নিরামিষভোজী হলে শরীরে আসবে যেসব পরিবর্তন

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সব উপদেশের সাথেই জুড়ে দেওয়া হয় একটি কথা- “বেশি করে তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খান”। অনেকেই ভাবেন মাংস খাওয়া বাদ দিয়ে নিরামিষভোজী হয়ে যাবেন। কিন্তু নিরামিষভোজী হওয়া বলাটা যতো সহজ, করাটা তত সহজ নয়। নিরামিষভোজী হতে হলে খাদ্যভ্যাসে আমূল পরিবর্তন আনতে হয়। এর পাশাপাশি সারাজীবন আমিষে অভ্যস্ত আপনার শরীরটাতেও আসবে বিভিন্ন পরিবর্তন। এসব পরিবর্তনের কিছু ভালো, কিছু আবার আপনার জন্য কষ্টকর হতে পারে। জেনে নিন নিরামিষভোজী হতে গেলে আপনার শরীরে আসতে পারে যেসব সম্ভাব্য পরিবর্তন।

ওজন কমে যেতে পারে
নিরামিষ খাবারে বেশি ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে বলে অল্প খাওয়ার পরেই পেট ভরা লাগে। এছাড়াও তারা খাবারের ব্যাপারে বেশি মনোযোগী থাকেন বলে তাদের খাওয়া পরিমিত হয়। ফলে ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে।

বারবার টয়লেটে ছুটতে হতে পারে
হাই-ফাইবার খাদ্যভ্যাস আপনার অন্ত্রকে পরিষ্কার করে ভেতর থেকে। এসব ফাইবার বেশি পানি ধারণ করতে পারে। এ কারণে মলত্যাগের প্রক্রিয়াটাকে এরা সহজ করে দেয়। শুধু তাই নয়, বেশিবারও টয়লেটে যেতে হতে পারে আপনাকে।

আপনার বারবার ক্ষুধা লাগতে পারে
নিরামিষ খাবার নামে আপনি শুধু হালকা শাকপাতা খেয়েই ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করেন তবে ব্যর্থ হবেন। দেখবেন একটু পরে পরে ক্ষুধা লাগছে। এর অর্থ হলো আপনি যথেষ্ট আমিষ খাচ্ছেন না। হ্যাঁ, প্রাণীজ আমিষ খাবেন না বটে, কিন্তু উদ্ভিজ্জ আমিষ খাওয়া উচিৎ। খেতে পারেন হোল গ্রেইন অথবা শিমজাতীয় খাবার।

আপনার গ্যাসের সমস্যা হতে পারে
শিমজাতীয় খাবার, বাঁধাকপি এসব খাবার বেশি খাওয়া শুরু করলে গ্যাসের সমস্যায় ভুগতে পারেন। পেট ফাঁপতে পারে কারও কারও। বিশেষ করে কাঁচা সবজি খেলে আপনার পেটে অস্বস্তি হতেই পারে। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পুরো কাঁচা না খেয়ে সেদ্ধ করে নিন সবজি, ভালো করে চিবিয়ে খান এবং স্যুপজাতীয় খাবার খেতে পারেন।

গাট ব্যাকটেরিয়াতে পরিবর্তন আসতে পারে
গাট মাইক্রোব বা অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়ার মাঝে পরিবর্তন আসবে যদি আপনি খাদ্যভ্যাসে এমন বড় পরিবর্তন আনেন। ভেজিটেরিয়ানদের গাট ব্যাকটেরিয়াগুলোকে সাধারণত ভালো বলেই ধরা হয়।

আপনি শরীরে বেশি এনার্জি পাবেন
প্রসেসড খাবার, চিনি এগুলো আপনার শরীরের এনার্জি কমিয়ে দেয়। এগুলো বাদ দিয়ে যখন নিরামিষ খাওয়া শুরু করবেন তখন আপনার এনার্জি লেভেল দ্রুত বেড়ে যাবে। হালকা এসব খাবার খেলে আপনার জীবনে স্ট্রেস এবং দুশ্চিন্তার পরিমাণও কমে আসবে। আপনি থাকবেন আগের চাইতে ভালো মেজাজে।

আপনার হাড় ভালো থাকবে
কিছু গবেষণায় দেখা যায় ভেগানদের হাড় আমিষভোজীদের চাইতে শক্তিশালী হয়। তাদের খাবারে এসিড কম থাকায় হাড়ের মিনারেল ডেনসিটি বেশি হতে পারে। তবে এর ব্যাপারে খুব বেশি গবেষণা নেই।

কিছু কিছু রোগের ঝুঁকি কমে যায়
ভেগান ডায়েট কমায় ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি। ফল ও সবজিতে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টকে এর জন্য ধন্যবাদ দেওয়া যায়। লো ক্যালোরি এবং হাই নিউট্রিয়েন্টের সুবিধাটা পাওয়া যায় এই খাদ্যভ্যাস থেকে।

কিন্তু ওজন বাড়তেও পারে

আপনি যদি ফ্রেশ খাবার না খেয়ে বিভিন্ন প্রসেসড “ভেগান” অথবা “ভেজিটেরিয়ান” প্রোটিন বার, ড্রিঙ্ক ইত্যাদি খান তাহলে আপনার বেশি ক্যালোরি খাওয়া হবে। এর ফলে বাড়তে পারে ওজন।

আপনার ক্লান্ত লাগতে পারে
আগেই বলা হয়েছে, খাদ্য গ্রহনে ভারসাম্য রাখতে হবে। ভেগান ডায়েট অনুসরণ করার পর যদি খুব ক্লান্ত লাগতে থাকে তাহলে এটা হতে পারেন ভিটামিন বি ১২ এর অভাব। আমরা সাধারণত প্রাণীজ আমিষ থেকে এটা পাই। নিরামিষ খাওয়া শুরু করলে এর অভাব দেখা দিতে পারে। আপনি সয়া মিল্ক পান করতে পারেন অথবা এই ভিটামিনের ট্যাবলেট গ্রহণ করতে পারেন।

পুষ্টির অভাবে ভুগতে পারেন
ভিটামিন বি ১২ এর পাশাপাশি আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিতে পারে আপনার। কারণ প্রাণীজ প্রোটিনের চাইতে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন শরীরে শোষিত হয় দেরীতে। এ কারণে খাবারে যথাসম্ভব বৈচিত্র্য রাখা জরুরী। ভিটামিন সি আছে এমন খাবার খেলে শরীরে আয়রন শোষিত হয় বেশি। প্রতিদিন সূর্যের আলোয় কাটান ১০ মিনিট সময়।

খেলাধুলার ক্ষমতা কমে যেতে পারে
অ্যাথলিটরা নিজেদের পারফর্ম্যান্সে ঘাটতি লক্ষ্য করতে পারেন। আপনি যদি ভারসাম্য বজায় রেখে খাওয়া দাওয়া না করেন, কোনো পুষ্টির অভাব যদি থাকে তবে অবশ্যই আপনার শক্তি কম থাকবে। বিশেষ করে আয়রন এবং জিঙ্কের ডেফিসিয়েন্সি বেশ খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে অ্যাথলিটদের ওপর। আর ব্যায়ামের পরে পেশীর শক্তি ফিরে আসতেও অনেক বেশি সময় আসতে পারে।

নিরামিষভোজী হতে গেলে তা করতে হবে সঠিক নিয়মে। খাদ্যভ্যাসে আমিষের অভাব পূরণ করার জন্য থাকতে হবে সূক্ষ্ম ভারসাম্য, যা অনেকেই রাখতে পারেন না এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভেগান বা ভেজিটেরিয়ান ডায়েটও অস্বাস্থ্যকর হতে পারে যদি আপনি সঠিক নিয়মে খাওয়াদাওয়া না করেন। সুতরাং খাদ্যাভ্যাসে রাখুন ভারসাম্য, আর উপভোগ করুন নিরামিষভোজী হবার দারুণ উপকারিতাগুলো।



মন্তব্য চালু নেই