নিখোঁজ হওয়া মেয়ের করুণ পরিণতি, রহস্যের পর্দা সরল ৭ বছর পর

হাওয়ায় যেন মিলিয়ে গিয়েছিল মেয়েটা। মার্কিন পুলিশ থেকে তদন্তভার গড়ায় এফবিআই-এর হাতে। তবু এতদিন খোঁজ মেলেনি মেয়েটির। অবশেষে, এক চাঞ্চল্য ফেলে দেওয়া স্বীকারোক্তি বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে সকলে। এমন পরিণতির কথা জেনে শিউরে উঠছেন সকলে।

মেয়েটির আশায় আজও বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন তার মা। যদি, হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটা এসে বাড়ির সামনে হাজির হয়। তবে, তিনি বোঝেন তাঁর মেয়ের আর জীবিত অবস্থায় ফেরার কোনও সম্ভাবনা নেই। মা-য়ের মন। অকালে সন্তান হারানো শূন্যতা ভরাট করবেন কী করে?

৭ বছর আগে বান্ধবীর সঙ্গে ছুটি কাটাতে আমেরিকার সাউথ ক্যারোলিনার মির্টলি বিচে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল বছর সতেরোর ব্রিটানি ড্রেস্কেল। কিন্তু, এরপর তার আর কোনও খোঁজ পায়নি তার পরিবার। ২০০৯ সালের ২৫ এপ্রিল হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে শেষবার ধরা পড়েছিল ব্রিটানির ছবি। বাবা-মা-র অমতেই বান্ধবীর সঙ্গে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল নিউ ইয়র্কের রোচেস্টারের বাসিন্দা ব্রিটানি।

১৭ বছরের মেয়েটা এমনভাবে নিখোঁজ হয়েছিল যে, তার কোনও চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যায়নি এতদিন। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল ব্রিটানি। ঘটনার তদন্তভার নেয় এফবিআই। কিন্তু, তারাও এতদিন কোনও খোঁজ বের করতে পারছিল না।

কিন্তু, খুনের অভিযোগে ২৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত টাকওয়ান ব্রাউন নামে এক অপরাধীকে সম্প্রতি অন্য এক ঘটনায় জেরা করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ব্রিটানি ড্রেস্কেলের চূড়ান্ত পরিণতির কাহিনি। যা শুনে শিউরে উঠেছেন খোদ এফবিআই-এর গোয়েন্দারা। টাকওয়ান জানিয়েছে, ব্রিটানিকে অপহরণ করে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এর পর তাকে মাথায় গুলি করে খুন করে কুমির ভরা জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়।

কীভাবে টাকওয়ান জানলেন এই কাহিনি? এই প্রশ্নের উত্তরে টাকওয়ান জানিয়েছ, মির্টলি বিচ থেকে অপহরণ করে ব্রিটানিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ম্যাককেলানাভিল এলাকায় একটি ‘ট্র্যাশ হাউসে’। টাকওয়ান জানিয়েছে এই ধরনের ‘ট্র্যাশ হাউস’-গুলিতে আগ্নেয়াস্ত্র, অর্থ এবং মাদক লুকিয়ে রাখা হয়।

এমনই এক ট্র্যাশ হাউসে ডা’শন টেলর নামে ১৮ বছরের এক কিশোর এবং তার বন্ধুদের ব্রিটানির উপর শারীরিক নির্যাতন নিপীড়ন চালাতে সে দেখেছিল। ডা’শন-এর বাবা শন টেলরকে অর্থ দিতে গিয়েছিল টাকওয়ান। এমন সময় ব্রিটানিকে পালাতেও দেখেছিল সে। কিন্তু, ব্রিটানি পালাতে পারেনি। ডা’শন এবং তার বন্ধুরা তাকে ধরে ফেলেছিল। মাথায় বন্দুক ধরে ব্রিট্টানিকে ভিতরেও নিয়ে যেতে দেখেছিল টাকওয়ান।

এরপর ভিতর থেকে সে দু’বার গুলির আওয়াজ পায়। পরে একদিন ওই ট্র্যাশ হাউসেই ব্রিট্টানির দেহ প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে টাকওয়ান। এরপর আর ব্রিটানির কী হয়েছিল তা আর জানতে পারেনি সে। যদিও, টাকওয়ানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে সেই ট্র্যাস হাউসে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালায় এফবিআই। কিন্তু, ব্রিটানির কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

তবে, এলাকার মানুষদের দাবি, ব্রিটানির দেহ কুমিরসঙ্কুল জলাশয়ে ফেলে দিয়েছিল ডা’শনরা। এফবিআইও টাকওয়ানের দেওয়া তথ্যে বিশ্বাস রাখছে কারণ, ওই ট্র্যাশ হাউসেই ৭ বছর আগে শেষবার ব্রিটানির মোবাইলের লোকেশন পাওয়া গিয়েছিল।

জর্জটাউন কান্ট্রি জেলের আর এক বন্দিও এফবিআই-কে জানিয়েছে, তারই নির্দেশে ডা’শন টেলররা মির্টলি বিচ থেকে ব্রিটানিকে অপহরণ করে ম্যাককেলানাভিলে-তে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, সে যাওয়ার আগেই ব্রিটানি খুন হয়ে যায়।

ডা’শন টেলর এই মুহূর্তে ‘ম্যাকডোনাল্ড’ রেস্তোরাঁয় ডাকাতির মামলায় জেলে বন্দি। বর্তমানে তার বয়স ২৫ বছর। ব্রিটানি অপহরণ, শারীরিক নির্যাতন এবং খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ডা’শনের যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে।-এবেলা



মন্তব্য চালু নেই