নতুন ইসির রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ভূমিকা রাখতে ভেতরে ভেতরে ব্যস্ততা চলছে বিএনপিতে। দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন শীর্ষ নেতা নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)গঠনের ক্ষেত্রে নিজেদের করণীয় ঠিক করতে নানা স্তরে আলোচনা করেছেন। সবশেষ খবর বলছে, ইসি পুনর্গঠন নিয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি। সবকিছু চূড়ান্ত হলে চলতি মাসেই সংবাদ সম্মেলন করে এই রূপরেখা দেবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।খবর ঢাকাটাইমসের।

দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান,নতুন কমিশন গঠনের মাধ্যমেই আগামী সংসদ নির্বাচন কেমন হতে পারে তা অনেকটা পরিষ্কার হবে। এ জন্য তারা নির্বাচন কমিশন গঠনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।

কমিশনে সরকার নিজেদের পছন্দমতো লোক নিয়োগ না দিয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতে কাজটি করলে তা ইতিবাচকভাবে নেবে বিএনপি। আর তাতে আগামী নির্বাচনে দলটির অংশ নেয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এ কারণে বিএনপির দাবি, সবার মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। এ ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি,বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যদের ব্যাপারেও তাদের আপত্তি নেই বলে জানা গেছে।

এদিকে সরকার তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করবে এমনটা ধরে নিয়ে রূপরেখা তৈরির কাজ করছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আর প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন ইস্যুতে ফের রাজপথে নামার চিন্তাও মাথায় রাখছে দলটি।

যদিও ইসি পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোনো দরকার দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন সভা-সেমিনার, সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে এমনটা জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

তারা বলছেন, ইসি গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তাই এ নিয়ে সরকারের কিছু করার নেই। এরপরও পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, সরকার নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের উদ্যোগ আমলে নেবে না জেনেও এগোচ্ছেন তারা। এর মাধ্যমে তারা সরকারের মনোভাব বুঝতে চায়।

চলতি মাসেই সংবাদ সম্মেলন করে এই রূপরেখা তুলে ধরতে পারেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রূপরেখার একটি কপি রাষ্ট্রপতির কাছেও দেওয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করা এবং এটি নিয়ে সরকারের মনোভাব বোঝার জন্যই মূলত এই প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি না হলেও এই মাসের মধ্যে এই প্রস্তাব প্রকাশ করা হতে পারে।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে এখনো আলাদা কোনো আইন নেই। সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। এর আগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান নিজ উদ্যোগে একটি ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে বর্তমান কমিশন গঠন করেছিলেন। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ যখন শেষ পর‌্যায়ে তখন আবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপি বারবার সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে ‘গ্রহণযোগ্য’ একটি কমিশন গঠনের আহ্বান জানাচ্ছে।

সূত্র জানায়,গত সপ্তাহে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটি রূপরেখা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন ছাড়াও আরো তিনজন রূপরেখা নিয়ে কাজ করছেন, যারা সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।

ইসি পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপির রূপরেখা তৈরির বিষয়ে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে কাজ শুরু করছি। তবে এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি। যারা কাজ করছি চেয়ারপারসন আমাদের কথাবার্তা শুনেছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চূড়ান্ত করে জানানো হবে।’

আর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,‘নির্বাচন কমিশন কেমন হওয়া উচিত, তার একটি রূপরেখা তৈরি করার কাজ করছে বিএনপি। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে বা এই প্রস্তাব প্রকাশ করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’



মন্তব্য চালু নেই