নিষেধ না মানলে কড়া ব্যবস্থা, দলের নেতাদের হুঁশিয়ারি মমতার

গোষ্ঠীবাজী, তোলাবাজি এবং অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে দলীয় নেতাদের উপর বেজায় চটেছেন তৃণমূল প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এবার দলীয় বৈঠকে নাম ধরে ধরেই শাসিয়েছেন নেতাদের। দিয়েছেন কড়া হুঁশিয়ারি। বলেছেন, ‘বার বার আপনাদের সতর্ক করা হচ্ছে, নানা বিষয়ে আপনারা জড়িয়ে পড়ছেন। আমি যেটা নিষেধ করছি, সেই কাজই করা হচ্ছে। এবার আমি কড়া ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’

শনিবার ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সভা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী-এমপি এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। সে সভায় দলের চিহ্নিত নেতাদের উদ্দেশ্য করে এভাবেই ভর্ৎসনা করেন ‘নেত্রী’।

সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে নেত্রী বলেছেন, নিজেদের মধ্যে দলবাজি ও তোলাবাজি কোনোটাই চলবে না। একটি অংশ আমার কথা শুনছে, আরেকটি অংশ সতর্কবার্তা এড়িয়ে একই কাজ করে চলেছে। মিডিয়ার একটি অংশ ও বিরোধী দল এ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।’

দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেও শান্তিতে নেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বিরোধীরা নয়, এই মুহূর্তে নিজের দলই তার কাছে সমস্ত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দায়িত্বশীল নেতা-নেত্রীরা দলের শৃঙ্খলা মানছেন না বলে ক্ষোভে আক্ষেপে ভরে উঠেছে তার মন। সম্প্রতি এ ক্ষোভ আরো বেড়েছে। বিশেষ করে দলের নেতা কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সব্যসাচী দত্ত, সুজিত বসু, তাপস চ্যাটার্জি ও কৃষ্ণা চক্রবর্তীর মতো নেতাদের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে চটেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। মাসের প্রথম শনিবার দলের নীতিনির্ধারণী বৈঠকে এদের নাম ধরেই শাসিয়েছেন। সাফ বলে দিয়েছেন, কথা না মানলে এবার কড়া ব্যবস্থা।

মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই কড়া ব্যবস্থা নিতে তাকে যেন বাধ্য করা না হয়। মমতা বারবারই চাইছেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ চেহারা দিতে। এই বার্তা তিনি প্রতিটি মিটিংয়েই বলছেন।

তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তার সঙ্গী। এবার আর বরদাশত করতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু কলকাতা নয়, তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সমস্যা জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। নদিয়ায় জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও দলের জেলা সভাপতির মধ্যে ইগোর লড়াইয়ে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী।

মালদহের মোয়াজ্জেম হুসেনকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সকলকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। দক্ষিণ দিনাজপুরের দুই নেতার ইগোর লড়াই নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তিনি।

হুগলিতে দিলীপ যাদবকে সরিয়ে শান্তনু ব্যানার্জিকে যুব সভাপতি করায় প্রকাশ্যেই আপত্তি করেছেন এক সাংসদ।

শনিবার তিনি জানিয়েছেন, অন্তর্ঘাতের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, তারা নিজেদের সংশোধন করতে না পারলে, দল থেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়া হবে। পঞ্চায়েতে কোনো কাজ দেয়া হবে না। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির কাছে নিজেকে সংশোধন করছি- এই বলে চিঠি লিখে জানাতে হবে। দলীয় বৈঠকে এক পদ এক ব্যক্তি সরাসরি সেভাবে না বললেও নেত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, যার যা দায়িত্ব তা নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। কাউন্সিলররা নিজেদের কাজ করবেন। যুবরা যুব’র কাজ করবেন। কাউন্সিলরদের সব কাজ করার প্রয়োজন নেই।

নির্বাচনের সময় বেশ কয়েকটি আসনে তৃণমূল অন্তর্ঘাতের জন্য জিততে পারেনি। দলের বৈঠকে মমতা কয়েকবারই একথা বলেছেন।

ঘরের সমস্যা যেমন তাকে ভাবাচ্ছে, তেমনি বিরোধীদের নিয়েও কিছুটা চিন্তিত তৃণমূল নেত্রী। জেলায় জেলায় বিরোধীদলীয় কার্যকলাপে নজর রাখতে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

শ্রমিক সংগঠনে দলাদলিও যে ভালভাবে নিচ্ছেন না, তাও স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। চা–বাগান নিয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ইতোমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় চা–‌বাগান নিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। চা শ্রমিকদের চারটি সংগঠন ভেঙে একটি ফেডারেশন তৈরি করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। ২০ অগাস্ট নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে চা শ্রমিক ফেডারেশনের প্রথম সভা হওয়ার কথা রয়েছে।

বৈঠকে তিনি সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি এ ব্যাপারে কিছুটা গাফিলতি রয়েছে বলেও বৈঠকে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, জেলা পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতে হবে। দলকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও আরও স্বচ্ছ করতে ভাল ছেলেদের তুলে আনতে হবে। শৃঙ্খলার প্রশ্নে কোনো আপোস হবে না।



মন্তব্য চালু নেই