নতুন রেলপথ: হাতির জন্য ব্যয় বাড়ছে ৫ হাজার কোটি টাকা

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের গুনদুম সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। তবে এটি হাতি চলাচলের অন্যতম রুট হওয়ায় কিছু স্থানে রেলপথের উচ্চতা বাড়াতে হবে। হাতির সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষ এড়াতে রেলপথের কিছু অংশে বসাতে হবে সেন্সর। এজন্য প্রকল্পটিতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।

দৈনিক বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে নতুন প্রস্তাবটি গত মঙ্গলবার পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বরে প্রকল্পটির ব্যয় চূড়ান্ত করা হয় ১৩ হাজার ২৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর ২০১০ সালের জুলাইয়ে প্রথম দফা অনুমোদনের সময় রেলপথটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

প্রস্তাবে তিনটি বিষয় নতুন যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের রামু ও আশপাশ এলাকা হাতির অভয়ারণ্য। ওই এলাকায় বুনো হাতি প্রায়ই দল বেঁধে চলাচল করে। অনেক সময় হাতি শুঁড় তুলেও পথ চলে। এক্ষেত্রে রেলপথ যাতে হাতির চলাচলে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করে, সেজন্য এমব্যাঙ্কমেন্টের উচ্চতা কিছু স্থানে বাড়াতে হবে।

পাশাপাশি এমব্যাঙ্কমেন্টের নিচে হাতি চলাচলের জন্য রাখতে হবে পর্যাপ্ত খালি জায়গা। এজন্য এমব্যাঙ্কমেন্টের নিচে দুই পিলারের মাঝে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গার প্রয়োজন হবে। এছাড়া ভূমির সমতলে রেলপথে কখনো হাতি এলে ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য রেলপথে বিশেষ ধরনের সেন্সর বসানোর কথা বলা হয়েছে, যাতে কখনো হাতি রেলপথে থাকলে ট্রেনচালক ওই এলাকা অতিক্রমের আগেই তা বুঝতে পারেন। পাশাপাশি হাতির বিষয়টি মাথায় রেখে জমির প্রয়োজন কিছুটা বাড়বে। এতে জমি অধিগ্রহণের ব্যয়ও কিছুটা বেশি হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, প্রকল্প এলাকাটি বুনো হাতির জন্য বিশেষ স্পর্শকাতর। হঠাৎ হাতি লাইনে চলে এলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আবার যেসব এলাকায় রেলপথ উঁচু, তার নিচ দিয়ে হাতির চলাচল যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেটাও লক্ষ রাখা হচ্ছে। এজন্য রেলপথে সেন্সর বসানো ও এমব্যাঙ্কমেন্ট উঁচু করা হবে। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।

বর্তমানে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের আওতাধীন চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। তবে উদ্যোগ সত্ত্বেও কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ আর হয়নি। এছাড়া ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথে যুক্ত হতে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত ট্রেন সংযোগ দরকার। তাই ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে রামু ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার ও রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে।

নতুন প্রস্তাবে প্রকল্প-সহায়তা বাবদ এডিবির কাছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। বাকি অর্থ সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই