পর্ণ আসক্তি থেকে কীভাবে মুক্ত করবেন আপনার সন্তানকে?

ডাঃ হেরল্ড এস. কপ্লেওইচজ হলেন The child mind institute এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি। প্রতিষ্ঠানটি সেবামূলক এবং এর উদ্দেশ্যই হল শিশু এবং তার পরিবারের মাঝে এব সম্পর্ক, মানসিক বোঝাপড়া এবং শিক্ষার নানান সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করা। তিনি লক্ষ্য করেছেন, বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে পর্ণোগ্রাফি অনেক দ্রুতই পৌছে যায় কমবয়সী কিশোরের হাতে। বাবা মায়েরা কিভাবে বিষয়টি সামলাবেন তা বুঝতে পারেন না এবং এমন কিছু ভুল করে বসেন যা উল্টো ক্ষতি করে। তিনি তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এ ব্যাপারে।

সহজভাবে শুরু করুন
খুব সহজভাবে কথা শুরু করুন। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বা বিব্রত ভাব নিয়ে কথা বলা আপনার সন্তানের কাছে ভুল বার্তা দিতে পারে। তার চেয়ে বরং সরাসরি বলুন, “আমি জানি তুমি কি দেখছিলে! আমি এটা নিয়ে বিরক্ত নই। কিন্তু এ বিষয়ে কিছু কথা তোমার জানা দরকার।” মানসিকভাব তৈরী হন যে, বাকি কথাগুলোও সরাসরিই বলবেন।

পর্ণ স্টাররা বাস্তব নয়
আপনার সন্তানের সামনে তুলে ধরুন বাস্তবতা। তাকে জানান, পর্ণ স্টাররা বাস্তব নয়। তাদের যে শারীরিক কাঠামো দেখানো হয় তা সার্জারি করে আকৃতি দেওয়া। কোন সাধারণ মানুষ দেখতে এরকম হয় না। কারই আশা করা উচিত না যে, সে দেখতে এরকম হবে অথবা অন্যেরা দেখতে এমন হবে।

পর্ণ সেক্স সত্যি নয়
বাস্তবে দুইজন মানুষ কখনোই এভাবে একে অপরের কাছে আসে না যেভাবে নীল ছবিতে দেখানো হয়। মানুষের জীবন অনেক জটিল, সম্পর্কের নানান উত্থানপতন থাকে। যৌনতা তার একটি অংশ মাত্র। স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক ব্যক্তিবিশেষে আলাদা হয়। কোন জুটিই ঘন্টার পর ঘন্টা ইন্টারকোর্স করতে পারে না। আর এই ভাষা, আবেগের প্রকাশ, ভাবভঙ্গী সবই ক্যামেরার সামনে সাজানো নাটক মাত্র।

বাস্তবে যৌনতার সাথে মিশে থাকে আবেগ
বেশিরভাগ পর্ণ ছবিতে কোন আবেগ দেখানো হয় না। সেখানে মানুষ যন্ত্রের মত একে অপরের সাথে মিলিত হয়। কিন্তু বাস্তবে যৌনতার জন্য প্রয়োজন হয় ভালবাসার। মানবজাতি তাই অন্যসব প্রাণীকূলের চেয়ে আলাদা। যৌনতার সাথে শুধু ভালবাসা নয়, জড়িয়ে আছে দায়িত্বও। সামাজিক দায়বোধ মানুষের জীবনের সীমারেখা তৈরি করে। সভ্যতার জন্যই এর প্রয়োজন। কিন্তু পর্ণ ছবিতে এসব কিছুই দেখানো হয় না। এটা যৌনতার শিক্ষামূলক গাইডও নয়। কারণ এখানে যা দেখানো হয় তার সবই অতিরঞ্জিত।

মেয়ে সন্তানদের জন্য, যারা পর্ণাসক্ত হয় কম কিন্তু এর প্রভাবমুক্ত থাকতে পারে না। তাদেরকেও কিছু তথ্য দেওয়া আপনার দায়িত্ব।

অসম্মতি জানানো
একটি মেয়ে যেমন শারীরিক সম্পর্কে যেতে পারে তেমনি নাও যেতে পারে। আবার যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার সময়ও সে মত বদলে “না” বলতে পারে। এটা তার স্বাধীনতা। সে কখনোই বাধ্য নয়। পর্ণোগ্রাফিতে পুরুষকে দেখানো হয় নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে এবং নারীকে দেখানো হয় সমর্পিত। বাস্তব জীবনে তা নয়। বাস্তবে “না” মানে “না”।

সবাই একরকম নয়
পর্ণ সিনেমা সবখানেই আছে। সব ছেলেরাই হয়ত পর্ণ দেখে। কিন্তু বাস্তবে তারা এমনভাবে আচরণ করে না। একটি ছেলে একটি স্বাভাবিক মানুষ। পর্ণে দেখানো ছেলেটি অভিনয় করে। বাস্তব জীবনে অভিনয়ের স্থান নেই। এখানে মেয়েটিকে নিজের অবস্থান দাড় করাতে হবে নিজের মূল্যবোধ, আত্মবিশ্বাস এবং ব্যাক্তিত্বের দ্বারা।

নিজের গন্ডি চিনে নিতে হবে
আপনি ছেলে সন্তানের পিতামাতা হন বা মেয়ে সন্তানের তার সাথে নিয়মিত সহজ ভাবে এইসব খুটিনাটি নিয়ে আলোচনা করুন। পর্ণ আসক্তি একটি ভয়াবহ ব্যাপার। এটি মানুষের মাঝের পশুত্বকে জাগিয়ে তুলতে পারে। তাই আগেভাগে নিজের সংকোচ কাটিয়ে কথা বলুন। এখনি তাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনুন।

আমাদের সমাজ বড়ই অদ্ভুত। এখানে একই সাথে বাস করে নীতিনৈতিকতার শিক্ষা আর সমাজের অবক্ষয়কারী ঘৃন্য উপাদানগুলি। আপনি যতই আপনার সন্তানকে নোংরা চোরাবালি থেকে দূরে নিতে চান না কেন সমাজ তাকে নানান আয়োজনে ডুবতে বাধ্য করতে চাইবে। প্রযুক্তি এযুগের অনেক বড় চাহিদা। কিন্তু চাহিদাকে সখ বা বিলাসিতার পর্যায়ে নিয়ে যাবেন না। এতে রক্ষা পাবে আপনার সন্তানের মূল্যবোধ, মনুষত্ব।



মন্তব্য চালু নেই