পরিপূর্ণ ঈমান কি শুধুই কালিমা?

হজরত আদম (আ.) -এর উম্মত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আদামু সফিউল্লাহ পড়েছেন, হজরত নুহ (আ.) এর উম্মত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু নুহুন নাজিউল্লাহ পড়েছেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) এর উম্মত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইবরাহিমু খলিলউল্লাহ পড়েছেন, হজরত মুসা (আ.) এর উম্মত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুসা কালিমউল্লাহ পড়েছেন, হজরত ঈসা (আ.) এর উম্মত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ঈসা রুহুল্লাহ পড়েছেন, হজরত দাউদ (আ.) এর উম্মতরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু দাউদু খলিফাতুল্লাহ পড়েছেন। যেমনটা আমরা পড়ি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)। আমাদের অনেকের প্রচলিত ধারণা হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ওপর ঈমান আনার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান হয়ে গেলাম। আমাদের দায়িত্ব শেষ। এবার শুধু নামাজ, রোজা করলে চলবে। মূলত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর প্রতি মৌখিক বিশ্বাসের মধ্যে ঈমানের সংজ্ঞা সীমাবদ্ধ নয়। শরীরের যেমন অনেক শাখা-প্রশাখা, হাত, পা, নাক, কান মুখ, চোখ রয়েছে, তেমনি ঈমানের অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। শরীর আছে চোখ নেই। অন্ধ। শরীর আছে মুখে কথা বলতে পারে না। বোবা। কান আছে শোনে না। বধির। আমরা তাকে প্রতিবন্ধী বলি। ঈমানের বিষয় ঠিক তদ্রূপ। আমাদের ঈমান আনা ও ঈমানের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের কিছু বিষয়ের মধ্যে প্রতিবন্ধিত্ব রয়েছে।

হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, কারও চলি্লশ বাড়ি পর্যন্ত যদি কেউ না খেয়ে ঘুমায় অথবা ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমায় তাহলে ওই ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর পরিপূর্ণ ঈমান আনেনি। তাহলে বোঝা গেল, আমরা যদি প্রতিবেশীর খোঁজখবর না নিই, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এর ওপর পরিপূর্ণ ঈমান আনাই হয় না। অনেকে হয়তো আমার কথার বিপরীতে যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেন, এটা নফল কাজ। আগে ফরজ কাজ হলো, নামাজ রোজা হজ জাকাত ইত্যাদি। ধরে নিলাম সব ঠিক আছে। মহানবী (সা.) এর হাদিস সাক্ষ্য দেয়, যেখানে আমার ঈমান আনাই পরিপূর্ণ হলো না সেখানে অন্যান্য ইবাদতের গুরুত্ব কতটুকু থাকবে। এটা ভেবে দেখার আবশ্যকতা রয়েছে। মহানবী (সা.) হুশিয়ার করে বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি কোনো দিন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আমি ইসলামের সব হুকুম মানলাম। আমার পরিবার-পরিজন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলাম না তাহলে মহান আল্লাহর অপূর্ব নেয়ামত জান্নাত ভোগ করতে পারব না। ঠিক একইভাবে ঈমানের অনেক মৌলিক বিষয় রয়েছে। যার ওপর আমাদের কোনো নজর নেই। যেমন নামাজের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তুমি নিজে রুকু সিজদা কর পাশাপাশি অন্যকে নামাজের দিকে আহ্বান করো। আমি নামাজ পড়লাম অন্য কাউকে নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহিত করলাম। এর মাধ্যমে আমার দায়িত্ব শেষ হয় না।

অনেকে মনে করেন, আমার গচ্ছিত অর্থসম্পদের কিছু অংশ গরিব মিসকিনকে দিয়ে দিলাম। এতে আমার জাকাত আদায় হয়ে গেল। বিষয়টি এখানে শেষ নয়। আপনি অর্থের জাকাত অর্থ প্রদান কিংবা দান করে আদায় করলেন। কিন্তু আল্লাহ আপনাকে জ্ঞান দিয়েছেন। আকল দিয়েছেন। সুন্দর একটি চেহারা দিয়েছেন। এর জাকাত কীভাবে আদায় করবেন। আপনাকে সম্মান দিয়েছেন। আপনি আপনার সম্মানের জাকাত কীভাবে আদায় করবেন। বিষয়গুলো জানতে হবে। ইসলামের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আছে, যা ঈমানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।

আপনি ভালো সুস্বাদু খাবার রান্না করেছেন। দুস্থ প্রতিবেশীর নাকে ঘ্রাণ এলো। প্রতিবেশীর সুস্বাদু খাবার খেতে ইচ্ছা করল। কিন্তু তাঁর সুস্বাদু খাবার ক্রয় অথবা রান্না করার সামর্থ্য নেই। তাহলে যিনি সুস্বাদু খাবার রান্না করেছেন। তাকে তার প্রতিবেশীর ঘরে খাবার কিছু অংশ প্রদান করতে হবে। দেখুন, ইসলাম কত সুন্দর ধর্ম। ইসলামের এসব মৌলিক মানবীয় সুন্দর দিকগুলোর প্রতি আমাদের কোনো নজর নেই। আমার প্রতিবেশীর মেয়ের যৌতুকের জন্য বিয়ে হচ্ছে না। অর্থের অভাবে প্রতিবেশীর চিকিৎসা হচ্ছে না। আমাদের সেদিকে কোনো দৃষ্টি নেই। অথচ মসজিদে টাইলস লাগানোর জন্য আমরা ব্যতিব্যস্ত। যতটা গুরুত্ব দিয়ে মসজিদের টাইলসের টাকা জুমার দিন উঠানো হয়, ততটা গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেশী কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার সন্তানের বিবাহের উদ্যোগ নেয়া হলে সমাজ আরও সুন্দর হতো।

হজরত ওমর (রা.) রাতের অন্ধকারে বের হয়ে প্রতিবেশীর খোঁজখবর নিয়েছেন। নিজের কাঁধে বহন করে ক্ষুধার্ত প্রতিবেশীর ঘরে আটার বস্তা পৌঁছে দিয়েছেন। আমাদের যিনি মসজিদ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন, তিনি নিজের মধ্যে একটা আভিজাত্য বোধ করেন। সভাপতি টাইলসের টাকার যতটা গুরুত্ব দেন, অসহায় প্রতিবেশীর প্রতি কোনো দৃষ্টি দেন না। পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে হলে এভাবেই ঈমানের অন্যান্য শাখা-প্রশাখার প্রতি আমাদের বেশি যত্নবান হতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করার জন্য আদেশ করেছেন। প্রিয় নিউজ



মন্তব্য চালু নেই