প্রকল্প গ্রহণ করা হবে কৃষি জমি বাদ রেখে

সব ধরনের অবকাঠামোগত প্রকল্প গ্রহণে কৃষি জমির ব্যবহার না করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এখন থেকে যেকোনো ধরনের আবাসিক, অনাবাসিক ভবন, ভৌত ও নির্মাণধর্মী প্রকল্প গ্রহণে কৃষি জমির ব্যবহার এড়ানো হবে। এক্ষেত্রে হরাইজন্টাল এক্সপানশনের বদলে জোর দেয়া হচ্ছে ভার্টিকাল এক্সপানশনের প্রতি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে কৃষি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এক্ষেত্রে সরকার কৃষি জমি ব্যবহার ব্যতিরেকে প্রকল্প গ্রহণের প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে। কমিশন সূত্র জানায়, পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক প্রণীত প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতিমালায় ভৌত ও নির্মাণধর্মী প্রকল্প গ্রহণে কৃষি জমির ব্যবহার এড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় অনেক আগে থেকেই।

এক্ষেত্রে হরাইজেন্টাল এক্সপানশনের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে ভার্টিকাল এক্সপানশনের কথা বলা হয়। এমনকি আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন নীতিমালাতেও বিষয়টি অনুসরণ করা হবে বলে জানা গেছে।

আগে থেকেই প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি হতে থাকায় প্রথমদিকে অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নির্দেশনা মানতে পারতো না। তবে বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিষয়টি মাথায় রেখে প্রকল্প প্রণয়ন করছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন বিভাগ জানিয়েছে।

গত ২০ অক্টোবর কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের জিরো কস্ট ঋণ গ্রহণের বিষয়ে মতামত নেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের সুপারিশ পর্যালোচনার বিষয়টিও প্রাধান্য পায়। এতে বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি প্রকল্প প্রণয়নে কৃষি জমির রক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সভায় নির্দেশ দেওয়া হয়, ‘বাড়ছে মানুষ, কমছে জমি’ এ কথা মাথায় রেখে হরাইজন্টাল এক্সপানশনের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে ভার্টিকাল এক্সপানশনের জন্য যে সব প্রযুক্তি গ্রহণ করা দরকার, সব সংস্থাকে সে সব প্রযুক্তি অর্ন্তভুক্ত করে কনসেপ্ট পেপার তৈরি করতে হবে।’

এ বিষয়ে কৃষি সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, কৃষি জমির বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত। তাই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব বিভাগকে এ নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, কৃষি জমি রক্ষায় বিভিন্ন আইনও প্রণয়ন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কৃষি জমি সুরক্ষা আইনও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট কারণে দেশে প্রতি বছরই আশঙ্কাজনক হারে কমছে জমির পরিমাণ। একই সঙ্গে কমছে ফসলি জমিও। এই অবস্থায় এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, গত ২৭ বছরের ব্যবধানে আউশ উৎপাদনের জমির পরিমাণ কমেছে ৪৩ লাখ একর, আমনের কমেছে দেড় লাখ একর। একই সঙ্গে হাজার হাজার একর কৃষি জমি অকৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে।

এক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জমির পরিমাণ কমলে তা দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য এবং সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম।

তিনি বলেন, কৃষি দেশের চালিকা শক্তি। গত কয়েক বছর ধরে অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান বাড়ছে, কিন্তু কৃষির অবদান অস্বীকার করা যাবে না।

তিনি বলেন, বরাবরের মতো এবারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও কৃষির প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, জিডিপির প্রায় ২৩ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। তাই কৃষিকে ঘিরেই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই