নিজের স্ত্রীকে ছয়তলার ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে হত্যা

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল দক্ষিণপাড়া এলাকায় ছয়তলার ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার পর গুরুতর আহত এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাত্রী স্বর্ণা (১৯) মারা গেছেন। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) স্বর্ণার স্বামী নাজমুল হোসেন বিদ্যুৎকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়।

যৌতুকের টাকা ও স্বর্ণালংকার না দেওয়ায় স্বর্ণাকে তাঁর স্বামী ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে স্বর্ণার পরিবারের সদস্যরা।

পরিবারের সদস্যরা জানান, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুসরদী গ্রামের সুজল মণ্ডলের মেয়ে স্বর্ণা। আট মাস আগে একই জেলার নাজমুল হোসেন বিদ্যুতের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে মাতুয়াইল দক্ষিণপাড়ায় আবদুর রহমানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন স্বর্ণা। ঘরসংসারের পাশাপাশি রাজধানীর উত্তরা ক্যাম্পাসে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করতেন তিনি। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে স্বর্ণা ছিলেন মেজ।

স্বর্ণার মা কাজলী বেগম জানান, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিসহ নানা কারণে স্বর্ণার ওপর নির্যাতন করতেন স্বামী বিদ্যুৎ। একপর্যায়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎও করতে দিতেন না। গত মঙ্গলবারে বিদ্যুৎ কথা বলার জন্য স্বর্ণাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যান। সেখানেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে বিদ্যুৎ তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেন।

ওই ঘটনার পর কাজলী বেগম যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। ঘটনার দিন ওই মামলাতেই স্বর্ণার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বর্ণার বড় ভাই মো. আলামিন বলেন, “গত ১১ এপ্রিল (মঙ্গলবার) আমার মা স্বর্ণার শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্বর্ণার স্বামী বিদ্যুৎ বাসায় আসেন। স্বর্ণা তাঁকে খাওয়া-দাওয়া করতে বলেন। আমার মাও বিদ্যুৎকে খেয়ে নিতে বলেন। কিন্তু বিদ্যুৎ জানান, তিনি খাবেন না। এরপর বিদ্যুৎ স্বর্ণাকে বলেন, ‘আসো একটু ছাদে যাই।’ তখন স্বর্ণা বলে, ‘এখন তো রোদ। ছাদে গরম। তাই সন্ধ্যার সময় ছাদে যাব। এখন না।’ তখন স্বর্ণার স্বামী তাঁকে বলেন, ‘এখন আমার যেতে মন চাচ্ছে, আর তুমি এখন যাবে না।’ মেয়ে ও জামাইয়ের এমন কথাবার্তা শুনে তখন আমার মা বলেন, ‘ঠিক আছে দুজন ছাদে যাও। যদি গরম লাগে তবে আবার নিচে চলে এসো।’ এরপর আমার বোনকে ছাদে নিয়ে গিয়ে ছয়তলা থেকে নিচে ফেলে দেন তাঁর স্বামী।”

ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার পর লোকজন স্বর্ণাকে আহতাবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

আলামিন বলেন, ‘হাসপাতালে স্বর্ণা পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেয় যে সে ছাদের রেলিংয়ের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন তাঁর স্বামী বিদ্যুৎ পায়ের দুই হাঁটুর কাছে ধরে তাঁকে উল্টে ছাদ থেকে ফেলে দেন।’

পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্বর্ণাকে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাতদিন পর আজ সকাল ৯টা ২১ মিনিটে ওই হাসপাতালে স্বর্ণার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে যায়।



মন্তব্য চালু নেই