পৃথিবীর সব পোকা মরে গেলে কী হবে? জেনে রাখুন চমকে যাবার মত একটি সত্য!

পোকা সব মরে গেলে কী হবে? খুব ভালো হবে! একেবারে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচবেন আপনি। কিন্তু আসলে কী তাই? সব পোকা মরে যাবার ফলাফল কী ভালো হবে, নাকি খারাপ?

পোকা যেমনই হোক না কেন, তার প্রতি মানুষের ঘৃণার ভাবটা একই রয়ে যায়। নেহায়েত প্রজাপতি ধরণের সুন্দর কোন পোকা না হলে ছিঃ ছিঃ করে ওঠেন সবাই। আসলে কিন্তু আমাদের ক্ষতি করে এমন পোকা নেহায়েতই কম। আর পৃথিবীতে পোকা না থাকলে আমাদের জীবনটাই হতো অন্যরকম।

“সব পোকা অদৃশ্য হয়ে গেলে আমাদের পৃথিবী ধ্বসে পড়বে- আর কোনোভাবে এটা বলার উপায় নেই” জানান গজি ডেভিডোভিচ, ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনার এক অধ্যাপক।

এটা সত্যি যে সব পোকা মারা গেলে আমাদের আর মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবার সমস্যা থাকবে না। মাথার চুলে উকুন হবে না। কৃষকদেরও মাথে কীটনাশক ছড়ানো লাগবে না। কিন্তু এসব উপকার হলেও আসলে তার কোন মানে থাকবে না। কারণ সব পোকা মরে গেলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে!

কী কারণে এই কথা বলছি? তার মূল কারণ হলো গাছপালা। পৃথিবীর ৮০ শতাংশ গাছ হলো অ্যাঞ্জিওস্পার্ম বা সপুষ্পক, অর্থাৎ এদের বংশবিস্তারের জন্য ফুল ফোটে। সেই ফুল থেকে ফল হবার জন্য পরাগায়ন হতে হয় আর এর জন্য দরকার হয় পোকামাকড়ের। অল্প কিছু ক্ষেত্রে বাতাস, পানি, পাখি বা বাদুড় এমনকি মানুষের মাধ্যমে পরাগায়ন হয় বটে। কিন্তু তা নেহায়েতই কম। কিন্তু বিপুল পরিমাণে পরাগায়নের জন্য মৌমাছি, প্রজাপতি এবং অন্যান্য পোকার ওপরই আমাদের ভরসা করতে হয়। পোকা না থাকলে এসব গাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে একটা সময়। এসব গাছ থেকে মানুষের খাদ্যের ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ আসে। এর মাঝে ধান ও গমের মতো প্রধান খাদ্যগুলো আছে। আবার আমরা যেসব গবাদি পশু, হাস-মুরগী এবং মাছ খাই তাদেরও খাবার আসে বিভিন্ন গাছ থেকে। সুতরাং পোকা না থাকলে এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যে ঘাটতি পড়বে, মানুষ না খেয়ে মারা পড়বে। প্রচুর পরিমাণে স্তন্যপায়ী এবং পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

শুধু তাই না, যখন পোকা-বিহীন এই পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে মৃত গাছপালা এবং প্রাণী পড়ে থাকবে, তখন এদের পচে যেতেও সময় লাগবে বেশি। কারণ ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঞ্জাই এর পাশাপাশি পোকারাও ডিকম্পোজার হিসেবে কাজ করে।

এগুলো তো গেলো বড় বড় সব দুর্যোগের কথা। এবার ছোট একটা অভাবের কথা বলি। পোকা না থাকলে আমাদের বিলাসিতার অন্যতম দুই উপাদান হাওয়া হয়ে যাবে। এই দুইটি হলো রেশমি কাপড় আর মধু। আপনি যে শখ করে সিল্কের শাড়ি বা পাঞ্জাবি শরীরে চড়াচ্ছেন, তা আসছে রেশম পোকা থেকে। আর মধু যে মৌমাছি থেকে আসে তা সবাই জানে।

পোকামাকড় মরে যাবার এই জিনিসটা অবশ্য একেবারে অবাস্তব নয়। বর্তমানে যে পরিমাণে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে এতে অনেক পোকা বিলুপ্তির পথে হাঁটছে। শুধু তাই না, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণেও অনেক পোকার জীবনচক্রে দেখা দিচ্ছে বিচ্যুতি। পোকারা শীতকালে ঘুমিয়ে পড়ে বটে। কিন্তু এখন যে অবস্থা হচ্ছে, তাতে মনে হয় তারা আর সেই ঘুম থেকে নাও উঠতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই