নিরাপত্তা সংকটে চেকপোস্টের পুলিশ সদস্যরা

রাজধানীর বেশিরভাগ পুলিশ চেকপোস্টগুলোয় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তা সংকটে রয়েছে। দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরা নিজেদের অরক্ষিতই মনে করেন। গত কয়েকদিন রাতে রাজধানীর শেওড়াপাড়া, ফার্মগেট, বিজয়স্মরণী, নিউমার্কেটসহ আরও কিছু চেকপোস্টে দেখা গেছে, সতর্কাবস্থায় সন্দেহভাজন যানবাহন, যাত্রী তল্লাশির চিত্র। যদিও এই তল্লাশি চালনা করতে গিয়ে কোনো কোনো পুলিশ সদস্য খানিকটা ইতস্ততা বোধ করেন। কোনো রকমে যাত্রীর দেহে, ব্যাগে হাতবুলিয়ে ছেড়ে দেন ইতস্ততাবোধকারী পুলিশ।

কেন এই ইতস্ততা- প্রশ্ন করা হলে বৃহস্পতিবার রাতে নিউমার্কেট এলাকার চেকপোস্টে কর্তব্যরত একজন পুলিশ নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আসলে গুলশান, কিশোরগঞ্জ, কল্যাণপুরের ঘটনার পর থেকে কেমন যেন ভয় লাগে। সঙ্গে অস্ত্র থাকে, তারপরও ভয় তাড়াতে পারি না। চেকপোস্টে আমরা যারা দায়িত্ব পালন করছি, আমরা সংখ্যায়ও কম থাকি। বিপজ্জনক কিছু হলে ঠেকাতে পারব বলে ভরসা পাই না।

গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর চেকপোস্টগুলোতে অনগার্ড দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী চেকপোস্টগুলোতে পুলিশ সদস্যরা যখন সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করবেন, তখন তাদের পেছনে আরও একজন পুলিশ সদস্য আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে থাকবেন এবং আরও পেছনে অন্য একজন পুলিশ সদস্য লাঠি বা অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকবেন। যদি তল্লাশির সময় সন্দেহভাজনদের কেউ পালানোর বা হামলার চেষ্টা করে, তাহলে পেছনে থাকা পুলিশ সদস্য তাকে গুলি করতে পারবেন। কেউ যদি সামনে থাকা পুলিশ সদস্যদের এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়, তবে তাকে যে কোনোভাবে আটকাবেন শেষে থাকা লাঠিধারী পুলিশ সদস্য।

রাজধানীর চেকপোস্টগুলোয় দেখা গেছে, অন গার্ড পদ্ধতি বুলি হিসেবেই রয়ে গেছে। সংখ্যায় উপযুক্ত পরিমাণ সদস্য না থাকায় অন গার্ড পদ্ধতি কার্যকর হচ্ছে না। উল্টো নিজেরা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে থাকেন। প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে দেখা হয় না, কেবল সন্দেহভাজন মনে হলে তবেই কোনো রকমে জিজ্ঞাসাবাদ-তল্লাশি করা হয়।

২০১৫ সালের শেষ দিকে চেকপোস্টে পরপর দুইটি হামলার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর গাবতলীতে দায়িত্ব পালনের সময় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে পুলিশের একজন এএসআই নিহত হন। রাত পৌনে ৯টায় পুলিশের চেকপোস্ট তল্লাশির সময় এ হত্যাকা- ঘটে। এরপরই সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের একটি চেকপোস্টে তল্লাশির সময় ছুরি মেরে শিল্প পুলিশের একজন কনস্টেবলকে হত্যা ও চারজনকে জখম করে দুর্বৃত্তরা।

গত ১ জুলাই গুলশান আর্টিজান হামলার পর রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্টের সংখ্যা। পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬টি বিভাগকে অর্ধশতাধিক জোনে ভাগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শহরজুড়ে র‌্যাব-পুলিশের ৩ শতাধিক চেকপোস্টে যানবাহন ও জনসাধারণকে তল্লাশি করা হচ্ছে।

গত বুধবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর বিজয় স্মরণীর চেকপোস্টে একাধিক পুলিশ সদস্য দেখা গেলেও, চেকপোস্টের কিছুটা দূরে একজন পুলিশ সদস্য একটি সিএনজি দাঁড় করিয়ে চেক করতে দেখা যায়। তার সহকর্মীরা দূরে। তাদেরই একজনকে দুর্বৃত্ত ঠেকানোর প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আপনাদের মতোই আমাদের চাকরিতে ঝুঁকি আছে। তবে সত্য হলো, কেউ অঘটন ঘটাতে চাইলে সে অনুপাতে আমাদের তাৎক্ষণিক প্রস্তুতি আসলেই নেই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, আমাদের কেবল চেকপোস্ট আছে, তা নয়। টহল গাড়ি, হেঁটে টহলসহ বেশকিছু ধরনের নিরাপত্তা কৌশল আছে। চেকপোস্টে পুলিশ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, সবসময় সবাইকে চেক করতে হয় বিষয়টা এমন নয়, সময় বুঝে বিভিন্ন কৌশল মানা হয়। নিরাপত্তা দেয়ার বেশকিছু প্রকারভেদ আছে। এজন্য চেকপোস্টে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ তেমন নেই।



মন্তব্য চালু নেই