পা দিয়ে লিখেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন

হাত নেই। পা দিয়ে লিখে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের চন্দ্রখানা গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ময়নার ছেলে মানিক রহমান।

ফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে।

ফুলবাড়ী বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের ৬নং কক্ষের একটি টেবিলের ওপর বসে পা দিয়ে লিখে তার পরীক্ষা দেওয়ার এই অসাধারণ বিষয়টি পুরো এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়েছে।

পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব, পরীক্ষা তদারকির দায়িত্বে থাকা টিমের সদস্য ও পরীক্ষা কক্ষ পরিদর্শক সকলেই তার এই ইচ্ছা শক্তি দেখে অবাক হয়েছেন।

পরীক্ষা তদারকীর দায়িত্বে থাকা ফুলবাড়ী উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম বলেন, ওর অদম্য ইচ্ছার মূল্যায়ন করা দরকার। আমি চাই, তার স্বপ্ন পূরণ হোক।

৬ নং পরীক্ষা কক্ষের পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক সন্তোষ কুমার রায় বলেন, মানিক পা দিয়েই সব পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবেই দিয়েছে। ওর ভদ্রতা আর খাতায় সুন্দর লেখা ও মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি আমাদের অভিভূত করেছে। ওর মতো ভদ্র পরীক্ষার্থী হলে পরীক্ষা কক্ষগুলোতে কোনো শব্দ বা সমস্যা হতো না।

মানিকের বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মর্জিনা বেগম জানান, মানিক বিদ্যালয়ের অন্যান্য পরীক্ষাগুলোও পা দিয়েই লিখে দিত। পরীক্ষার নির্ধারিত সময় দেওয়া থাকলেও সেই সময় শেষ হওয়ার অনেক আগেই সে খাতা জমা দিত।

তিনি বলেন, মানসিক দিক দিয়ে অদম্য ইচ্ছার অধিকারী মানিক।

মানিকের মা রাবাইতারী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারি অধ্যাপক মরিয়ম বেগম জানান, মানিক জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী হলেও সে নিজেকে স্বাভাবিক মনে করে পথ চলছে। তার দু’হাত না থাকলেও সে পা দিয়েই প্রায় সব কিছুই করতে পারে। শধু খাওয়া, গোসল, টয়লেটে আমাদের সাহায্য করতে হয়।

তিনি বলেন, মানিক রহমান আমাদের প্রথম সন্তান। তার ইচ্ছা শক্তি দেখে আমরা তাকে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করি। সে অদম্য মেধার অধিকারী। আশা করি সে ভালো ফল করবে।

মানিকের পিতা মিজানুর রহমান ময়না বলেন, মানিক রহমানের গতিবিধি আমরা তার অভিভাবক হিসেবে লক্ষ্য করছি। তার ইচ্ছার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। সে ভালোর দিকে গেলে আমরা তার ভবিষ্যত স্বপ্ন পূরণে চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, মানিক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় সে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উঠলে তাকে একটি কম্পিউটার কিনে দেব।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে মানিক অকপটে বলে, ‘আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবো।’



মন্তব্য চালু নেই