নেপালের রাস্তায় জীবন্ত দেবী

ভূমিকম্প পূর্ববর্তী ও পরবর্তী নেপালের অবস্থা এখন আকাশ আর পাতাল। ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে দেশটির অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বিপুল প্রাণহানি নেপালকে পুরোপুরি গুড়িয়ে দিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র নেপালের পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করতে এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে পুনরায় তৈরি করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু নেপালবাসী ভালো করেই জানেন যে, যা গেছে তা আর ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। অন্তত কোনো মানুষের পক্ষে তো তা সম্ভবই নয়, তাই বাধ্য হয়েই নেপালবাসী তাদের জীবন্ত দেবীকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করলো।

হিন্দুরাষ্ট্র নেপালে দীর্ঘযুগ ধরেই দেবীরূপ হিসেবে নারীকে পূজা করার রীতি প্রচলিত আছে। ধানা কুমারী বর্জ্রচার্যের যখন মাত্র দুই বছর বয়স তখনই তাকে রীতি অনুযায়ী কুমারী জ্ঞানে পূজার জন্য নির্ধারন করা হয়। সেই হিসেবে ১৯৫৪ সাল থেকে এই দেবীবেশেই আছেন ধানা কুমারী। রীতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ছাড়া আর কারও সঙ্গে কথা বলতেও পারেন না কুমারী দেবী। কিন্তু ভূমিকম্প পরবর্তীতে নেপালের সাধারণ জনগণের পাশে ঈশ্বরের আর্শীবাদ নিয়ে দাড়ানোর জন্যই এই চেষ্টা বলেও জানা যায়।

গত ২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পের আগে বর্জ্রচার্যকে স্রেফ মাত্র একবারই জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল। তখন কোনো একটা ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে দেবী জনসাধারণের দর্শনদানের জন্য এসেছিলেন। হিমালয় পর্বতের কোল ঘেষা দেশগুলোতে কুমারী নারীকে মাতৃরূপে অর্চনা করবার রীতি অনেক প্রাচীন। ওই অঞ্চলগুলোর বিশ্বাস মতে, অপরাজগতের দেবী মর্তে কুমারী নারীর শরীরে প্রবেশ করে নিজের মহিমা প্রচার করেন। হিন্দু এবং বৌদ্ধ উভয় ধর্ম মতেই এই কুমারী পূজার রীতি প্রচলিত রয়েছে।

ধানা কুমারী জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বাইরে আসলে একটি গণমাধ্যম তার সাক্ষাতকার নিতে সমর্থ হয়। সেই সাক্ষাতকারে ধানা দেবী জানান, ‘আমি কখনোই এভাবে গৃহত্যাগের কথা ভাবিনি। হয়তো মানুষ এখন আর তাদের ঐতিহ্যকে আগের মতো মানতে চায় না তাই ঈশ্বর ক্রোধান্বিত হয়েছেন।’ সেসময় দেবীর পাশে থাকা তারই আত্মীয় চানিরা ব্রর্জচার্য বলেন, ‘আমরা অন্য সকলের মতো এই ঘরবাড়িগুলো ছেড়ে যেতে পারি না। আমাদের তার কথা ভাবতে হবে। আমরা জানি না যে কি করতে হবে। কিন্তু প্রকৃতি যখন আপনাকে চাপ প্রয়োগ করবে, তখন আপনাতেই আপনি অনেক অচিন্ত্যনীয় কাজ করবেন।’



মন্তব্য চালু নেই