নতুন ইসিতে অভিযোগ আসা শুরু

সদ্য বিদায়ী কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রায় পুরোটা সময় ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে। কেএম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগও এরইমধ্যে আসা শুরু হয়েছে। বারবার লিখিতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দেওয়ার পরও কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন আসন্ন পাবনার সুজানগর উপজেলার উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাজারী জাকির হোসেন।

দলীয়ভাবে প্রথমবার হতে যাওয়া স্থানীয় সরকারের উপজেলা নির্বাচনে বৃহস্পতিবার হাজারী জাকির হোসেন এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর পাঠান।

চিঠিতে উল্লেখ করেন, আগামী ৬ মার্চ হতে যাওয়া পাবনার সুজানগর উপজেলার উপ-নির্বাচনকে আমি আপনার কার্যালয়ে এলাকার যাবতীয় সমস্যা, সহিংসতা, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ পরপর ৯টি চিঠি দিয়েছি। কিন্তু জানি না চিঠিগুলো আপনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে কি না।

চিঠিতে তিনি আরো উল্লেখ করেন, একজন কমিশনার গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাবনা জেলা রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্রার্থীদের নিয়ে করা সভায় সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রশাসনকে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকা সত্যিই দুঃখজনক। সেদিন থেকে এসব এলাকায় ন্যাক্কারজনক সহিংসতা শুরু হয়েছে। ১ মার্চ সুজানগর পৌরতে পাবনা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণা করতে গেলে তাদের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়। এতে তিনজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এবং দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়ও খবর প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা বিএনপি নেতা কর্মীদের বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। এতে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আরো ৪ দিন বাকি। বাকি দিনগুলোতে এই নির্বাচনী এলাকায় আরো কী ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা আমার জানা নেই। আমাকে গুম বা হত্যা করারও আশঙ্কা করছি। তাই বিষয়গুলো তদন্ত করে নির্বাচনের দুইদিন আগে এ নির্বাচনী এলাকার সেনা মোতায়েনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কমিশনের অনুরোধ জানান তিনি।

চিঠির সঙ্গে তিনি ১ মার্চ (বুধবার) হামলার কিছু ছবি এবং বিএনপির মহাসচিবের বিবৃতির কপি সংযুক্ত করে দেন।

কমিশনের চিঠি দিতে আশা বিএনপি প্রার্থী হাজারী জাকির হোসেনের মেয়ে অ্যাডভোকেট জাকিয়া হুমায়রা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আজকে দিয়ে কমিশনকে দশটি চিঠি দিলাম। প্রাপ্তি জারি শাখা থেকে বলা হচ্ছে চিঠি কমিশনে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা যে চিঠি পেয়েছেন কমিশনের সে রকম কার্যক্রম আমরা লক্ষ্য করছি না। আমাদের বাড়িতে হামলা হচ্ছে। আমাদের নির্বাচনী এজেন্টদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কমিশন তার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমাদের ওখানকার যে সহকারি রিটার্নিং অফিসার রয়েছেন, তিনি নিজে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে বসে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দিয়েছেন। এ বিষয়েও কমিশনকে অবহিত করে আমরা ওই সব প্রিজাইডিয় অফিসারদের পরিবর্তন করতে বলেছি। এছাড়া আমাদের যে নির্বাচনী এজেন্ট তাদের নিরাপত্তা চেয়েছি। কিন্তু তাতেও কোনো সারা পাচ্ছি না। আজকে একজন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাও পারলাম না।

এ বিষয়ে কথা হলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন বলেন, আমার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি আসেনি। তবে আমি সেখানকার রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো। যদি কোনো অনিয়ম সেখানে হয়ে থাকে তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি পরামর্শ দিয়ে বলেন, কমিশনের হাড়িয়ে যাওয়া আস্থা কমিশনকেই আস্তে আস্তে ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য নির্বাচন কমিশনের সকল কর্মকর্তাদের এমনভাবে কথা বার্তা, আচার ব্যবহার, কাজ করতে হবে। যেন সবার সবার আস্থা থাকে যে এরা কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করবে না।

এছাড়া এদিন সিলেটের ওসমানীনগর, খাগড়াছড়ির গুইমারা ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সাধারণ এবং কুড়িগ্রামের সদর, বরিশালের বানারীপাড়া ও গৌরনদী, ঝালকাঠির কাঠালিয়া, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি, কুমিল্লা আদর্শ সদর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ ও পাবনার ঈশ্বরদীতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নীলফামারীর জলঢাকা, সাতক্ষিরার কলারোয়া ও বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।



মন্তব্য চালু নেই