পুলিশ বিভাগে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান

পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে পুলিশ বিভাগে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। যেসব পুলিশ সদস্যের চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং বিভাগীয় মামলা রয়েছে তাদেরই বাধ্যতামূলক চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হতে পারে।

এ ছাড়া বিভাগীয় মামলায় যেসব পুলিশ সদস্য দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় চাকরিচ্যুত করা হবে। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এ রকম প্রায় ৫০০ পুলিশ সদস্যের একটি তালিকা এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কৌশলে বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো এবং পদোন্নতি প্রদান রুটিন কাজ। আমি সারা দেশের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে তাদের পৃথক তালিকা চেয়েছি। কারণ, যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাক্ষ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে আইনগত কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এজন্য এরই মধ্যে পুলিশ প্রশাসনে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যারা পদোন্নতি এবং সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার যোগ্য তাদের অবশ্যই দেওয়া হবে। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

অপরদিকে, এসব প্রসঙ্গ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ এক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, পুলিশ প্রশাসনকে গতিশীল করতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনে পদোন্নতি ও সিলেকশন গ্রেড দেওয়ার প্রস্তাব পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পাঠানো হলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবে। এজন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পরই পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর জন্য যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে তাদের তালিকা চেয়েছেন। এ ছাড়া যারা সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার যোগ্য তাদেরও একটি তালিকা তিনি চেয়েছেন।

সূত্র বলছে, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা পদোন্নতি এবং সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন তাদের পদোন্নতি ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান করা হবে। আর যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে তাদের মধ্যে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর হয়েছে, তাদের বাধ্যতামূলক চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হবে।

সূত্রটি আরো জানায়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিষ্ক্রিয়তা, গ্রেফতার বাণিজ্য, ছিনতাই, জামায়াত ও চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আঁতাত, দাফতরিক আদেশ না মানার ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে, গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশের মধ্যে যে চরম অরাজকতার ঘটনা ঘটে, তাতে অসংখ্য মামলা হয় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে। আর এ মোক্ষম সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে বেপরোয়া আটক-বাণিজ্যে নামে পুলিশ।

প্রধানমন্ত্রীর দফতরে সম্প্রতি জমা দেওয়া দুটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৯টি জেলার দেড় শতাধিক পুলিশ সদস্য মামলায় আসামি দেখিয়ে আটকের পর ঘুষের বিনিময়ে ২৫২ জনকে ছেড়ে দেন। আটক এবং ছেড়ে দেওয়াদের মধ্যে রয়েছে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী, সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাত ও জুয়াড়ি।

এর আগেও একটি গোয়েন্দা সংস্থা ১৭৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আটক বাণিজ্যের প্রতিবেদন পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এ তালিকায় নাম রয়েছে পুলিশ সুপার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশে ডিআইজি, এসপি, অ্যাডিশনাল এসপি, সার্কেল এএসপি এবং বিভিন্ন থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা সরকারি আদেশ অমান্য করেছেন। এ ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে সরকারি দলের এমপি ও নেতাদের অভিযোগও আমলে নেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া বিগত সরকার ও চারদলীয় জোট সরকারের সময় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিএসএস পরীক্ষায় পাস করিয়ে পুলিশের এএসপি পদে চাকরি দেওয়া হয়। সরকার ওইসব পুলিশ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করছে। একই সঙ্গে যে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে তা দ্রুত নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ারও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার।



মন্তব্য চালু নেই