা নির্মাণের ঠিকাদারী নেই। এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডার অনুযায়ী কোন কিছুই করছে না। সিডিউলে ওই পুরাতন রাস্তাকে সম্পূর্ণ তুলে ফেলে করার কথা থাকলেও শুধুমাত্র জমিচষা ট্রাক্টর দিয়ে রাস্তা আঁচড়িছে। অথচ নতুন রাস্তা দুই ফুট খঁড়ে তার ওপর ৬ ইঞ্চি বালু ফিলিং কমপেক্ট করতে হবে। কিন্তু তা না করে এর ওপর ভরাট মাটি ফেলে রাস্তা উচু করা হচ্ছে। এরপর আবারো ছয় ইঞ্চি ১ নম্বর ইটের খুঁয়া ও বালি ফিলিং কমপেক্ট ১ঃ১ অনুপাতে করতে হবে। অর্থাৎ অর্ধেক বালু ও অর্ধেক খুঁয়া দিয়ে কমপেক্ট করতে হবে। কিন্তু সরোজমিন দেখা গেছে বালির কাছে ভরাট মাটি, ১ নম্বর ইটের খঁয়ার পরিবর্তে ৩ নম্বর ইটের ঝাঁই এবং খঁয়া অর্ধেক কেন ১৫ ভাগও দেয়া হচ্ছে না। প্রতিবারই ভারী রোলার দিয়ে কমপেক্টের কথা থাকলেও কোনবারই তা মানা হয়নি। পৌরসভার কম ওজনের মিনি রোলার দিয়ে কমপেক্টের দায়সারা কাজ করা হয়েছে। অর্থাৎ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পৌর কর্তৃপক্ষ অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করে দায়সারা কাজ করছেন বলে অনেকে ধারনা করছেন। অথচ নওহাটা পৌরসভার এই রাস্তাটিই বাণিজ্যিক রাস্তা।

দীর্ঘদিন পর খানা খন্দকে ভরপুর সড়কটি পুরো নতুনের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীর মনে স্বস্তি এলেও নির্মান কাজ দেখে তারা হতাশ। রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও অপ্রতুল খুঁয়ার ব্যবহারে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর এই রাস্তার কাজ শুরু হওয়া শুভ লক্ষণ হলেও নির্মাণে কাজের অনিয়মের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। অনেকে বলেন ১ মার্চ উদ্বোধন হলেও এখন তড়িঘড়ি করে নিম্নমালের সামগ্রী দিয়ে রাস্তার কাজ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বলেন, রাস্তা নির্মাণে নিম্ন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় রাস্তাটি বেশীদিন স্থায়ী হবে না। এতে এলাকাবাসী আবারো দূর্ভোগের শিকার হবে। তিনি আরো বলেন আমাদের মত প্রকৌশলী, কর্তৃপক্ষের কর্তাব্যক্তি ও ঠিকাদারদের পকেট ভারির কারণে এ খ্যাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে।

অনেকে বলছেন পৌর সহকারি প্রকৌশলী আতাউর রহমান দীর্ঘদিন থেকে নওহাটা পৌরসভায় কর্মরত আছেন। প্রতিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে তার একটা গোপন বাণিজ্য আছে। নইলে এতবড় পুকুর চুরি হলেও তিনি দেখভাল করেন না। এই পৌরসভায় তিনজন প্রকৌশলী থাকলেও রাস্তায় নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। এটা থেকেই অনুমান করা যায় এখান থেকে বিরাট অংকের ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে।

এদিকে নি¤œ মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের রাস্তা নির্মাণে নানা অনিয়মে এলাকাবাসী ফুসে উঠতে শুরু করেছে। এই রাস্তাকে কেন্দ্র করে বড় ধরণের অঘটনের আশংকা রয়েছে।

ঘুষ বাণিজ্য অস্বীকার করে এ ব্যাপারে নওহাটা পৌর মেয়র আলহাজ্ব শেখ মকবুল হোসেন বলেন আমি রাজনৈতিক ম্যারপ্যাচে আছি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু বলা বা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ঈদের জন্য জনগণের সুবিধার্থে পৌরসভার রোলার দিয়ে কাজ করিয়েছি। কিন্তু নওহাটার আপামর জনসাধারণ বলেন, রাজনৈতিক ম্যারপ্যাচের কথা বলে মেয়র বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। আগে মেয়রের শ্যালক ঠিকাদারি করতো বর্তমানে মেয়রের ভাই ঠিকাদারি করছেন। বরাদ্দের কতটুকু কাজ হয় সেটা মুখে না বললেও অনেকে জানে।

এ ব্যাপারে পৌর সহকারি প্রকৌশলী আতাউর বলেন, কাজ ভালই হচ্ছে। আরো কিছু জানতে চাইলে অফিসে আসেন।

নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে নিউরিলেশনের স্বত্বাধিকারি ওয়াসিম বলেন, আসলে কাজটি করছেন আমার ভাগ্নে আল ফারুক আজাদ কামাল নতুন। নতুন বর্তমানে ভারতে গেছেন। তবে তিনি বলেন, কাজ বুঝে নেয়ার দায়িত্ব জনসাধারণের নয় পৌর কর্তৃপক্ষের। এখানে একজন ভ্যানচালক কি বললো সেটা বড় কথা নয়। এসব দেখার জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে ইঞ্জিনিয়ার তৈরী করে। তারাই তো ভাল বুঝবেন কোনটা ঠিক আর কোনটা ঘাপলা। তিনি আরো বলেন আপনাদের মত অনেক সাংবাদিক হ্যান্ডেলিং করতে হয়। ওই কাজ কেন আমার প্রতিষ্ঠান র‌্যাব পুলিশেরও কাজ করে।

Exif_JPEG_420
Exif_JPEG_420


মন্তব্য চালু নেই