নির্জন স্থান হিসেবে ওসমানের বাড়ি ভাড়া নেয় জঙ্গিরা

অনেকটা নির্জন স্থান হিসেবেই জেএমবি’র সদস্যরা গাজীপুরের হাড়িনাল পাতারটেক এলাকার ওসমান আলীর বাড়ি ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। বাড়ির পূর্ব পাশের রাস্তা থেকে সীমানা প্রাচীর পর্যন্ত এক থেকে দেড়শত ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নেই। ফাঁকা স্থানটিতে কাঠের গাছের মধ্যে জড়ানো ঘাস ও লতাপাতা বাড়িটিকে কিছুটা আড়াল করেছে। উত্তর পাশেও অনেকটা ফাঁকা। আর পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশজুড়ে রয়েছে বেশ নিচু জায়গা। সব মিলিয়ে বাড়িটি জঙ্গিদের জন্য নির্জন স্থান বললেই চলে।

ওই বাড়িতে বসেই জেএমবির ঢাকা বিভাগীয় সমন্বয়কারী ফরিদুল ইসলাম আকাশের মাধ্যমে সারা দেশের জেএমবি সদস্যরা সংগঠিত হচ্ছিল।

বাড়ির মালিক হিসেবে পরিচিত প্রফেসর ওসমান আলীর ছাত্র হিসেবেই অভিযানে নিহত জঙ্গি সদস্যদের জানতেন অন্য ভাড়াটিয়ারা।

গত দুই মাস আগে ওসমান আলী ছাত্র হিসেবে ৪ যুবককে ফ্লাট ভাড়া দেন। তাদের বয়স ১৫ থেকে ২২ এর মধ্যে হবে। তবে তারা যে জঙ্গি সদস্য ছিল ভাড়াটিয়ারা কিছুই বুঝতে পারেননি।

এমনকি আশেপাশের বাড়ির লোকজনও তাদের বিষয়ে কিছুই বুঝতে পারেননি। এমনটাই বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে ৩শ ফুট দূরত্বের অপর একটি দোতলা বাড়ির মালিকের ছেলে রিয়াদ হাসান।

রিয়াদ জানান, মাঝে মধ্যে এক দুইজনকে চায়ের দোকানে দেখা গেলেও তারা চুপচাপ চা পান করে চলে যেত। কারো সঙ্গে তেমন কথা বলত না। জিজ্ঞাসা করলে ওসমানের বাড়ির দুই তলার ফ্লাটে থেকে কলেজে পড়াশোনা করার কথা জানাত। এর চেয়ে বেশি কথা বললে এড়িয়ে যেত তারা।

শনিবার গাজীপুরের দুইটি বাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হাড়িনাল লেবুবাগান এলাকার ব্যবসায়ী আতাউর রহমানের বাড়িতে আস্তানা করা হয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভোর থেকে পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করে।

সেখানে র‌্যাব পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে জঙ্গি সদস্যরা তাদের উপর গুলি চালায়। পরে র‌্যাব-পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে রাশেদুল ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলাম নামে দুই জঙ্গি নিহত হয়।

দুপুর দেড়টার দিকে র‌্যাবের মিডিয়া বিভাগের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, রাশেদুল গাজীপুরের ডুয়েট ও তৌহিদুল এইচএসসি পাশ করেছে। তারা দুইজন ওই বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত। তাদের দুইজনেরই বাড়ি নরসিংদী জেলায়।

ওই স্থান থেকে একটি ল্যাপটপ, একটি একে-২২ রাইফেল, একটি পিস্তল, ৫টি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।

অপরদিকে, হাড়িনাল নোয়াগাঁও পাতারটেক এলাকার প্রফেসর ওসমান আলীর বাড়ি হিসেবে পরিচিত একটি দোতলায় অভিযান চালায় পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। পুলিশের সোয়াত ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা এতে যোগদান করে।

পুলিশ জঙ্গিদের আত্নসমর্পণ করতে বললে তারা পুলিশের উপর গুলি চালায়। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে গুলি পাল্টা গুলি চলতে থাকে। এসময় জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ১৩/১৪টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পুলিশের গুলিতে জেএমবি ঢাকা বিভাগীয় সমন্বয়কারী ফরিদুল ইসলাম আকাশসহ ৭ জঙ্গি নিহত হয়। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এছাড়া ওই বাড়ি থেকে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রাত ৯ টার দিকে নিহত ৯ জঙ্গির মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।



মন্তব্য চালু নেই