নাটকীয়ভাবে ধরা পড়লো ভয়ঙ্কর এক জঙ্গি দম্পতি

সুনশান এলাকা। মগরার দিকশুই-হয়রা পঞ্চায়েতের এই গ্রামে ডিভিসি খালের পাড়ে দু’কাঠা জমি কিনে একচালা মাটির বাড়ি তৈরি বাস করতো এক দম্পতি। বাঁধের উপর থেকে প্রায় চার ফুট নীচে বাড়িটি। দিনের আলোয় জায়গাটি বোঝা যায় বটে কিন্তু রাতের অন্ধকারে টের পাওয়ার উপায় নেই মোটেও।

দুটি ঘরের বাড়িটি হোগলা পাতার উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা। নেই কোনো জানালা, শুধু দেয়ালে ছোট করে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা। বাড়ির সামনে সামান্য শাক-সবজির চাষ। রয়েছে গবাদি পশুও। হুট করে যাতে কেউ বাড়িতে ঢুকে পড়তে না পারে সে জন্য বাড়ির দেওয়ালের চারিদিকে কাঁটা গাছের ঝোপ। ডিভিসি সেতু পার হয়ে ডানদিকের মোরাম রাস্তা ধরে ৩০০ মিটার মতো গেলেই বাঁদিকে বাড়িটা। আশপাশের বাড়ি বলতে ২০০ মিটার দূরে।

কে জানতো এমন শান্তিপূর্ণ একটি বাড়িতেই বাস করছে এক জঙ্গি দম্পতি। সবাই এই দম্পতিকে চিনতো সুদীপ টুডু এবং তারা নামে। আসলে তারা যে মাওবাদী মোস্ট ওয়ান্টেড নেতা বিকাশ যার আসল নাম মনসারাম হেমব্রম ও তার স্ত্রী ঠাকুরমনি হেমব্রম সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি এলাকাবাসী।

সব জেনেশুনে হুগলির মগরার চাঁপারুই গ্রামের মানুষ ভয়ে কাবু।

২০১১ সালে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যুর পরে পুলিশের হাত থেকে পালাতে জঙ্গলমহল ছেড়ে কয়েক বছর ধরে এই চাঁপারুইতেই নাম-ধাম বদলে থাকতে শুরু করেছিল বিকাশ।

গত শনিবার সকালে কলকাতায় স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে গ্রেফতার হয় দু’জন। যদিও চাঁপারুইয়ে সুদীপ-তারার পড়শিদের দাবি, পুলিশ তাদের এখান থেকেই ধরে নিয়ে যেতে দেখেছে।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এ খবরে জানা যায়, যে বাড়িতে মাওবাদী দম্পতি থাকত সেখান থেকে একটি একে ৪৭ রাইফেল, কিছু কার্তুজ এবং কয়েকটি জংলা পোষাকও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় মগরার এই এলাকাকেই পুলিশের নাগাল এড়াতে বেছে নিয়েছিল ওরা।

তবে বিগত কয়েক বছর ধরে একসঙ্গে বসবাস করেও তাদের সম্পর্কে কিছুই টের পায়নি এলাকাবাসী। সেখানকার এক বাসিন্দা সুনীল কিস্কু বলেন, মানুষের সঙ্গে ওরা খুব একটা মেলামেশা করতো না বটে কিন্তু বাসিন্দাদের সাথে কোনও খারাপ ব্যবহারও করতো না। তারা বিশ্বজিৎ পালের জমিতে ক্ষেত মজুরের কাজ করতো। এত সাধারণ মানুষ যে এতবড় জঙ্গিনেতা তা আমরা জানতেই পারিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা জমির মালিক বিশ্বজিৎ পালের কথায়, সুদীপের বৌ তারা কয়েক মাস ধরেই এখানে কাজ করছিলো। কিন্তু আচরণে কিছুই বোঝা যায়নি। এখন সব শুনে ভয় লাগছে। পরে আমাদের উপর না আবার কোনও আঘাত হানে।



মন্তব্য চালু নেই