পুলিশের জীবন বাঁচাতে গিয়ে ওরাই এখন হাজতে

আশুলিয়ায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হওয়ার পর মুকুল হাসান নামের পুলিশের এক সদস্য স্থানীয় শুভেচ্ছা হোটেলের ভেতরে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। একই ঘটনায় গুরুতর আহত নূরে আলম নামে অপর এক সদস্য দৌড়ে কোনওমতে মহাসড়কটি অতিক্রম করেন, তবে বিপরীত পাশে গিয়েই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

এমন নির্মম দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি কনকদাস, ফারুক ও সৈকতসহ আরও বেশ কয়েকজন স্থানীয়। দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়া পুলিশ সদস্যদের শরীরের ক্ষত স্থানে গামছা দিয়ে বেঁধে তাদেরকে ভ্যানে করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। হাসপাতালের চিকিৎসকরা চেষ্টা করার আগেই ভ্যানেই মৃত্যু হয় বগুড়ার মুকুল হাসানের। তবে সময়মতো আনতে পারায় প্রাণে বেঁচে যান নূরে আলম। তবে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে যারা এদের হাসপাতালে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন তাদেরই ধরে থানা হাজতে আটকে রেখেছে পুলিশ। এ ঘটনার তিন দিন পার হয়ে গেলেও তারা এখনও হাজত থেকে ছাড়া পাননি।

গত বুধবার সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাড়ইপাড়া এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে সন্ত্রাসীদের হামলা চালিয়ে দুই কনস্টেবলকে গুরুতর আহত করে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। সূত্র জানায়, গুলির শব্দ পাওয়ার পরই মহাসড়কের বিপরীত পাশে থাকা বিআরটিসির চালক কনক দাসসহ আরও কয়েকজন দৌড়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এসময় পুলিশের সদস্য মুকুলকে হোটেলের ভেতর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে ও নূরে আলমকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে কনক দাস, লালন, সাভার পরিবহনের সুপারভাইজার ফারুক ও হোটেলের মালিক সৈকত তাদের শরীরের ক্ষতস্থানে গামছা পেঁচিয়ে একটি ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে সন্ত্রাসীদের হামলার খবর পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ অভিযান শুরু করলে শুরুতেই এদেরকে ধরতেই অভিযান শুরু করে।

সেদিন দুপুরেই আশুলিয়া বাড়ইপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে শুভেচ্ছা হোটেলের মালিক সৈকত ও বৃহস্পতিবার রাতের পুথক অভিযানে সাভার পরিবহনের সুপারভাইজার ফারুক ও বিআরটিসির চালক কনক দাসসহ ৭জনকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হলেও সৈকত ও ফারুককে শনিবার দুপুর পর্যন্ত থানা হাজতে আটক করে রেখেছে পুলিশ।

শুভেচ্ছা হোটেলের মালিক সৈকতের স্ত্রী হাফিজা বেগম বলেন, তার স্বামীর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ এলাকায়। আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকায় মহাসড়কের পাশে তার স্বামী ও স্বামীর বড় ভাই মিন্টু মিলে খাবার হোটেল পরিচালনা করতেন। বুধবার সকালে হোটেলে তার স্বামী একাই ছিলেন। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর তার স্বামী ও আশপাশের আরও কয়েকজন স্থানীয় মিলে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার আক্ষেপ, যাদের জীবন বাঁচানোর জন্য তার স্বামী এগিয়ে গেলেন তাদেরই ধরে তিন দিন যাবত আশুলিয়া থানা হাজতে আটকে রেখেছে পুলিশ।

অন্যদিকে সাভার পরিবহন বাসের সুপারভাইজার ফারুকের মা জাহানারা বলেন, তার ছেলে ফারুক জখম হওয়া পুলিশ সদস্য মুকুলের শরীরের ক্ষত স্থানে গামছা পেঁচিয়ে রক্ত থামানোর চেষ্টা করে। পরে পুলিশের দুই সদস্যকেই ভ্যানে উঠিয়ে স্থানীয় ফাতেমা হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর সেখান থেকে তাদের সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপরেও পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে বাসা থেকে তার ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে থানায় আটক করে রেখেছে। এখন নাকি তার ছেলেকেও এই মামলার ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

তিনি বলেন, তার ছেলে মানুষের কাজ করেছে, আহত পুলিশদের উদ্ধার করেছে। সেটা সবাই দেখেছে। এখন তাকে বিনাদোষে হাজতে আটকে রাখার মানে কী জানতে চান তিনি।

আহতদের উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসা দু’জনকে থানা হাজতে আটকে রাখার কারণ কী জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিন কাদির এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে রাজি হননি। দুই জনকে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়ে থানা হাজতে আটক করে রাখার বিষয়ে তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপক সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

এব্যাপারে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) দীপক সাহা বলেন, পুলিশ হত্যার ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে ফারুক ও সৈকতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে আর এ কারণেই তাদেরকে এখনও থানায় রাখা হয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় থানা হাজতে আটকে রাখার কারণ কি জানতে চাইলে ‘তদন্ত চলছে’ বলেই প্রসঙ্গটি শেষ করে দেন।বাংলাট্রিবিউন



মন্তব্য চালু নেই