পেটের দায়ে গ্রিসে বাড়ছে দেহ ব্যবসা

নিজের ১২ বছরের মেয়েকে এক দালালের হাতে বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন মা। মাস খানেক আগে গ্রিসের সেই ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা ইউরোপে। মেয়েকে বিক্রি করার অভিযোগে ইতোমধ্যে ৩৩ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে ওই মায়ের। সঙ্গে ১০ লাখ ইউরো জরিমানাও। বছর চুয়াল্লিশের সেই নারী রাতারাতি একটা নামকরণও হয়ে গিয়েছিল। ‘মনস্টার মম’। পুরো ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম সেই নামেই ডাকতে শুরু করেছিল তাকে।

টাকার জন্য কী করে এক মা তারই সন্তানকে এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির হাতে বিক্রি করতে গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্ন তুলে ওই নারীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল গ্রিসের সমাজ। আর এই একই ঘটনা নাড়া দিয়েছিল এথেন্সের প্যানটেইয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক গ্রেগরি লাক্সসকে। দিন কয়েক আগে তারই করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, শরীর বিক্রিতে এখন গ্রিক নারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

লন্ডনের একটি দৈনিকের বরাত দিয়ে কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্প্রতি এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। আর তার পরই প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাসের ব্যয় সঙ্কোচ নীতি নিয়ে। আগে যেখানে পূর্ব ইউরোপের নারীরাই গ্রিসের দেহ ব্যবসায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন, সেই জায়গাটা এখন চলে গেছে সে দেশের নারীদের হাতে।

লাক্সসের কথায়, ‘অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে ৩০ মিনিটের জন্য শরীর বেচে যে টাকা তারা পাচ্ছেন, তা দিয়ে হয়তো একটা মাত্র স্যান্ডউইচ কেনা যাবে। বা একখানা চিজ। কিন্তু উপায়ন্তর না পেয়ে সেই পেশাই এখন আঁকড়ে ধরছে দেশের নারী সমাজ।’

মোট ১৭ হাজার যৌন কর্মীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, গ্রীসে এখন সে দেশের মেয়েরাই যৌন পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। লাক্সস জানিয়েছেন, দেশে যৌন কর্মীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই এখন গ্রিক নাগরিক।

ছ’বছর ধরে টানা ব্যয় সংকোচের পথে হেঁটেছে গ্রীসের সরকার। সরকারি সুযোগ-সুবিধা কাটছাঁট করতে করতে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শুধুমাত্র পেট চালানোই নয়, কর দেওয়ার জন্যও এখন দেহ বেচতে পিছপা হচ্ছেন না দেশের মেয়েরা। লাক্সস জানিয়েছেন, আর্থিক মন্দা শুরুর সময় এক যৌনকর্মী ৫০ ইউরো নিতেন। আর এখন সেই সংখ্যাটাই গিয়ে ঠেকেছে ২ ইউরোয়।

যৌন পেশা গ্রীসে বৈধ। কিন্তু গোটা দেশজুড়ে যে কটা যৌনপল্লি রয়েছে, তার অধিকাংশেরই লাইসেন্স নেই। তার কথায়, ‘পরিস্থিতি যা, তাতে এই সংখ্যাটা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।’

তিনি জানালেন, এখন যে সব মেয়ে যৌন পেশায় আসছে, তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৭ থেকে কুড়ির মধ্যে। লাক্সসের আকুতি, ‘এ ভাবে উদাসীন থাকলে দেশে মেয়েদের পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হবে। সরকারের উচিত অবিলম্বে এ নিয়ে কিছু করা।’



মন্তব্য চালু নেই