নির্বাচন থেকে ট্রাম্পকে সরিয়ে দিতে চান হিলারি

নিউইয়র্ক রাজ্যে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচন ১৯ এপ্রিল। এখানে ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডেলিগেট সংখ্যা ২৯১। রিপাবলিকান পার্টির ডেলিগেট ৯৫। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেমক্র্যাটিক পার্টির হিলারি পেয়েছেন ১৭৭৪ এবং বার্নি স্যান্ডার্সের ভাগ্যে জুটেছে ১১১৭।

অপরদিকে, রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৭৪৩ এবং টেড ক্রুজ পেয়েছেন ৫৩২। অর্থাৎ নিউইয়র্কের নির্বাচনের পর মোটামুটি স্পষ্ট হবে কে হচ্ছেন দলীয় প্রার্থী। ডেমক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পেতে হলে ২৩৮৩ ডেলিগেট লাগবে। অপরদিকে, রিপাবলিকান পার্টির প্রয়োজন ১২৩৭ ডেলিগেট।

দলীয় বাছাইয়ে নিজের আসন পোক্ত করতে নিউইয়র্ক সিটির প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় হানা দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা। বিশেষ করে ডেমক্র্যাটিক পার্টি থেকে মনোনয়ন লাভের দৌড়ে এগিয়ে থাকা হিলারি ক্লিন্টন সবচে’ বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নিজের ভোট ব্যাংক অটুট রাখার লক্ষ্যে।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সও চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন স্থান। অপরদিকে, নিজের বাড়ি থেকে ৪ মাইল দূরত্বে অবস্থিত গ্রাউন্ড জিরোতে নির্মিত ৯/১১ মিউজিয়ামে কখনোই যাননি রিপাবলিকান পার্টি থেকে এগিয়ে থাকা বহুল আলোচিত/সমালোচিত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সেই ট্রাম্পও ওই মিউজিয়াম পরিদর্শন করেছেন চলতি সপ্তাহে। শুধু তাই নয়, নগদ এক লাখ ডলারের অনুদান প্রদানও করেছেন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজও ভোট চাচ্ছেন নিউইর্কবাসীর কাছে। অর্থাৎ উভয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় প্রার্থীগণের নিদ্রা হারাম হয়েছে নিউইয়র্কে রাজ্য প্রাইমারির কারণে।

সর্বশেষ ১১ এপ্রিল সকালে হিলারি ক্লিন্টনকে দেখা গেল বাংলাদেশি তথা দক্ষিণ এশিয়ানদের রাজধানী হিসেবে খ্যাত জ্যাকসন হাইটসে। জ্যাকসন ডাইনারে তিনি বেশ কিছু সময় কাটান স্থানীয় রাজনীতিক এবং কম্যুনিটি লিডারদের সাথে। এ সময় হিলারি ক্লিন্টন কঠোর সমালোচনা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের। হিলারি বলেন, ‘এই এলাকার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প বহুজাতিক সমাজ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করছেন। ইমিগ্র্যান্টদের সম্মান জানাতে দ্বিধা করছেন। এরচেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে।’

হিলারি বলেন, ‘রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষে থাকা থাকা এই ব্যক্তির মতামত-মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধ ও চেতনা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এদেশের জনগণের মান-মর্যাদা এবং নিরাপত্তাকে গুরুত্বহীন করা হচ্ছে। আমি এমন ব্যক্তি (ট্রাম্প)’র বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।’

পাশেই বসা স্থানীয় কংগ্রেসম্যান (ডেমক্র্যাট) যোসেফ ক্রাউলি হিলারিকে অবহিত করেন, ‘এখানকার ইমিগ্র্যান্টরা ইতোমধ্যেই উপলব্ধিতে সক্ষম হয়েছেন যে, ট্রাম্প তাদেরকে অবজ্ঞা-অবহেলার দৃষ্টিতে দেখছেন।’ এ সময় এই রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানী, নেপালী, আফগান এবং ইন্দোনেশিয়ানরা ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কাটজ, স্টেট সিনেটর হোযে প্যারাল্টা, স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান ফ্রান্সিসকো ময়া এবং মাইকেল ডেনডেকার, কাউন্সিলম্যান ডেনিয়েল ড্রোম।

হিলারি শুধু এক গ্লাস পানি পান করেছেন। তার পাশে বসা নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও কিছু খাননি। তবে উপস্থিত কম্যুনিটি লিডারদের কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন হিলারি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন হিলারি। এ সময় তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প অত্যন্ত কর্কশ ভাষায় কম্যুনিটিতে বিবাদ সৃষ্টির জঘন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। ট্রাম্প উসকানিমূলক মন্তব্য করছেন-যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাকে নির্বাচনের ময়দান থেকে সরে যাবার আহ্বান জানানো দরকার।’

তার প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্স সম্পর্কে হিলারি বলেন, ‘আমি উৎসাহ ভরে অপেক্ষায় আছি ১৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হতে।’ হিলারি বলেন, ‘উজ্জ্বল আলোকরশ্মি এবং ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে তিনি (স্যান্ডার্স) কীভাবে প্রশ্নের জবাব দেবেন। তার পক্ষে নিশ্চয়ই মুশকিল হবে। এছাড়া কীভাবে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা করবেন এবং কীভাবে পররাষ্ট্র নীতির ব্যাপারে কথা বলবেন? তার তো কোন অভিজ্ঞতাই নেই।’

একইসাথে রিপাবলিকান ও নিজ দলীয় প্রার্থীকে টার্গেট করেছেন কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে হিলারি বলেন, ‘আমি মনে করছি, আমি একইসাথে হাঁটবো এবং চুয়িং গাম চিবুতে থাকবো।’

এর আগে হিলারি ক্লিন্টন ব্রুকলিন, ম্যানহাটান, হারলেম প্রভৃতি স্থানে নির্বাচনী সমাবেশ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিভ্রমণ করেন। কয়েকটি চার্চে গিয়ে নানা ইস্যুতে কথা বলেন। একইভাবে ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হতে আগ্রহী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সও ব্রুকলিনে তার জন্মস্থান এবং প্রাইমারি ও হাইস্কুল পরিভ্রমণ করেন।

শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেন সে সময়ের বন্ধু-বান্ধবদের কাছে নিয়ে। জন্মের পর থেতে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ব্রুকলিনে ছিলেন। এরপর চলে গেছেন ভারমন্টে এবং সেখান থেকেই ইউএস সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন।

৮ থেকে ১১ এপ্রিল সোমবার পর্যন্ত হিলারি এবং স্যান্ডার্স ছোট-বড় ১২টি সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন, যেগুলোর হোস্ট ছিলেন ইমিগ্র্যান্টরা। অর্থাৎ নির্বাচনে ইমিগ্র্যান্টদের গুরুত্ব বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি ঘটছে সর্বত্র। যদিও হিলারির সমাবেশে নারীর উপস্থিতি বেশি। হিলারি তার বক্তব্যে বলেন, ‘সমমানের কাজে পুরুষের চেয়ে নারীর বেতন কম থাকলে চলবে না। সমান করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘নারীর অধিকারের অর্থ হচ্ছে একটি পরিবার তথা একটি জাতির সমৃদ্ধির পথ সুগম করা। নারীরা যদি সমৃদ্ধি পান, তাহলে সে পরিবারের সন্তানেরাও সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠার সুযোগ পায়। তাই নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কৃপণতার কোন অবকাশ থাকতে পারে না।’

রিপাবলিকান পার্টির এগিয়ে থাকা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী সমাবেশের চেয়ে সামগ্রিক বিষয়ের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ৯ এপ্রিল তিনি ‘৯/১১ মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন এবং এক লাখ ডলার অনুদান প্রদান করেন। ম্যানহাটানের ফিফথ এভিনিউতে নিজের বাড়ি। সেখান থেকে মাত্র ৪ মাইল দূরত্বে গ্রাউন্ড জিরোতে স্থাপিত হয়েছে এই মিউজিয়াম। তবুও এর আগে কখনোই পা বাড়াননি সেখানে। ভোটের প্রয়োজনে সেটি পরিদর্শন করলেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেন।

নির্বাচনী প্রচারণা তুঙ্গে থাকাবস্থায়ই বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ব্রুকলিনে হিলারি এবং স্যান্ডার্সের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। বিতর্ক অনুষ্ঠানের বাইরেও শো-ডাউনের প্রস্তুতি চলছে উভয় প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। মোট কথা, দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবার আগেই তুঙ্গে উঠেছে নিউইয়র্কে নির্বাচনী ময়দান।

সূত্র : ইউএনবি।



মন্তব্য চালু নেই