নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা

মোট ছয় ধাপে অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের চারটি ধাপ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। চারধাপেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। সামনে আরো দুই ধাপের নির্বাচন বাকি আছে। তবে এতে পর্যবেক্ষক হতে আগ্রহ নেই দেশি-বিদেশি কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার।

দেশি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ২০টির সাড়ে ১০ হাজার পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আবেদন করলেও ইসির কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট হয়ে পিছিয়ে যান তারা। তাই মাঠে যাননি কেউই। এতে করে দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম পর্যবেক্ষকশূন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন।

অভিযোগ রয়েছে, ইউপি নির্বাচনে অনিয়ম সহিংসতা বাড়ছে। চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে সরকার ভোট জালিয়াতির মহোৎসব চালিয়েছে বলে ওই নির্বাচনের পর অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অবশ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মনে করেন, চতুর্থ ধাপে সহিংসতা ও গোলযোগ কিছুটা কম হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষকদের আগ্রহ হারানোর বিষয়ে বিষয়ে ২৯টি নাগরিক সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত প্রধান নির্বাচন পর্যবেক্ষক মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আবদুল আলীম বলেন, এবারের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আগ্রহ দেখায়নি। এজন্য দেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো তাদের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতাও পায়নি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার মতো সুষ্ঠু পরিবেশও ছিল না এবং সামনের ধাপগুলোতেও নেই। সব মিলিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনে প্রতিটি ধাপে সহিংসতা, ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা, কেন্দ্র দখল, ভাংচুর, হামলা, মামলা, অগ্নিসংযোগের কারণে পর্যবেক্ষণ করেনি বিদেশি ও দেশি সংস্থাগুলো। ভোটগ্রহণের আগে থেকেই সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মাঠে যায়নি পর্যবেক্ষক সংস্থা।

ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানান, অতীতে স্থানীয় বেসরকারি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ ৪১ হাজার ৯৪৭ পর্যবেক্ষক নিয়োগের রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ১০টি পর্যবেক্ষক সংস্থা প্রথম ধাপে ৪ হাজার ৭৬৬ পর্যবেক্ষক নিয়োগের অনুমতি নেয়। তবে মাঠপর্যায়ে তাদের তেমন দেখা যায়নি।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় চারটিতে। এ চার সংস্থা মোট ১ হাজার ৪৪৬ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করবে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিল।

তৃতীয় ধাপে নির্বাচন কমিশনে ২১০টি সংস্থা তালিকাভুক্ত হয়। তারা ৩ হাজার ৭৩১ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করে।

এরপর চতুর্থ ধাপে ২০টি সংস্থা থেকে ৭৬২ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগের তালিকা পাঠানো হয়। তবে মাঠ পর্যায়ে তাদের অধিকাংশই যাননি বলে জানা গেছে। এমন কি ইসিতে তারা এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদনও দেননি।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা ১২০টি। এসব সংস্থার মধ্যে ১০০টি সংস্থা এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কোনো আগ্রহই দেখায়নি।

পর্যবেক্ষক বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহকারি পরিচালক (জনসংযোগ) আরাফাত আরা বলেন, নির্বাচনে প্রতি ধাপের তফসিল ঘোষণার পর তিন দিনের মধ্যে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে আবেদন করতে বলা হয়। পর্যবেক্ষকদের যোগ্যতাও নির্ধারণ করে দেয়া আছে। সেসব যোগ্যতার প্রমাণপত্র জমা দিয়ে পর্যবেক্ষক পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা যায়। তবে এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।



মন্তব্য চালু নেই