নতুন মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নে

মা হওয়া একটি বিশাল পরিবর্তন আনে যে কোন নারীর জীবনে। তাঁর এতদিনকার জীবনের প্রাত্যহিক রুটিন পুরোপুরি বদলে যায়। একজন নতুন মায়ের এমনকি রাতের ঘুমের সময়ও দিন বা রাতের হিসেবে নয়, হয় শিশুর ঘুমের হিসেবে। একটি নতুন শিশু যেমন মায়ের কাছে আনন্দের অমুল্য ভান্ডার তেমনি এই আমূল পরিবর্তন কারণ হতে পারে বিষন্নতা, হতাশার মত মানসিক রোগের।

মনোবিজ্ঞানী ক্যারেন ক্লেইমেন (MSW, LCSW, প্রসব পরবর্তী স্ট্রেস সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা এবং কার্যনির্বাহী পরিচালক , LLC) প্রসব পরবর্তীকালে মায়ের বিশন্নতা এবং হতাশার উপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে বেশ কিছু বইও লিখেছেন তিনি। তাঁর গবেষণায় তিনি লক্ষ্য করেছেন, সব নতুন মায়েরাই কম-বেশি হতাশায় ভোগেন। একটি নতুন জীবনের দায়িত্ব তাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। অনেক সময় তো তারা নিজেদের অস্তিত্বের সঙ্কটে ভোগেন!

কিন্তু এইসব হতাশা প্রকাশ করেন না। তারা মনে করেন, আশপাশের মানুষ যদি জেনে যায় যে, মাতৃত্ব নিয়ে তারা ভাল বোধ করছেন না, বরং মানসিক চাপের মধ্যে আছেন তাহলে তাদেরকে সবাই ভুল বুঝবেন। অবশ্য আমাদের সমাজে ধারণাটি ভুল নয়। শিশুটির প্রতি আমরা এত মনোযোগী হয়ে উঠি যে মায়েদের মানসিক শারীরিক কোন স্বাস্থ্যের দিকেই খেয়াল করা হয় না।

এতে বরং হিতে বিপরীত হয়। কারণ, হতাশার প্রথম পর্যায়ে পরিবারের সকল সদস্যের সহায়তায় এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর ফল ভাল হয় না, মায়ের সাথে শিশু এবং তাঁর পরিবারকেও ভুগতে হয়। মানসিক রোগগুলো সম্পর্কে স্বল্প ধারণার কারণে অনেক পরিবার বুঝতেই পারে না যে, এর সমাধান মনোরোগ বিষেষজ্ঞের কাছে।

নতুন মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কিছু সমাধান দিয়েছেন ডা.ক্যারন। আসুন জেনে নিই সেগুলো-

আত্মবিশ্বাসী হোন
নতুন মা হিসেবে আপনি হয়ত অনেক কিছু জানেন না। কিন্তু কখনোই ভাববেন না, অন্যেরা আপনার চেয়ে বেশি জানেন বা বোঝেন। আপনার সন্তানের বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আপনি যে সমস্যা বা হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তা আসলে অনুভব করে সব মায়েরাই। তাই হীনমন্যতায় ভুগবেন না। বরং আত্মবিশ্বাসী হোন। অতিমাত্রায় হতাশার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হোন।

নিজেকে তুলনা করা বন্ধ করুন
নিজেকে অন্য মায়েদের সাথে তুলনা করবেন না। প্রত্যেক মানুষেরই ভুল-ত্রুটি থাকে। কিন্তু অন্যের সামনে সে নিজেকে উপস্থাপন করে নির্ভুল হিসেবে। আপনি হয়ত ভাবছেন আপনার বোনেরা বা বন্ধুরা তো হতাশায় ভুগতেন না। তারা প্রসব পরবর্তী সময়ে মা হওয়া নিয়ে অনেক আনন্দে ছিলেন, কিন্তু আপনারই সমস্যা যে আপনি ভাল নেই। কিন্তু এটি ভুল। সামাজিক অবস্থার কারণে কোন মা ই তাঁর হতাশার কথা প্রকাশ করেন না। তাই অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করে ভুল করবেন না।

স্বামীকে বলুন
আপনার মানসিক অবস্থার কথা আপনার স্বামীকে অবশ্যই জানান। তাঁর সাথে নিজের হতাশা, বিশন্নতাগুলো ভাগ করে নিন। আপনি হয়ত ভাবছেন, আপনার অনুভূতিগুলো প্রকাশ হয়ে গেলে সবাই আপনাকে অনেক হেয় করবে! অন্যদের সাথে না হোক অন্তত সংগীকে খুলে বলুন মনের কথা! সেই আপনাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করতে পারে।

আত্মসমালোচনা বন্ধ করুন
নিজেকে প্রতি মুহুর্তে সমালোচনা করবেন না। এতে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য আরো খারাপ হতে পারে। আপনি নিজেই হয়ত নিজেকে আরো বিষন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। নিজেকে বিশ্বাস করুন। আপনার জীবনে যা যা ঘটছে তাঁর সবই স্বাভাবিক এবং সব মায়েদের ক্ষেত্রেই সত্যি। তাই নিজেকে হেয় করবেন না বা ছোট, অপারগ ভাববেন না। ভালো থাকা আপনার অধিকার। এ বিষয়ে সচেতন হোন।

চিকিৎসায় ত্রুটি মেনে নেবেন না
আপনি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাচ্ছেন, চিকিৎসাও নিচ্ছেন কিন্তু কোন পার্থক্য টের পাচ্ছেন না। থেমে যাবেন না। ততদিন কাউন্সেলিং এবং অন্যান্য দরকারি চিকিৎসা নিন যতদিন আপনি ভাল বোধ করছেন না। মনে রাখবেন, বিষন্নতা এক প্রকার ব্যাধি। চিকিৎসা নিয়েই আপনি সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসতে পারবেন। তাই আপনার চিকিৎসার কোর্সটি অবশ্যই সমাপ্ত করুন। নিজের যত্ন নিন, নিজেকে ভালবাসুন।



মন্তব্য চালু নেই