নানা তৎপরতা সাকা-মুজাহিদকে ঘিরে

যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রায়কে বিতর্কিত করতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানান ধরনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ফাঁসির দণ্ড থেকে বাঁচানোর জন্য ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের একজন এমপি। বিচারের সব ধরনের শুনানি শেষে বিশেষ উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি পাঁচজন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করতে না পেরে এখন ভিডিও বার্তা প্রচার করা হচ্ছে অনলাইনে। এসবের কপি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ও সংস্থার কাছে।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্যতার বিবেচনায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল থেকে ইস্যু করা হয়েছে বিতর্কিত বিবৃতি। সবকিছু একসঙ্গে করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে ‘জাস্টিস ফর চৌধুরী’ নামে তৈরি করা একটি ফেসবুক পেইজ থেকেও। এই পেইজে সাকাকে ‘নিরীহ’ ও ‘নিরপরাধ’ ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের রিভিউ পিটিশনের পর থেকেই নতুন করে অপচেষ্টা শুরু হয়। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রতিনিধিদের প্রধান জিন ল্যাম্বার্ট। চিঠিটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইসমত জাহানকে দেওয়া হয়। পরে রাষ্ট্রদূত তা ঢাকায় পাঠিয়ে দেন।
‘জরুরি : আলী আহসান মুজাহিদের আসন্ন ফাঁসি’ শীর্ষক চিঠিতে ল্যাম্বার্ট লিখেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের চেয়ারম্যান হিসেবে এই ফাঁসির দণ্ডাদেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হিসেবে ল্যাম্বার্ট বলেছেন, ‘গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে এই কেসে প্রয়োজনীয় সব ধাপ অনুসরণ করা হয়নি এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও বিচারিক ধারার বিপরীতে এর অবস্থান।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, জিম ল্যাম্বার্ট যে সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করেন সেই ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে গত বছর রেজুলেশন পাস করে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সমর্থন দিয়েছে এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে জামায়াতকে বিএনপির জোট থেকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে, ট্রাইব্যুনালের মামলার রায় ও আপিল শেষে রিভিউয়ের আগে পাকিস্তানের কয়েকজন সাক্ষী নিয়ে আসার আবেদন জানান সাকা চৌধুরীর আইনজীবী। তারা হলেন পাকিস্তানের স্থপতি মুনিব আরজুমান্দ খান, পাকিস্তানের ডন গ্রুপের চেয়ারম্যান আমবর হারুন সায়গল, পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি, ভিকারুননিসা নূনের নাতি রিয়াজ আহমেদ নূন এবং পাকিস্তানের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মোহাম্মদ মিয়া সুমরো। তাদের হাজির করার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর এখন ‘জাস্টিস ফর চৌধুরী’ নামের একটি ফেসবুক পেইজে তাদের ভিডিও বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যেই সেখানে ভিডিওতে পাকিস্তানের সাবেক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মোহাম্মদ মিয়া ও আমবর হারুন সায়গল এর ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তারা দাবি করছেন, সাকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যেসব অপরাধের অভিযোগ ইতিমধ্যেই প্রমাণ হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। এর আগে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নামের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে এক বিতর্কিত বিবৃতিতে দাবি করা হয়, সাকা ও মুজাহিদের ফাঁসির রায় দিয়ে অবিচার করা হয়েছে। এখন রিভিউয়ে ফাঁসি বহাল থাকলে তা ঠেকানোর আর কোনো আইনি ব্যবস্থা থাকবে না। ওই বিবৃতিতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ডের জন্য বিচারও দাবি করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই