পার্কে হকার পুনর্বাসন : আইনি প্রক্রিয়ায় যাবেন পরিবেশবাদীরা

রাজধানীর গুলিস্তান পার্কে মহানগর নাট্যমঞ্চের পাশে অস্থায়ীভিত্তিতে হকারদের পনর্বাসন করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দিক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ নিয়ে নাগরিকদের পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। তারা পার্কটি রক্ষা করতে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন। জাগো নিউজের সৌজন্যে।

সম্প্রতি নগরীর গুলিস্তানের ফুটপাত দখল করতে গিয়ে হকারদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যামাণ আদালত ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এ সময় দলবল নিয়ে হকাররা নগরভবনে চলে আসেন। তাদের একটি অংশ মেয়র দফতরেও ঢুকে পড়েন। পরে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মহানগর ছাত্রলীগের একটি দল হকারদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যান। এতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ছাত্রলীগের দুই নেতা। এ ঘটনায় তিব্র সমালোচনার মুখে পড়েন মেয়র সাঈদ খোকন। পরে ছাত্রলীগের ওই দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।

উদ্ভুত পরিস্থিতির একদিন পর গত শনিবার নগরভবনে হকার পুর্বাসন বিষয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সাঈদ খোকন। এ সময় তারা গুলিস্তান পার্কের (মহানগর নাট্যমঞ্চ বা কাজী বশির মিলনায়নের পাশে) খালি জায়গায় গুলিস্তানের ২ হাজার ৫ শত ৬ জন হকারকে অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন।

পরে মেয়র গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, মহানগর নাট্যমঞ্চটি খুব বেশি ব্যবহার হচ্ছে না। এ থেকে রাজস্বও আসে কম। আমরা এটার পাশে গুলিস্তানের হকারদের অস্থায়ীভিত্তিতে পুনর্বাসন করতে একমত হয়েছি। পরবর্তীতে কোনো মার্কেট কিংবা বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে তাদের স্থায়ী পুর্বাসন করবো।

মেয়রের এমন সিদ্ধান্তকে নগরবাসীর পাশাপাশি মেনে নিতে পারছেন না পরিবেশবাদীরাও। তারা বলছেন, এটা কোনোভাবেই আইনসঙ্গত নয়। করপোরেশন যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যে কেউ আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। তাই এর বিরুদ্ধে আজ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে মাঠে নামছেন পরিবেশবাদীরা। তাদের এসব প্রতিবাদের পর ডিএসসিসি এই উদ্যোগ থেকে সরে না দাঁড়ালে আইনি প্রক্রিয়ায় যাবেন পরিবেশবাদীরা, এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও সুন্দরবন রক্ষা কমিটির সদস্য শরীফ জামিল বলেন, ২০০৪ সালে হাইকোর্ট একটি রায় দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে- কোনো খেলার মাঠ কিংবা পার্ক অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। সিটি করপোরেশন যদি এমন উদ্যোগ নিয়ে থাকে তাহলে তারা আদালত অবমাননা করবে। তাদের এ উদ্যোগ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, ঢাকায় কি পরিমাণ মাঠ, পার্ক, জলাশয় বা উন্মুক্ত স্থান রয়েছে সেগুলোর তালিকা কারো কাছে নেই। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে একটা তালিকা তৈরি করে দিয়েছিলাম। সেগুলোতে নতুন করে হকার পুর্বাসন করা হচ্ছে। দুদিন পর আবার বস্তিবাসী। এরপর ছিন্নমূল মানুষের পুর্বাসন লাগবে। এরপর মাদকাশক্ত পুর্বাসন। এভাবেই চলতে থাকবে। সরকার চাইলে তাদেরকে ভাড়া ভবনে পুর্বাসন করতে পারে। খেলার মাঠে কেন ?

শরীফ জামিল বলেন, তারা গাছ লাগিয়ে সবুজ নগরীর স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু পানি না থাকলে গাছ বাঁচবে কিভাবে ? নগরীতে একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসলে মানুষ কোথায় গিয়ে থাকবে ? তারা যাই খুশি তাই করছেন। আরবান ইউটিলিটি বলতে কোনো কনসেপ্ট সরকারে মাথায় নেই বলেও মন্তব্য করেন এই পরিবেশবাদী।

তিনি আরো বলেন, মেয়র হিসেবে যে কোনো অনগ্রসর মানুষকে পুর্বাসনের দায়িত্ব রয়েছে তার। কিন্তু সাধারণ মানুষের অধিকার খুন্ন করে নয়। তিনি পুর্বাসন করতে গিয়ে পার্ক নষ্ট করতে পারেন না। মেয়র তো মানুষের অধিকারকে হুমকির মুখে পেলতে পারেন না। পার্ক হচ্ছে একটা জনবহুল এলাকার জন্য বিশাল সম্পদ। এমনতো নয় যে, নগরবাসীর পার্কের চাহিদা খুবই কম। যে পার্কগুলো রয়েছে সেগুলোও বেদখল।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষিত মানদণ্ডের চেয়ে ঢাকা শহরে মাথাপিছু উন্মুক্ত সবুজ অঞ্চলের পরিমাণ খুবই কম। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় এ সঙ্কট আরো প্রকট। তাছাড়া উন্মুক্ত খেলার মাঠ ও জলাশয় না থাকায় দিনদিন নগরীর ভূতলের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বাসাতে তাপমাত্র বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দিনদিন বাসবাসে অযোগ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা। এভাবে চলতে থাকলে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

নিজের মালিকানাধিন মাঠ ও পার্ক নিয়ে তৈরি করা ডিএসসিসির একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত গুলিস্তানের এ পার্কটির আয়তন ৩ দশমিক ৫০ একর। এটি ডিএসসিসির নিজস্ব রেকর্ডভুক্ত সম্পত্তি। পার্কের চারিদিকে বাউন্ডারি রয়েছে। ভেতের নেই কোনো অবৈধ স্থাপনা কিংবা দখল। করপোরেশনের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে এর সার্বিক তত্ত্বাবধান করা হয়। সর্বসাধারণের জন্য পার্কটি উন্মুক্ত।

দেড় কোটি মানুষের এই মহানগরীতে খেলার মাঠ একেবারেই নগণ্য। ঢাকা সিটি করপোরেশনের সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ বা পার্ক থাকার কথা। আর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকার প্রতিটি সেক্টরে একটি খেলার মাঠ বা পার্ক রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। উপরন্তু যে কয়টি রয়েছে সেগুলোও উদ্ধার কিংবা চলাচল উপযোগী করতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে ফোন করলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি।



মন্তব্য চালু নেই