পুলিশে সততার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ‘বাবুল’ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি

পদন্নোতি পাওয়ার পর প্রথম কার্যদিবসেই জীবন সঙ্গিনীকে হারিয়েছেন। কর্মজীবনে ছিলেন সুপারস্টার। ব্যক্তিগত জীবনেও কম ছিলেন না। মা হারানো দুই সন্তানের বাবা-মা উভয়ের ভূমিকা একাই পালন করছিলেন তিনি। তবে মঙ্গলবার বাংলাদেশ পুলিশের সততার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এই ‘সুপারস্টারের’ কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার দেয়া অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করেছে। যদিও বাবুল আক্তার বলেছেন, তাকে জোর করে অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। অব্যাহতিপত্র বাতিলের সুপারিশও করেছিলেন তিনি। তবে কাজ হয়নি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের (এডিসি) চেয়ে জামায়াত-শিবির আর জঙ্গিদের ‘জম’ বলেই জানতো সবাই। পদত্যাগটা জোর করে হোক আর স্বেচ্ছায় হোক বাস্তবতা হচ্ছে ‘সুপারস্টার’ বাবুল আক্তার আর বাংলাদেশ পুলিশে নেই। কোন মামলার তদন্তে আর দেখা যাবে না তাকে।

অথচ একসময় ‘আইকন’ বাবুল আক্তারকে নিয়ে গর্ব করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে রাজারবাগ প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কার তুলে দেওয়ার আগ মুহূর্তে পুলিশের তৎকালীন ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বাবুল আক্তারকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এই বলে, ‘বাবুল আমাদের সবচেয়ে সাহসী অফিসার।’

আইজিপির কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী তখন বাবুলকে বাহবা দিয়েছিলেন। বাবুল আক্তার দ্বিতীয় দফা স্যালুট দেন প্রধানমন্ত্রীকে। এসময় প্রধানমন্ত্রী বাবুলের বুকে পরিয়ে দেন ‘বিপিএম’ মেডেল।

পরিশ্রমী, দায়িত্বের প্রতি একনিষ্ঠতা এবং সততার জন্য তিনি পেয়েছেন সাফল্যের নানা স্বীকৃতি। ২০০৮ সালে সুপারস্টার ‘বাবুল’ রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম (সেবা), ২০০৯ সালে পিপিএম (সাহসিকতা), ২০১০ সালে আইজিপি ব্যাজ, ২০১১ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল পুরস্কার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেলই (বিপিএম-সাহসিকতা) যার প্রমাণ।

সর্বশেষ বেসরকারি পর্যায়ে ২০১২ সালে সিঙ্গার-চ্যানেল আই (সাহসিকতা) পুরস্কার লাভ করেন বাবুল আক্তার। এর মধ্যে চার-চারবার অর্জন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের সেরা সহকারী পুলিশ সুপারের (এএসপি) মর্যাদা।

চলতি বছরের জুনে দুর্বৃত্তের গুলিতে তার স্ত্রী মিতু মারা যান। এ ঘটনার কয়েকদিন পর বাবুলের পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাবুল আক্তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে বাবুলের দাবি, পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন তিনি। পদত্যাগপত্র বাতিলের জন্য বাবুল ব্যাপক তোড়জোড় করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। অব্যাহতিই দেয়া হল তাকে।

তবে নিজেকে আবারো ‘সুপারস্টার’ প্রমাণ করলেন বাবুল। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সংবাদমাধ্যম কিংবা সাংবাদিকদের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘টু শব্দটুকু’ করেননি তিনি। সাংবাদিকরা নানাভাবে তার কাছে জানতে চেয়েছেন পদত্যাগের বিষয়ে। তবে এ বিষয়ে এবং পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি তিনি। এমনকি পদত্যাগপত্র গ্রহণ ও তার অব্যাহতির পরও সাংবাদিকদের ফোন ধরেননি তিনি। তিনিই পুলিশের আসল ‘সুপারস্টার’।



মন্তব্য চালু নেই