পোশাক খাতের করপোরেট ট্যাক্স কমানোর উদ্যোগ

তৈরি পোশাক খাতের করপোরেট ট্যাক্স কমানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।

পাশপাশি এ খাতে রপ্তানির ওপর প্রদত্ত প্রণোদনা দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

রোববার সকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে পোশাক শিল্পে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এসব আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমইএ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে করপোরেট ট্যাক্স ১০ শতাংশ পুনর্র্নির্ধারণের পাশাপাশি নগদ সহায়তা প্রদানে অডিট কর্তৃপক্ষের অযথা হয়রানি থেকে মুক্তি, থার্ড পার্টি কর্তৃক অডিট ব্যবস্থা বাতিলের দাবি জানান তিন সংগঠনের নেতারা।

দেশে বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পে করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ নির্ধারিত রয়েছে। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এ হার নির্ধারণ করা হয়। এর আগে এ হার ছিল ১০ শতাংশ।

বৈঠকের শুরুতেই বিজিএমইএ নেতারা তৈরি পোশাক শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। এ সময় তারা বলেন, চলতি বছর তৈরি পোশাক খাত অত্যন্ত দুরবস্থার মধ্যে অতিক্রম করছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আগের হারেই করপোরেট ট্যাক্স পরিশোধ এবং গত অর্থবছর (২০১৪-১৫) থেকেই এটা কার্যকর করার দাবি জানান তারা। এটা হলে এ খাতে ‘বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে’ বলেও দাবি করেন তারা।

বিজিএমইএ নেতাদের দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২০১৪ সালে অবরোধ-হরতালে পোশাক শিল্পের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অন্য সব দেশের পণ্যের দাম বাড়লেও রানা প্লাজার ঘটনার কারণে বাংলাদেশের পণ্যের দাম এক সেন্টও বাড়েনি। অন্যদিকে ইউরোর দর পতনের কারণেও পোশাক শিল্প মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের টাকাও দীর্ঘদিন ধরে পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে না এবং এটা এখন স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, করপোরেট ট্যাক্স কমানোর বিষয়টি অনেক জটিল সমস্যা। আগের অর্থবছরের ৯৪ শতাংশ এবং চলতি বছরের ৬৪ শতাংশ আয়কর হিসাব ইতোমধ্যে জমা পড়েছে। এ অবস্থায় গত বছরেরটা কিছু করা সম্ভব নয়। আমি চেয়েছিলাম, এ বছর কিছুটা কনসেশন করবো, কিন্তু সেটাও পারবো না। আগামী ১ জুলাই থেকে কিছুটা কমানো যেতে পারে। তবে সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এর জবাবে বিজিএমইএ নেতারা বলেন, এ বছর এটা কমানো যাবে না। বিষয়টি এমন নয়। আয়কর রিটার্ণ যারা জমা দিয়েছেন, তাদেরটা এখনো অ্যাসেসমেন্ট হয়নি। সুতরাং যে রেটে আপনি বলে দেবেন সেই রেটেই অ্যাসেসমেন্ট করা হবে। আর যাদেরটা অ্যাসেমেন্ট করা হয়ে গেছে তাদেরটা আগামী বছর এডজাস্ট করে নিলেই হবে। কাউকে তো আর ফেরত দিতে হচ্ছে না।

‘চলতি বাজেটে কর্পোরেট ট্যাক্সের বিষয়ে সংশোধনী আনার জন্য ২৯ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে’ বলেও জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চান যে, ‘আগের বছরেরটা কিছু করা যায় কি না? ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে কিছুটা সমন্বয় করা যায় কি না?’

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কর কর্মকর্তাদের বক্তব্য জানতে চাইলে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন যেটা হয় সেটা হচ্ছে রিভার্সেস রি-্যীাসেসমেন্ট। ফলে যখন সাবমিট করা হয় তাৎক্ষণিকভাবে সেটা অ্যাসেসমেন্ট হয়ে যায়। ফলে যারা ট্যাক্স দিয়ে দিয়েছেন, তাদের রিফান্ড দেওয়ার একটা বিষয় আসবে এবং একই সঙ্গে এক দেশে দুই ধরনের আইন করতে হবে।

এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী করবর্ষের তো এখনো সময় আছে। সুতরাং রিভাইজ রিটার্ণ নেওয়া যায় কি না?’

এর জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এখানে রিভাইজ রিটার্ণ দেওয়ার নিয়ম যেটা আছে, সেটা হচ্ছে- কেউ কর দেওয়ার পর ভুল করে যদি কোন কিছু বাদ দিয়ে থাকে, তাহলে সেটা দেওয়া যায়। এছাড়া ট্যাক্স হার ৩৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সঙ্গে রাজস্ব সংগ্রহের একটা বিষয় আছে, একটা নীতিগত বিষয় এখানে জড়িত।’

সর্বশেষ এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪-১৫ অর্থবছরের ট্যাক্স রিটার্নের ক্ষেত্রে কিছু করা যাবে না। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য কিছু করতে চাই। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কি না’? এ বিষয়ে কর কর্মকর্তাদের মতামত জানতে চান মুহিত।

অর্থমন্ত্রীর এ প্রশ্নের জবাবে ‘২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য রিভাইজ রিটার্ণ নেওয়া সম্ভব হতে পারে’ বলে জানান এনবিআর-এর ওই কর্মকর্তা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৯ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। এরমধ্যে করপোরেট ট্যাক্স কমাতে আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। প্রথমে সংশোধনীটি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনুমোদন নিতে হবে। তারপর সেটা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। এটা করা সম্ভব, এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই