নতুন সৌদি প্রশাসনের কাছে গুরুত্ব কমেছে খালেদা জিয়ার!

সফরসঙ্গীদের ভিসা জটিলতায় ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। বলা হচ্ছে, এ জটিলতা কাটলে আজকালের মধ্যে সৌদি আরব যেতে পারেন তিনি। সফরসঙ্গীদের ভিসা জটিলতার সমাধান না হলে আপাতত ওমরাহ পালন নাও হতে পারে তার। বিএনপির বিভিন্ন সূত্র এমনটা নিশ্চিত করেছে।

এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এমিরেটসের একটি বিমানে খালেদা জিয়ার সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল। তবে কোনও কারণ না জানিয়েই তিনি তা বাতিল করেন।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে রাজকীয় মেহমান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই ওমরাহ পালন করে আসছেন খালেদা জিয়া। তার সফরসঙ্গীরাও একইভাবে ওমরাহ পালন করে থাকেন। এ বছরও খালেদা জিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যরা তেমনি ওমরাহ ভিসার জন্য আবেদন করেন। সৌদি সরকার খালেদা জিয়াসহ ছয়জনকে রাজকীয় মেহমান হিসেবে ভিসা অনুমোদন করেন। কিন্তু বিএনপি নেত্রী কমপক্ষে ১০ জনকে রাজকীয় মেহমান করার অনুরোধ জানান। বিষয়টি নিয়ে সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেনদরবার চলছে। ভিসার জটিলতার সমাধান হলে আজকালের মধ্যে তিনি ওমরাহ পালনে যেতে পারেন।

এতে প্রশ্ন দেখা দেয়, সৌদি আরবের কাছে খালেদা জিয়ার গুরুত্ব কি কমে গেল?

বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের পূর্বের সম্পর্কের পালাবদল ঘটেছে। গত এক দশকে সৌদি আরবে কয়েকবার ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটেছে। সুতরাং সেখানে আবেগ রহিত বাস্তবানুগ ও পরিপক্ব পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন ঘটবে, সেটাই স্বাভাবিক।

বিএনপি চেয়াপরাসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর চিকিৎসা সৌদিতে না হওয়া, বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা বন্ধ প্রত্যাহার, সৌদি কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফর- সব মিলিয়ে পরিস্থিতির যে পরিবর্তন হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। সম্প্রতি উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া খবরেও দেখা গেছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক আঙিনায় অনুপ্রবেশে খালেদা জিয়ার অনুরোধ রাখেনি দেশটি।

কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সৌদি আরব তাদের কূটনীতিতে এনেছে বেশ পরিবর্তন। ইয়েমেনের সঙ্গে যুদ্ধ, ইরানের সঙ্গে বিরোধ, আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার- সবমিলিয়ে আগের চাইতে ভিন্ন কৌশলে চলছে দেশটি। শিয়া-সুন্নি বিরোধ আগের তুলনায় অনেক সংঘাতপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যে। সুন্নিপন্থী সৌদি আরবের জন্য বাংলাদেশ এখন তেমন চিন্তার বিষয় নয়। আগে তাদের যে ভরসা বিএনপি এবং জামায়াত দিত বলে জোর অনুমান রয়েছে।

বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুলআজিজের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চলতি বছর জানুয়ারিতে বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশটির শাসন ক্ষমতায় বসেন তার সৎ ভাই সালমান বিন আব্দুলআজিজ। তিনি পশ্চিমা মিত্রদের কাছে পরিচিত ‘তুলনামূলকভাবে উদারপন্থি’ হিসেবে। সনাতন পদ্ধতিতে চলে আসা পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তনকে তিনি প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। যে কারণে খালেদা জিয়ার পরিবারের সঙ্গে যে সম্পর্ক ছিল বলে শোনা যাচ্ছিল সেই তাল কেটে যাওয়াই স্বাভাবিক। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও এসব পরিবর্তন ঘটেছে। বিনা কারণে কোনও দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের মনক্ষুণ্ণ হয় এমন কিছু করতে না চাওয়ার কূটনীতি মেনে চলছে দেশটি।

বাদশাহ আব্দুল্লাহর আমলে খালেদা জিয়া রাজপ্রাসাদে একান্ত বৈঠকের সুযোগ পেলেও বর্তমান শাসকের সঙ্গে তার পরিচয়ও হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদেও বসেছেন নতুন মুখ। ফলে আগের গুরুত্ব না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া প্রধান বিরোধী দলের নেতার পদও খালেদা জিয়ার এখন আর নেই। যে কারণে প্রটোকল অনুযায়ীও তার গুরুত্ব কমেছে। এসব ব্যবধানই খালেদার ওমরাহ পালনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

দলটির অপর এক সূত্র জানায়, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনও ওমরাহ পালনের জন্য ভিসা পাননি। ভিসার জন্য দেরিতে ট্রাভেল ডকুমেন্ট জমা দেওয়ায় তার ভিসা পেতে বিলম্ব হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তারেক রহমান সৌদি আরব আসতে না পারলে আপাতত ওমরা পালনে নাও যেতে পারেন খালেদা জিয়া। তারেক রহমানের সৌদি আরব আসা যখন নিশ্চিত হবে তখনই ওমরাহ পালনে সৌদি যাবেন তিনি। জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ওমরাহ পালনের জন্য কখন তিনি যাবেন তা পরে জানা যাবে।
তবে দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, দলের সিনিয়র অনেক নেতা এখনও কারাবন্দী। মামলা-হামলাসহ নেতাকর্মীরা নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। তাদের রেখে দলের চেয়ারপারসনের ওমরা পালনে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, সোমবার সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে চেয়ারপারসন বলেছিলেন, বুধবার রাতে তিনি ওমরাহ পালনে যেতে পারেন। তবে তা চূড়ান্ত ছিল না।



মন্তব্য চালু নেই