অন দ্য স্পট

পথে পথে লালনের বাণী

লালন সাঁই গ্রামের পথে পথে ঘুরে সাধারণ মানুষকে গান শোনাতেন। তাদের মানবতার কথা বলতেন। আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করতেন। কিন্তু ১২৪ বছর পর এমন দৃশ্য দেখাটা বিরল।

পথে ঘাটে বাউল ফকিরদের এখন আর গান করতে দেখা যায় না। সময়টা বদলে গেছে। কিন্তু কেউ কেউ থাকেন যারা আদি ভাবের চর্চা করে থাকেন। ২০১২ সালে ‘লালন বার্তাবাহক’ নামে একটি গানের দল তৈরি হয়। তারা গ্রামের মেঠো পথ, ধান খেতের আল ধরে, নদীর পাড় ধরে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে গান শোনান। এই লালন বার্তাবাহক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হয়েছিল গত সোমবার।

অগ্রহায়ণের এক দুপুরে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে লালন যাত্রা শুরু হয়। কারো হাতে কৃষ্ণ কাঠি, কেউ বাজাচ্ছেন একতারা, জিপসি, মন্দিরা, হাত বোল। এসব অ্যাকুস্টিক যন্ত্রের তালে তালে থানা শহরের পিচঢালা পথে যখন ১০-১২ জনের দলটি হাঁটা শুরু করে, আশপাশের মানুষের কান, নাক, আর qjp1h8xu  পথে পথে লালনের বাণীচোখ যেন সজাগ হয়ে যায়। পথচারীরা অবাক হয়ে দেখেন এই তরুণ দলটিকে। কারো কারো মুখের ভাব এমন- ‘এই পাগলের দল কোথা থেকে এলো?’ কোনো কিছুতেই মন না দিয়ে লালনের বাণী পরিবেশন করতে করতে অগ্রহায়ণের নরম রোদে হেঁটে চলে দলটি। সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে, আমি কাঙাল হবো মেঙে খাবো, ধন্য ধন্য বলি তারে, ছাড়াও বেশ কিছু গান গাইতে গাইতে সবুজ গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করে দলটি।

গ্রামের ছেলে বুড়ো দৌড়ে দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে থাকে লালনের গানের সুর শুনে। দু’একজন অবশ্য একেবারেই প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থায় ছিলেন। তবে স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল বিষয়টি সবচেয়ে আনন্দের। তারা এই লালন বার্তা দলের সঙ্গে মিশে যায়। আনন্দ করে, আর বলে ওঠে, ‘লালন… লালন।’ একটি নিষ্পাপ আনন্দের দৃশ্য যেমন হয়।
Kabir-100_12  পথে পথে লালনের বাণী
‘লালন বার্তাবাহক’ দল হেঁটে চলছে সিরাজদিখান টেকের হাটের পদ্মহেম ধামের দিকে। পানির তৃষ্ণায় মাঝখানে একটি বাড়িতে পানি পানের বিরতি ছিল। তারপর আবার গান আর হাঁটা। লালন যাত্রা করার পরিকল্পনাটা পদ্মহেম ধামের প্রতিষ্ঠাতা কবির হোসেনের। তিনি বলেন, ‘লালন সাঁইজির বাণী ও দর্শন সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই এ লালন যাত্রার আয়োজন করি। প্রতি মাসেই আমরা লালন যাত্রায় বের হই। এ পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা আমরা পায়ে হেঁটে হেঁটে সাঁইজির বাণী পরিবেশন করেছি। সাঁইজি যে মানবতার কথা তার বাণীতে রেখে গেছেন, সেগুলোই পরিবেশন করছি। বিশ্বব্যাপী হেঁটে হেঁটে সাঁইজির বাণী ছড়িয়ে দিতে চাই আমরা।’

প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে এই লালন বার্তা বাহক দলটি পৌঁছায় ইছামতি নদীর পাড়ে অবস্থিত পদ্মহেম ধামে। এই লালন বার্তাবাহক দলে আরো ছিলেন মনিরুল ইসলাম, রাসেল, প্রিন্স, বাদল, রিপন, লেলিন প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই