নেতাদের সাজা: দুর্বল হয়ে পড়েছে হুজি

নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং অপর আটজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কারণে সংগঠনটি এখন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, হুজির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলার বিচার কার্যক্রম ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। ২৮টি মামলার বিচারাধীন রয়েছে এবং চারটি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মুফতি হান্নানসহ ২০৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। খবর বাসসের।

১৯৯৯ সালে মানবতাবাদী কবি শামসুর রাহমানকে হত্যার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানোর পরই হুজির নাম প্রকাশ পায়। ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টাসহ কয়েক ডজন বোমা হামলার জন্য হুজিকে অভিযুক্ত করা হয়।

হুজি ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালায়। এতে ১০ জন প্রাণ হারায় এবং আরও অনেক আহত হয়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে ২৪ জনের মৃত্যু হয় এবং ৫শ’র বেশি লোক গুরুতর আহত হয়।

হুজি ২০০৫ সালে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যার প্রচেষ্টা চালায়। এ হামলায় তিনজনের মৃত্যু হয় তবে আনোয়ার চৌধুরী প্রাণে রক্ষা পান। তিনি এতে সামান্য আহত হন।

২০০১ সালে বাংলা নববর্ষে রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার এক আদালত হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান এবং অপর সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

অপর সাত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসেন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত- তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর, আবু বকর, শফিকুর রহমান ও আবদুল হাই পলাতক রয়েছেন।

শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, মাওলানা সিব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আবদুর রউফ ও হাফেজ মাওলানা আবু তাহেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

২০০৫ সালে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যা প্রচেষ্টার মামলায় মুফতি আবদুল হান্নানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য ১৮৩টি মামলায় ৬৯ জন জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬২ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২৩৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ৩৬৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

জেএমবি’র বিরুদ্ধে ১৮৩টি মামলার মধ্যে ১৪৫টি মামলার অচিরেই রায় হবে। চারটি মামলা সম্পন্ন হয়েছে এবং ২৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অপর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এবং ১২৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহ’র বিরুদ্ধে দুটি, আল্লাহ’র দল সংগঠনের বিরুদ্ধে ৮টি এবং হিজবুত তাহির উলামা বাংলাদেশ জঙ্গি গ্রুপের বিরুদ্ধে চারটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ২৮৫৬ জন নেতা-কর্মী আটক করা হয়েছে এবং ৬৬০ জন পলাতক রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের মধ্যে জেএমবির ১৭৯৩ জন, হুজির ২০৮, হিজবুত তাহরীরের ৬৯৩, হিজবুল্লাহ’র ২৩, আল্লাহ’র দলের ৮০, হিজবুত তাওহীদের ৮, হিজবুত তাওহীদ উলামা বাংলাদেশের ২৮, আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের ১৪ এবং শহীদ হামজা ব্রিগেডের ১০ জন।

জঙ্গি তৎপরতার ৫৯১টি মামলার মধ্যে জেএমবির মামলা সবচেয়ে বেশি। মামলায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে হিজবুত তাহরীর।



মন্তব্য চালু নেই