ইউপি নির্বাচন___________________

নৌকার বিপরীতে অন্য প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণা চালানো সম্ভব হচ্ছে না

সিরাজুল ইসলাম শিশির, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : আগামী ৪ জুন অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে উল্লাপাড়া উপজেলায় ৪ নং বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়ন। বিশেষ করে এই ইউনিয়নে নৌকার বিপরীতে কোন ভাবেই অন্য কোনো প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। নৌকা ছাড়া ভোটের কথা বললেই মার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ইউনিয়নে নৌকার সমর্থকদের হামলায় গতকাল পর্যন্ত ৫ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উল্লাপাড়া উপজেলার ৪ নং বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে ও হাটবাজারে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দেয়ালে, ঘরের বেড়ায়, গাছে নৌকা প্রতীকের অসংখ্য পোস্টার লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া নৌকার সমর্থকরা প্রতিদিনই মোটরসাইকেল মহড়া ও মিছিল সমাবেশ করছে। অপরদিকে বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোস্টার ছিড়ে ফেলে উল্লাস করে নৌকার সমর্থকরা। এই ইউনিয়নে কয়েকটি গ্রামে নৌকার পোস্টার ছাড়া অন্য কোন চেয়ারম্যান প্রার্থীর পোস্টারও অক্ষত রাখা হয়নি।

৪ নং বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের চাকসা গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন, খাদুলী গ্রামের ফজলুল হক, আব্দুল কাদের ও হাওড়া গ্রামের আব্দুল আজিজের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কথা হলে তাঁরা বলেন, “৪ নং বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের ভোট অনেক কম। তবে সরকারি দল হওয়ায় তাদের গায়ের জোর খুব বেশি। তাই এ ইউনিয়নে নৌকা ছাড়া ভোটের কথা বললেই আক্রমনের শিকার হতে হয়।” একই দিন ৪ নং বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। এখানে নির্বাচনী সহিংসতার ব্যাপারে ভোটারদের কাছে সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে নৌকার সমর্থকদের ভয়ে অনেকে কথা বলতে সাহস পায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার বলেন, “পত্রিকা এবং টেলিভিশনে আমাদের ছবি দেখা গেলে নৌকার লোকজন আমাদের আস্ত রাখবে না। দিনে দুপুরেই পিটিয়ে মারবে।”

৪ নং বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাব হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা আমার ঘোড়া প্রতীকের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যাবে। তাই এখানে নৌকার প্রার্থী হুমায়ন কবির লিটনের কর্মীরা নৌকা পার করতে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছেন। তারা সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রতিদিনই আমাদের নিরীহ কর্মীদের ওপর হামলা ও নির্যাতন করছে এবং ঘোড়া মার্কার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে।

এমনকি প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই হুমায়ন কবির লিটনের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া শুরু করে, ফলে আমার গণসংযোগ বা নির্বাচনী প্রচারণা চালানো তো দুরের কথা প্রান ভয়ে আমার লোকজন ঘর হতে বের হতে পারছে না।

এ ছাড়া এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা নির্বাচনের দিন সরকার দলীয় ক্ষমতার জোরে ভোটকেন্দ্র খল করে নৌকা প্রতীকে সিল মারবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে।

বিএনপির নেতাকর্মী ও সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে এলাকায় ভোট চাওয়াতো দূরের কথা পোস্টার লাগাতে গেলেও তারা মারপিট করছে। প্রতিটি এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা ৩০-৪০টি মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। তারা বলছে বিএনপির কোনো প্রার্থী এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না। তাদের কর্মীদেরও মাঠে থাকতে দিবে না। কেউ তাদের পক্ষে ভোট চাইতে পারবে না। ৪ নং বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল করিম জানান, প্রতিদিন তার বাড়ির চারপাশে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ভিড় জমিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেনা।

এদিকে ৪ নং বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাব হোসেন জানান, কোন উপায় খুজে না পেয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। যার অনুলিপি একটি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উল্লাপাড়া থানা, । উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া আছে এবং অতি শ্রীঘ্রই এর বিরেদ্ধ ব্যবস্থ্য নিতে উর্ব্বতন কর্মকর্তাদের সবিনয় অনুরোধ করছি ।

উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান কৌশিক আহমেদ বলেন, ইউপি নির্বাচন নিয়ে যে কোন অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে প্রভাবমূক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করছে। আগামী ৪ জুন নির্বাচনের ফলই সুষ্ঠু নির্বাচনের উদাহরণ সৃষ্টি করবে।



মন্তব্য চালু নেই