নিজামীর রিভিউ আদেশ বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকার শীর্ষে

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ (পুনঃবিবেচনা) এর আদেশ বৃহস্পতিবার। নিজামীর রিভিউ মামলাটি আদেশের জন্য সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে কার্যতালিকার এক নম্বরে থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্ট সূত্র। তবে সাময়িক অসুবিধার জন্য সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে মামলার তথ্যটি আপলোড করা যাচ্ছে না বলেও জানান তারা।

বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ রিভিউ আবেদনের আদেশের জন্য আগেই ধার্য রয়েছে। ওই বেঞ্চের অন্যান্য বিচারপতিরা হলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আগামী ৫ মে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন এই বেঞ্চ।

মঙ্গলবার সকালে আদালতের শুনানিতে নিজামীর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। নিজামীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এসএম শাহজাহান, তাদেরকে সহযোগিতা করেন নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমমন এবং ব্যারিস্টার রাজ্জাকের ছেলে এহসান এ সিদ্দিকী।

মঙ্গলবার সকাল থেকে নিজামীর পক্ষে খালাস চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এরপর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। মাঝে আধা ঘণ্টার বিরতি দিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৫ মে দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

নিজামীর রিভিউ (পুনঃবিবেচনা) এর শুনানির জন্য ১০ এপ্রিল দিন ঠিক করেন। ওই দিন আবারও সময় আবেদন করার পরে আবারও শুনানির দিন পিছিয়ে ৩ মে দিন নির্ধারণ করেন আদালত। গত ৩ মে মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন।

এর আগে গত ২৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা রিভিউ আবেদন করেন। রিভিউতে ৭০ পৃষ্ঠার মূল রিভিউর আবেদনের সঙ্গে মোট ২২৯ পৃষ্ঠার নথি পত্রে দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৬টি (গ্রাইন্ড) যুক্তি তুলে ধরা হয়।

তার পরের দিন ৩০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ নিজামীর রিভিউ আবেদন দ্রুত শুনানির জন্য দিন ধার্যে আবেদন দাখিল করে। গত ১০ এপ্রিল বিষয়টি ৩ মে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

রিভিউ নিষ্পত্তির পর এখন নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ নিষ্পত্তির আগে তার দণ্ড কার্যকর করা যাবে না। তবে রিভিই আর রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে নিজামীর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা না চায় তাহলে কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকর করবে। গত ৬ জানুয়ারি বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উস্কানিদাতাসহ মানবতাবিরোধী তিন অপরাধের দায়ে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিলে।

গত ১৫ মার্চ আপিল মামলাটির ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এর পর পরই মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পরদিন ১৬ মার্চ সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে থাকা নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়। এর আগে বুদ্ধিজীবী নিধনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।



মন্তব্য চালু নেই