পথ খুঁজছে বিএনপি

আন্দোলন করে দাবি আদায়ে আদৌ সফল হবে বিএনপি? অতীতের দিকে তাকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ নয় বিএনপি নেতাদের কাছে। কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এবং পরে দলটি একাধিক আন্দোলন-কর্মসূচির ডাক দিলেও কার্যত সফল হতে পারেনি। কেন্দ্রের ডাকে মাঠে নেমে আসেনি নেতা-কর্মীরা। সারা দেশের অবস্থা যেমন তেমন, ঢাকাতেও আন্দোলন জমাতে ব্যর্থ হয়েছে এক সময়ের ক্ষমতাসীন দলটি। এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও। তাছাড়া সরকারি দলের নেতারাও বিএনপির আন্দোলনকে ‘ভাঙা রেকর্ড’ হিসেবে দেখছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিএনপির উদ্দেশে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘তারা এবার দেশের একজন মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক।’

তবে বিএনপি নেতারা বুঝতে পারছেন, আগে যা হওয়ার হয়েছে, এখন আর বসে থাকার সময় নেই। তবে কি অন্য কোনো পথে এগোতে হবে দলটিকে? জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে মানুষের হয়রানি হোক বিএনপি তা চায় না। তবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কিছু একটা তো করতে হবে। বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। এই দাবি আদায়ে জনগণকে রাজপথে নামিয়ে আনার কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। আন্দোলনের ধরনে পরিবর্তন আসছে।’

কী হতে পারে সেই কর্মসূচি? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখনই আন্দোলনের কৌশল বলে দেওয়া ঠিক হবে না। সময় হোক জানতে পারবেন। চিন্তাভাবনা চলছে। হরতাল-অবরোধের বাইরে নতুন পথ খোঁজা হচ্ছে। এগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আন্দোলনে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।’

বিএনপির অপর একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, বিএনপি শুরুতেই কোনো কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না। আগে সরকারের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরবে দলটি। পরে এসব দাবি মেনে নিয়ে সরকারকে সময়ও দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নমনীয়তা বা সংকট সমাধান, সংলাপে আগ্রহ না দেখা যায় তবেই আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর করা হবে।
দাবিগুলো কী হতে পারে? জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা জানান, সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজানো এবং নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন নিয়ে আসা।

দলীয় সূত্র জানায়, নভেম্বরে ঢাকায় একটি জনসভা অথবা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি নিজেদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরবে। এজন্য সময়সীমাও বেঁধে দেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার পর সময়মতো দাবি আদায় না হলে শুরুতে তুলনামূলক হালকা কর্মসূচি দেওয়া হবে। জনগণ যেন নিজেদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে নিজে থেকেই রাস্তায় নেমে আসে সে রকম কর্মসূচি দেবে বিএনপি। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঢাকায় পদযাত্রার বিষয়টি চিন্তায় আছে। সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিও রাখা হচ্ছে। এটি টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জানুয়ারিতে। এর মধ্যে সরকার সংলাপে আগ্রহ না দেখালে ধাপে ধাপে কঠোর হবে আন্দোলন।

বিএনপির মধ্যে একটি অংশ এখনো ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। নির্বাচনের পরপরই দলের ভেতরে প্রশ্ন তুলেছিলেন এসব নেতা। তাদের যুক্তি, নির্বাচনে গেলে বিএনপি জয়ী হতো। আর যদি হেরেও যেত, তখন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগকে সামনে এনে আন্দোলনকে শক্তিশালী করা যেত। জনগণের পূর্ণ সমর্থন সেখানে পাওয়া যেত। কারণ তারা দেখতেন যে ভোটাধিকার তারা প্রয়োগ করেছেন তার সঠিক ফল তার বিপরীতে চলে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক সদস্য বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কম সময়ের ব্যবধানে উপজেলা নির্বাচনে গিয়ে আমরা প্রথম দুই ধাপে একচেটিয়া জয় পেয়েছি। পরে যখন সরকার দেখেছে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দায় হচ্ছে, তখন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সুযোগ নিয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করা আর জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করা এক হতো না। এখানেই একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক ভুল করেছে বিএনপি। যার খেসারত আরও দিতে হবে। কারণ, যেভাবেই হোক একটা সরকার গঠন হলে তাকে নামানো সহজ কথা নয়।’

তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতে, নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। সঠিক ছিল বলেই আজ তারা আন্দোলন করতে পারছে। তা না হলে আন্দোলনের জন্য শক্ত কোনো ইস্যু থাকত না। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে গিয়ে হেরে গেলে তো খুব বেশি বলার কিছু থাকত না। তখন বিজয়ী দল বলত নির্বাচনে হেরে গেলে সবাই এক কথাই বলে। মানুষও তখন তাই মনে করত। আর বড় কথা হচ্ছে, বিএনপি অংশ নিলে ৫ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচন বৈধতা পেতো। জেনেশুনে তো আর এই ফাঁদে পা দিতে পারে না বিএনপি।’

সম্প্রতি নীলফামারীর জনসভায় খালেদা জিয়া তার বক্তৃতায় শিগগির আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষণার একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ঢাকায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও বলেছেন। বিগত সময়ে ঢাকা না পারলেও তার ভাষায় এবার পারবে। এই ঘোষণার পর দলের নেতা-কর্মীসহ অন্যদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে এই মুহূর্তে আন্দোলনের জন্য কতটুকু তৈরি বিএনপি? যেই ঢাকার কথাই বেগম জিয়া জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন সেখানেও কি দল গোছানো সম্ভব হয়েছে? যে চিন্তা নিয়ে ঢাকা মহানগরে নেতৃত্বের পরিবর্তন আনা হয়েছে, তা কি কাজে আসছে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য এসব বিষয় ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন। তারা বলছেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলগুলোর জন্মই তো ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে। সেখানে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকলে দলের সাংগঠনিক শক্তি ধরে রাখা সহজ নয়।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা এখন প্রকাশ্য। এজন্য দলটির নেতা-কর্মীদের খুব বেশি দোষারোপ করা যায় না। কারণ, রাজনীতির গতিপ্রকৃতি এখন পাল্টে গেছে। আগে দলীয় আদর্শ ও চেতনাকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে মাঠে নেমে এসেছে। এখন সবার মধ্যে চিন্তাভাবনার পরিবর্তন আসছে। জেনেশুনে তো আর কেউ হামলা-মামলার ঝুঁকি নিতে পারে না। তবে দাবি আদায় করতে হলে এর মধ্যেই মাঠে নামতে হবে।’2_0_42352_0

রাজনৈতিক এই বিশ্লেষক বলেন, ‘আন্দোলনে নামার আগে সংগঠনকে গুছিয়ে আনা প্রয়োজন। যেসব জায়গায় পুরনো কমিটি আছে সেগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে। নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে কিন্তু তাই বলে দিনের পর দিন পুরনো কমিটি দিয়ে সংগঠন চালানোর চিন্তা করলে ভুল হবে।’

বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের দাবি, হামলা-মামলা বিএনপি ভয় পায় না। বরং সরকারই বিএনপির আন্দোলনের কথা শুনে ভয়ে আছে। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের কথা শুনেই সরকার যুবদলের সভাপতিসহ ৬৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। নেতা-কর্মীদের জেলে নিলেই আন্দোলন থেমে যাবে না। শেখ মুজিবকে জেলে নেওয়ার পর একসময় আওয়ামী লীগ অফিসে বাতি দেওয়ারও লোক ছিল না। কিন্তু আন্দোলন থেমে থাকেনি। আইয়ুব খানের পতন হয়েছে। কখন জনগণ জ্বলে উঠবে বলা যাবে না।’

এখন যা নিয়ে মতানৈক্য
বিগত সময়ে বেশ কয়েকটি দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে চরম মতানৈক্য আছে বিএনপিতে। এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে বিভক্তি এসেছে দলের প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে। যদিও এগুলো অতটা প্রকাশ্য নয়। দলের হাইকমান্ডের কানেও নাকি গেছে এসব কথা।
দলীয় সূত্র জানায়, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছিল তা মোটেও কাজে আসেনি। কারণ, ওই কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের যে ধরনের অংশগ্রহণের আশা করা হয়েছিল তার সিকিভাগও পূরণ হয়নি। তবে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর দাবি, হঠাৎ করে এ ধরনের কর্মসূচির জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না। তাছাড়া ওই কর্মসূচির কারণেই সরকার ঢাকায় ‘কারফিউ’ পরিস্থিতি জারি করেছিল। কিন্তু স্বাভাবিক অবরোধ কর্মসূচি হলে মানুষ রাস্তায় নামার সুযোগ পেত।
এছাড়া ২০১৩ সালের মার্চে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই সাক্ষাৎ বাতিল করা হয়েছিল জামায়াতের ডাকা হরতালের অজুহাতে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেকেই মনে করেন, ওই সিদ্ধান্ত ছিল একেবারেই ভুল। তাতে ভারতের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক সম্পর্কের একটা বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা না করে এরকম শক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেও বিএনপিকে মাশুল দিতে হচ্ছে। কাদের সঙ্গে আলোচনা করে সেদিন এরকম সিদ্ধান্তগুলো এসেছিল তাও খালেদা জিয়ার বাইরে অন্যদের কাছে এখনো রহস্য।

প্রস্তুতি নেই জোটেও, জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব
মুখে মুখে আন্দোলনের ফেনা তোলা হলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে এ নিয়ে খুব বেশি প্রস্তুতি নেই। জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি আন্দোলন-কর্মসূচি নিয়ে যতটুকু চিন্তিত তা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে শরিকরা। বিশেষ করে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী এখন মরিয়া যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নেতাদের বাঁচাতে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত। এসব বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো সমন্বয়ও নেই তাদের মধ্যে। যেখানে জনদুর্ভোগের কথা মাথা রেখে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে আপাতত সরে আসার চিন্তা করছে বিএনপি সেখানে জোটে থেকে জামায়াতে ইসলামী যখন তখন হরতালের ডাক দিচ্ছে।
জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটগত সম্পর্কের দূরত্ব দিনদিন বাড়ছে। সম্প্রতি জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মৃত্যুর পর বিএনপির কোনো শোকবার্তা না দেওয়া এবং দলের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদ-ের রায়ের পর বিএনপির নীরব ভূমিকায় অসন্তুষ্ট জামায়াত। জোটে থেকে বিএনপির কাছ থেকে তারা কোনো সুবিধা পাচ্ছে না বলে মনে করছে। যে কারণে বিএনপিকে এখন নিজেদের বিপদের বন্ধু ভাবতে পারছে না একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলটি।
এছাড়া সম্প্রতি গোলাম আযমের ছেলে আমান আযমীর ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়েও বিএনপি জোটে নানা কানাঘুষা শুরু হয়েছে। আমান আযমী বিএনপিকে ‘অকৃতজ্ঞ’ উল্লেখ করে লেখেন, ‘জামায়াতের সহযোগিতা ছাড়া বিএনপি কখনো সরকার গঠন করতে পারবে না। অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুতে গোটা বিশ্ব যখন শোকাহত তখন বিএনপির নীরবতায় সমগ্র জাতি হতাশ হয়েছে।’
যদিও গোলাম আযম-পুত্রের এমন মন্তব্যকে আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘আযমীর বক্তব্যকে কোনোমতে আমরা আমলে নেব না। এটা তার ব্যক্তিগত মতামত। আমরা এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে তৈরি নই।’

বিএনপি নেতাদের দাবি, যে যাই বলুক জোটবদ্ধ দলগুলো এখনো অভিন্ন দাবিতে একমত। নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি থাকলেও এসব আন্দোলনের মাঠে কোনো বাধা হবে না।
দলীয় অপর একটি সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটের বাইরে যেসব দল এখনো একা রয়ে গেছে তাদেরকেও যুগপৎ আন্দোলনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে বিএনপি। বিশেষ করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে পৃথক একটি জোট করার জন্য যোগাযোগ চলছে দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবও এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে যাচ্ছেন।

ভারতের মন চায় বিএনপি
সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরুর আগে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ পশ্চিমা দেশগুলোর মন পেতে চাইছে বিএনপি। এসব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক আগে থেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে দলটি। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, আন্দোলনে দেশ ভেসে গেলেও লাভ নেই যদি না বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত অন্তত নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকে। এ কারণে বিজেপি সরকারের আনুকূল্য পাওয়া জরুরি।
দলীয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বকে আগের অবস্থানে রাখার তদবিরও চলছে। অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ওই কূটনীতিকরা জনগণকে সংগঠিত করার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন। তারা বলছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে চাপ দিলেও তা কাজে লাগবে না। ফলে বিএনপি মনে করে, আন্দোলন চাঙ্গা করতে পারলে নির্বাচনের ব্যাপারে একপর্যায়ে বাইরের চাপও আবার আসবে।

আমলে নিচ্ছে না সরকার
বিএনপির আন্দোলনের ডাককে পাত্তা দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল। বিষয়টিকে খুবই হালকাভাবেই দেখছেন তারা। সরকারি দলের নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনের ভাঙা রেকর্ড শুনতে শুনতে এ সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘তারা (বিএনপি) এবার দেশের একজন মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক।’
এ ব্যাপারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এটা দিয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন। এটা সশস্ত্র ও সহিংস হুমকি।’
ঢাকা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সংকট
বিগত সময়ে আন্দোলন-কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর বিএনপি চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। ঢাকায় সংগঠনকে চাঙ্গা করা না গেলে সামনের আন্দোলন-কর্মসূচির পালে হাওয়া লাগবে না। বিষয়টি মাথায় রেখে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি করা হয় দুই মাসের বেশি সময় আগে। কথা ছিল এই সময়ের মধ্যে ঢাকায় দলকে পুনর্গঠন করা হবে। কিন্তু আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব দুজনের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ঘটেছে হাতাহাতির ঘটনাও। যে কারণে নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও তৃণমূলে পুনর্গঠন করা যাচ্ছে না। রাজধানীর ১০০টি ওয়ার্ড, ৪৯টি থানা ও ১৮ ইউনিয়নের সব জায়গায় পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া পুরোদমে এখনো শুরু হয়নি।
পুনর্গঠন নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সংঘাতের কারণে বহু স্থানে কমিটি গঠন স্থগিত হয়ে রয়েছে। মোহাম্মদপুর থানা পুনর্গঠন নিয়ে মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহম্মেদের মতিঝিলের কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে ওই কমিটি গঠন স্থগিত হয়ে যায়। ১৪ অক্টোবর রাজধানীর কুড়িল এলাকায় পুনর্গঠন কার্যক্রমকে ঘিরে মহানগরের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ খোকনের ওপর হামলা ও তার গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। ১৭ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে সংঘর্ষের একপর্যায়ে দুই রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
মহানগর বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এভাবে যদি নিজেদের মধ্যে প্রতিনিয়ত সংঘাত লেগেই থাকে তবে কি আর আন্দোলনের প্রস্তুতি ভালোভাবে নেওয়া যাবে? নেতা-কর্মীদের বুঝতে হবে এখন দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার সময় নয়। দলকে ভালো জায়গায় নিয়ে গিয়ে তখন নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব করলে সেটা বিবেচ্য হবে।

ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিশৃঙ্খলা
গত ১৪ অক্টোবর ঘোষণা করা হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কমিটি। রাজিব আহসানকে সভাপতি এবং আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়। নতুন কমিটি ঘোষণার পরপরই পদবঞ্চিতরা শুরু করেন বিশৃঙ্খলা। ককটেলবাজি থেকে শুরু করে হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায় ঘটনা। দফায় দফায় এই সংঘর্ষে আহত হন অনেকে।
ছাত্রদলের নতুন কমিটি থেকে বাদপড়াদের নিয়ে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের প্রস্তুতি ছিল হাইকমান্ডের। এ অবস্থায় ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে সৃষ্ট বিদ্রোহের কারণে ওই দুই সংগঠনের পুনর্গঠন আর এগোয়নি।
জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশের বড় বড় দলগুলোতে এটা স্বাভাবিক। ইতিপূর্বেও হয়েছে। কমিটিতে তো স্বল্পসংখ্যক নেতাদের দেওয়া হয়। এতবেশি যোগ্য নেতা থাকে যে, তাদের কমিটিতে পদ দেওয়া যায় না। ফলে সেখানে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকে।’

শ্রমিকদলের পাল্টাপাল্টি কমিটি
মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই বছর পর এ বছরের ১৯ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সপ্তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সাবজেক্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। যারা পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও নুরুল ইসলাম নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে শ্রমিকদলের ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে।
ওই কমিটি গঠনের সাতদিন পর এর প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর আগের কমিটিকে অস্বীকার করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করে বিদ্রোহী পক্ষ। এ এম নাজিমউদ্দীনকে সভাপতি এবং আবুল খায়ের খাজাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এর আগে শ্রমিকদলের সভাপতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বিএনপির শ্রমবিষয়ক সম্পাদক জাফরুল হাসান।
অঙ্গ সংগঠনগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ
বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল আরেকটি সম্মেলন। কিন্তু এই সম্মেলন কবে হবে সেটা জানা নেই বিএনপি নেতাদেরও। সারা দেশে বিএনপির সাংগঠনিক জেলা ৭৫টি। তৃণমূল সংগঠনের চালচিত্র দেখভালের ঘোষণা দিয়েও উপজেলা নির্বাচনের অজুহাত দেখিয়ে সাংগঠনিক সফর স্থগিত করে বিএনপি। তারপর আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বিএনপির আরেক সহযোগী সংগঠন যুবদলের সর্বশেষ কমিটি করা হয়েছিল ২০১০ সালের ১ মার্চ। এই কমিটির সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব। এটির মেয়াদও  শেষ হয়ে গেছে বেশ আগে।

বিএনপির সহযোগী সংগঠনের মধ্যে অন্যতম স্বেচ্ছাসেবক দল। এই কমিটির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু সাড়ে তিন বছর ধরে আছেন নেতৃত্বে। এই সংগঠনের সর্বশেষ কমিটি করা হয় ২০১০ সালের অক্টোবরে। ২০১৩ সালে মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।
আরেক সহযোগী সংগঠন তাঁতীদলের অবস্থা আরও খারাপ। এই সংগঠনের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে সাড়ে তিন বছর আগে। ২০০৮ সালের ২৩ মে গঠিত কমিটি কাজ করছে এখনো।
কৃষকদলের সর্বশেষ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হয় ২০০৭ সালে। নিয়ম অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও এই সময়ের মধ্যে কমিটিই গঠন হয়নি। বরং ২০০৭ সালে কৃষকদলের সভাপতি মুজিবুর রহমান মোল্লা মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে নতুন কমিটির দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও এখনো ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শামসুজ্জামান দুদু দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
মৎস্যজীবী দলের সর্বশেষ কমিটি করা হয়েছিল ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে নতুন কমিটির দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও এখনো সভাপতি হিসেবে রফিকুল ইসলাম মাহতাব এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. নুরুল হক মোল্লা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
মহিলাদলের সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল। নূরে আরা সাফা সভাপতি এবং শিরিন সুলতানা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এই সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা মহানগর বিএনপির পাশাপাশি পুরো নিষ্ক্রিয় ছিল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। বিশেষ করে বিএনপির প্রাণ বলে খ্যাত ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা চরম হতাশ। শ্রমিকদল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতীদল, জাসাসেরও আন্দোলন-সংগ্রামে তেমন কোনো ভূমিকা নেই।

জেলা কমিটিও বেগতিকে
খুলনা জেলা বিএনপির কমিটি করা হয়েছিল ২০০৪ সালে। এরপর আর কোনো কমিটি দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি।  জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা এই সময়কে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ থাকে তিন বছর। কিন্তু ১০ বছরেও এই জেলায় সম্মেলন হয়নি। তবে আমরা নতুন কমিটি দেয়ার পক্ষে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিজ জেলা ঠাকুরগাঁও বিএনপির কমিটি করা হয়েছিল ২০০৯ সালে। ২০১২ সালে সম্মেলন করার কথা থাকলেও তা হয়নি আর। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর রহমান এই সময়কে বলেন, ‘কেন নতুন কমিটি দেওয়া হয়নি তা কেন্দ্রীয় নেতারা বলতে পারবেন।’
দিনাজপুর জেলা বিএনপির কমিটি করা হয়েছিল ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে। এই কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে ২০১২ সালে। জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন বছর আগে। আমরা নতুন কমিটির জন্য আবেদন করেছি।

নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান আহম্মেদ হাসান বলেন, ‘আমাদের জেলা কমিটির মেয়াদ গত বছর শেষ হয়েছে। নতুন কমিটির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’
লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘মেয়াদ শেষ হলেও কেন নতুন কমিটি দেওয়া হয়নি তা আমি বলতে পারব না। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বলতে পারবেন।’
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির কমিটি হয়েছিল ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১২ সালে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা বলেন, ‘আমরা নতুন কমিটি চাই। কিন্তু কেন নতুন কমিটি দেওয়া হয়নি সেটা কেন্দ্রীয় নেতারা বলতে পারবেন।’

গাইবান্ধা জেলা বিএনপির কমিটি করা হয়েছিল ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে। এরপর কেন কমিটি করা হয়নি জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুজ্জামান খান বাবু বলেন, ‘শুধু গাইবান্ধা নয়, দেশের প্রতিটি জেলার বিএনপির কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ। কিন্তু নতুন কমিটি কেন দেওয়া হয় না তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

মির্জা ফখরুল ভারমুক্ত হবেন কবে?
মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ২০১১ সালের ২০ মার্চ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেন খালেদা জিয়া। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়নি তিন বছরের বেশি সময় পরও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসচিব পদের দায়িত্ব পেতে আগ্রহী বিএনপির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। এই অবস্থায় কাউকে দায়িত্ব দিলে কোন্দল নতুন করে বাড়তে পারে, এই আশঙ্কা আছে দলের নীতিনির্ধারণী মহলে। তবে ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে কেউ একজন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব পাবেন, সেটা নিশ্চিত করেই বলছেন শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা।



মন্তব্য চালু নেই