পর্যাপ্ত ঘুম না হলে… জানুন সাম্প্রতিক গবেষণালব্ধ তথ্য

শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের পর্যাপ্ত ঘুম হয়না তাদের স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থুলতা এবং এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারও হতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে কেন এমন হয় সে বিষয়টি এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারেন নি বিশেষজ্ঞরা। নতুন গবেষণায় এর একটি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তারা বলছেন – পর্যাপ্ত ঘুম না হলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া পরিবর্তিত হয়ে যায়। যার কারণে মৌলিকভাবে আমাদের বিপাকও পরিবর্তিত হয়, যা শারীরিক প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলে।

সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুম গবেষক এবং গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক জনাথন স্যাডারনেস বলেন, ‘আমাদের অন্ত্রে যে লক্ষ লক্ষ অণুজীব বাস করে তারা আমাদের বিপাক ক্রিয়া, ইমিউন সিস্টেম এবং শারীরিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হতে সাহায্য করে’। অন্ত্রের অস্বাস্থ্যকর অণুজীবের সাথে ইনফ্লামেটরি বাউয়েল ডিজিজ, অ্যালার্জি, নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ এবং বিপাকীয় রোগের পাশাপাশি স্থুলতা ও ডায়াবেটিসের সম্পর্ক আছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

স্যাডারনেস ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘নতুন এই গবেষণাটিতে প্রথমবারের মত পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠে’।

নিদ্রাহীনতা আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে বিকল করে দেয় :

এই গবেষণাটির জন্য ৯ জন ব্যক্তিকে একটি ল্যাবে রাতে থাকার জন্য বলা হয়। এর মধ্যে ২ রাত তাদেরকে সাড়ে আট ঘন্টা এবং পরবর্তী ২ রাত সাড়ে চার ঘন্টা ঘুমাতে দেয়া হয়।

এই গবেষণাটি যদিও খুব কম মানুষ নিয়ে করা হয়েছিলো, কিন্তু গবেষকেরা ঘুমের মাত্রা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার উপর কী প্রভাব ফেলে তা তারা নির্ণয় করতে পেরেছিলেন। এই গবেষণায় অংশগ্রহণের এক সপ্তাহ পূর্ব থেকেই তাদের পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত খাবার খেতে দেয়া হয়েছিলো। যার কারণে তাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া একটি স্বাভাবিক পর্যায়ে ছিল।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, কম ঘুমের কারণে ব্যক্তির অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তন হয়না। কিন্তু কম ঘুমের কারণে ব্যক্তির অন্ত্রের নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া প্রজাতির পরিবর্তন হতে পারে। নির্দিষ্ট এই ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ প্রায় ৫০% কমে যেতে পারে এবং এটি হতে পারে শুধুমাত্র ২ দিন কম ঘুমানোর কারণেই।

স্যাডারনেস বলেন, এই পর্যবেক্ষণটি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, কারণ অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভুল ভারসাম্যই কিছু মানুষের ক্ষেত্রে স্থুলতা সৃষ্টির বড় কারণ।

যারা রাতে পর্যাপ্ত ঘুমায়নি তাদের অন্ত্রে নির্দিষ্ট প্রজাতির যে ব্যাকটেরিয়ার পাওয়া যায় তা পূর্বে স্থুলকায় বা অন্ত্রের রোগ ছিল এমন মানুষদের মধ্যেও পাওয়া গিয়েছিলো।

স্যাডারনেস বলেন, ‘অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় প্রাকৃতিক উপাদান। এরা ফাইবারকে ভাঙতে সাহায্য করে, নাহলে ফাইবার হজম হতো না। তারা পুষ্টির আহরণেও সাহায্য করে’।

গবেষণায় আরেকটি মজার তথ্য পাওয়া যায় যে, তাদের মধ্যে ২০% এর মধ্যে ইনসুলিনের প্রভাব কম সংবেদনশীল হয় কম ঘুমের পর। যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে যারা বেশি ঘুমিয়ে ছিলেন তাদের তুলনায়।

স্যাডারনেস বলেন, পূর্বের গবেষণায় ও দেখা গেছে যে, ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা ঘুমের ঘাটতির সাথে সম্পর্কিত। তার নতুন গবেষণায় এটি বলা হয়নি যে, অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তনের কারণেই এটি হয়ে থাকে। এই সম্পর্কটি এখনো পর্যবেক্ষণের মধ্যেই রয়েছে। কারণ সময়ের সাথে সাথে ইনসুলিনের অসংবেদনশীলতা ডায়াবেটিস হওয়াকে উৎসাহিত করে।

স্যাডারনেস বলেন, কয়েক রাত অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তনের সাথে বিপাকীয় রোগের সম্পর্ক আছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য আরো দীর্ঘ গবেষণার প্রয়োজন। কিন্তু নতুন তথ্যটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র : হাফিংটন পোষ্ট



মন্তব্য চালু নেই